বাংলাদেশের নতুন শুরুর আশা
রুদ্ধশ্বাস সেই ম্যাচটার কথা কি মনে আছে? ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, এশিয়া কাপের ম্যাচ। শেষ ওভারে ১২ রান দরকার ভারতের, শেষ ২ বলে ৮। কিন্তু তানজিম হাসানের পঞ্চম বলে মোহাম্মদ শামির রানআউটে শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস। ৬ রানে জিতে রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে উল্লাসে ভেসেছিল বাংলাদেশ দল।
প্রায় দুই বছর আগের স্মৃতি, ধুলার আস্তরণ পড়াই স্বাভাবিক। তার ওপর ওই ম্যাচের পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ২৬টি ওয়ানডে খেলে ১৯টিতেই হেরেছে, জয় মাত্র ৬টিতে। সর্বশেষ ছয় ম্যাচের টানা হারে তো মনে হচ্ছে দলটা জিততেই ভুলে গেছে! জয়ের কথা মনে করাটাই এখন কঠিন।
তবু ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচ স্মৃতিতে ভাসানোর কারণ, কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত ১৩টি ওয়ানডে খেলে ওটাই বাংলাদেশের একমাত্র জয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ শুরু তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ যেহেতু এ মাঠেই, প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের সর্বশেষ সুখস্মৃতি কিছুটা আত্মবিশ্বাস দিতে পারে বাংলাদেশকে। ভারতের বিপক্ষে ওই জয়টি বাদ দিলে এ মাঠের অতি সাম্প্রতিক অতীত কিন্তু বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ।
প্রেমাদাসায় নিজেদের সর্বশেষ চার ওয়ানডেতেই জিতেছে শ্রীলঙ্কা, প্রতিপক্ষ ছিল ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার মতো দল। গত বছরের আগস্টে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটি হয়েছিল টাই। এ মাঠে পরের দুই ম্যাচই জিতেছে শ্রীলঙ্কা, শেষ ম্যাচে ১১০ রানের বিশাল ব্যবধানে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেমাদাসাতেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-০–তে সিরিজ জেতে শ্রীলঙ্কা। সেই সিরিজেও শেষ জয়টা ছিল অনেক বড়—১৭৪ রানের।
গত প্রায় এক বছরের মধ্যে এই দুই সিরিজ থেকে শ্রীলঙ্কা আত্মবিশ্বাস পাবে স্বাভাবিক। আর বাংলাদেশের জন্য সিরিজ দুটি ভূমিকা রাখছে হোমওয়ার্কে। দল সূত্রের খবর, শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রস্তুতিতে এ মাঠে হওয়া সর্বশেষ চার ওয়ানডের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করার ওপরই জোর দিয়েছে বাংলাদেশ।
দুই সিরিজের চারটি ম্যাচই হয়েছিল ওয়ানডের বর্তমান ধারাবিরুদ্ধ কম রানের। সর্বোচ্চ ইনিংস অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ম্যাচে করা ২৮১ রান। প্রথম ম্যাচে আবার ২১৪ করেও ৪৯ রানে জিতে গিয়েছিল স্বাগতিকেরা। ভারতের বিপক্ষেও তাদের জয় দুটি এসেছিল মাত্র ২৪০ ও ২৪৮ রান করে। এই চার ম্যাচের আরেকটি বিশেষ দিক, প্রতিটি ম্যাচেই প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের নিয়ম মেনে টসে জিতে আগে ব্যাটিং নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, ছিল শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের দাপটও।
পুরোনো ইতিহাস বেশি ঘাঁটাঘাঁটি হয়ে যাচ্ছে। আসলে ক্রিকেট খেলাটাই এমন যে প্রতিটি নতুন ম্যাচ বা সিরিজের আগে বারবার পেছন ফিরে তাকাতে হয়। অনুপ্রেরণার জন্য, সতর্ক হওয়ার জন্যও। তারপর ম্যাচ শুরু হয়ে গেলে সব ভুলে যাওয়া। তখন শুধুই সামনে থাকা নতুন খেলাটা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবারের তিন ওয়ানডের সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে, আপাতত স্মৃতির আয়নায় তাই এই স্টেডিয়ামই থাকছে। যদিও প্রেমাদাসার উইকেট দেখে এবার ভিন্ন কিছুই আশা করছেন দুই দলের দুই অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও চারিত আসালাঙ্কা।
কাল সিরিজ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে দুজনই বলে গেছেন, উইকেট দেখে তাঁদের মনে হয়েছে, এখানে ব্যাটসম্যানরা সুবিধা পাবেন। স্বাগতিক অধিনায়ক আসালাঙ্কার কথা, ‘সাধারণত প্রেমাদাসার উইকেট স্পিন–সহায়ক। তবে আশা করছি, এই ম্যাচটা ভালো উইকেটে হবে, যেটা তেমন স্পিন–সহায়ক নয়। আমার মনে হয়, এটা ব্যাটসম্যানদের জন্যই ভালো হবে।’ একই কথা বলেছেন মিরাজও, ‘উইকেট যেটুকু দেখেছি, আমার মনে হয়েছে, এটা ব্যাটসম্যানদের জন্য ভালো উইকেট।’
যত দূর জানা গেছে, স্পোর্টিং উইকেটের আশা করে একাদশ সাজাতে পারে দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনার আর তিন পেসারে। নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক নিজেই স্পিনার, সঙ্গে দেখা যেতে পারে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে। পেটের সমস্যার কারণে রিশাদ অবশ্য কাল অনুশীলনে আসেননি। যদিও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তাঁর সমস্যা গুরুতর নয়।
পেসারদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান আর তানজিম হাসানের খেলা মোটামুটি নিশ্চিত। তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদের মধ্যে তাসকিনের সম্ভাবনাই বেশি। তবে তাঁর ফিটনেসটা ফিল্ডিংয়ের জন্য কিছুটা দুশ্চিন্তার কারণ মনে করছে টিম ম্যানেজমেন্ট, যদিও সেটা বোলিংয়ে বাধা হবে না বলেই আশা। তা ছাড়া কাঁধের সমস্যায় ভোগা হাসান মাহমুদ খেলার মতো ফিট কি না, সেটা বোঝা যাওয়ার কথা কাল রাতে প্রেমাদাসায় হওয়া অনুশীলন শেষে।
সাদা বলের ক্রিকেটে একসময় বিপ্লব এনেছিল শ্রীলঙ্কা। অথচ তারাই কিনা সর্বশেষ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি! ৫০ ওভারের ক্রিকেটটা একসময় খুব সাহস নিয়ে খেলা শ্রীলঙ্কা নিজেদের এমন পরিণতি মানতে পারেনি। তবে কোচ সনাৎ জয়াসুরিয়ার অধীন শ্রীলঙ্কা আবারও ওয়ানডেতে হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে তারা এখন ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের চতুর্থ দল, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। আসালাঙ্কার দল চাইবে গত ৩০ জুন ৫৬-তে পা দেওয়া কোচকে জন্মবার্ষিকীর উপহার হিসেবেই আরেকটি সাফল্য এনে দিতে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের জন্য সিরিজটা নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে ওয়ানডেতে নবযাত্রার সিরিজ। জ্যেষ্ঠ ক্রিকেটারদের সবাই ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা তারুণ্যনির্ভরতা আছে মিরাজের দলে। তবে নতুন অধিনায়কের বিশ্বাস, সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই তরুণেরাই হয়ে উঠবেন আগামী দিনের সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ।
