তবু চোখ থাকবে স্পিনারদের ওপর

ঘরের মাঠে টেস্ট ম্যাচ জেতানোর দায়িত্বটা এখন পর্যন্ত স্পিনারদেরইশামসুল হক

ইদানীং ক্রিকেটারদের গ্রুপ ছবিতে তাকালে চোখ আটকে যায় তাঁদের দিকে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের দীর্ঘদেহী সব পেসারের দিকে। দেশে কিংবা দেশের বাইরে, সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁদের দাপট স্পষ্ট। লাল বলের ক্রিকেটেও পেসারদের নিয়ে দলের আস্থা বাড়ছে। পেসারদের জন্য ঘরের মাঠের উইকেটে রাখা হচ্ছে সবুজ ঘাস। গতির উচ্চাঙ্গসংগীত গাইতে শোনা যায় দলের অধিনায়ক ও কোচদের। এসবই বাংলাদেশ ক্রিকেটে চলমান পেস–বিপ্লবের বহিঃপ্রকাশ।

কিন্তু পেসারদের কাছে দলের প্রত্যাশার সঙ্গে সেই বিপ্লবের মিল নেই। নতুন বলে ইবাদত-শরীফুলদের কাছে চাহিদা থাকে দু-একটি উইকেট এনে দেওয়া পর্যন্তই। এরপর দিনের বাকি সময় স্পিনারদের বিশ্রাম দিতে বোলিংয়ে আনা হয় পেসারদের। তখন রান থামিয়ে রাখতে পারলেই অধিনায়ক খুশি। কদিন আগেই জাতীয় দলের এক পেসারের কথায় যে চিত্রটা ফুটে ওঠে, ‘ঘরের মাঠে আমাদের সাপোর্টিং কাজটা করতে হয়। রান কম দিয়ে যদি দু-একটা উইকেট বের করতে পারি, সেটাই যথেষ্ট।’ সে জন্য ঘরের মাঠে পেসারদের লম্বা স্পেল পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, ‘ধরুন, আপনি একজন ব্যাটসম্যানকে তিন ওভার ধরে বাইরে বল করছেন। এরপর চতুর্থ ওভারে গিয়ে একটা বল ভেতরে আনার পরিকল্পনা ছিল। এমনও হয়েছে যে সেই চতুর্থ ওভার আসার আগেই আমার স্পেল শেষ।’

ইদানীং ক্রিকেটারদের গ্রুপ ছবিতে তাকালে চোখ আটকে যায় তাঁদের দিকে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের দীর্ঘদেহী সব পেসারের দিকে।
প্রথম আলো

ঘরের মাঠে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া স্পেল করবেন পেসাররা, তাঁদের কাছে আসলে এমন প্রত্যাশাই করা হয় না। সে কাজের জন্য আছেন তাইজুল-মিরাজরা। ঘরের মাঠে টেস্ট ম্যাচ জেতানোর দায়িত্বটা এখন পর্যন্ত স্পিনারদেরই। মিরপুর কিংবা চট্টগ্রামের কন্ডিশনে পেসারদের ভূমিকা এখন পর্যন্ত পার্শ্বনায়কের। কাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে মিরপুরের সবুজ উইকেট নিয়ে যে কথাটা বললেন, সেখানেও এই আভাস, ‘গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে ঘাস এমন সবুজ দেখাচ্ছে। আমি এর আগেও এমন সবুজ ঘাস দেখেছি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও ঘাসের উইকেটে খেলেছি। আমাদের পেস বোলার আছে। তাদের জন্য উইকেট তৈরি করতে হবে। আমাদের ভালো স্পিনারও আছে। এই খেলা শুরু হবে সবুজ উইকেটে। কিন্তু এই গরমে খুব দ্রুতই পরিস্থিতি বদলাবে।’

আরও পড়ুন

স্পিনারদের নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, তখন সাকিব আল হাসানের নামটা সবার আগে আসবে। কিন্তু টেস্ট বোলার হিসেবে ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে নেই এই তারকা অলরাউন্ডার। গত তিন বছরে ১০ টেস্টে ১৬ ইনিংসে বল করেছেন, উইকেট নিয়েছেন ২৩টি। এ সময় বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ১২ টেস্টে ২২ ইনিংসে বল করে তাইজুলের শিকার ৬১ উইকেট। তাঁর পরের নামটা মেহেদী হাসান মিরাজের। এ সময় তিনি ১৬টি টেস্ট খেলেছেন। ২৮ ইনিংসে বল করে মিরাজ নিয়েছেন ৫৮ উইকেট। এ সময় গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ইবাদত হোসেনের ৪ উইকেট ছাড়া পেসারদের উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই।

আরও পড়ুন

চোটের কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে নেই সাকিব। তাইজুল-মিরাজ জুটিই বাংলাদেশ দলের বোলিং আক্রমণের মূল শক্তি। সঙ্গে তিন পেসার খেলানোর সম্ভাবনাও আছে। কাল প্রধান কোচের কথায় ছিল সে আভাসও, ‘আমাদের ৭-৮ জন বোলার আছে, যাদের আমরা যেকোনো সময় সুযোগ দিতে পারি। ফাস্ট বোলিং বিভাগ এখন খুবই ভালো করছে। কে জানে, আমরা আগামীকাল হয়তো ৩-৪ জন পেসার নিয়ে দল সাজাতে পারব। ওরা সবাই খেলার জন্য প্রস্তুত আছে।’

যাঁরা খেলবেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কি হতে পারবেন টেস্ট জয়ের নায়ক?