ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছেই  

প্রথম টেস্টে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশছবি: শামসুল হক

চট্টগ্রামে দুই দলই টেস্ট খেলতে নেমেছিল বেশ লম্বা বিরতির পর। দুই দলের জন্যই তাই লাল বলের ক্রিকেটে ধাতস্থ হয়ে ওঠার পরীক্ষাটা ছিল। তবে ভারত প্রথম ইনিংসে ৪৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরও ফিরে দারুণভাবে এলেও প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার চাপটা সামাল দিতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ের দুর্দশার আলোচনাও তাই উঠেছে নতুন করে। 

দ্বিতীয় ইনিংসে চোটের কারণে কার্যত তিনজন বোলার নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ, ফিল্ডিংয়ে হারিয়েছে সুযোগ। এরপরও চট্টগ্রাম টেস্টে বড় ব্যবধানে হারের পেছনে বড় একটা দায় ব্যাটিংয়েরই। 

আরও পড়ুন

চট্টগ্রামের উইকেটে অসম বাউন্স ছিল, স্পিনাররাও পেয়েছেন টার্নের দেখা। তবে ব্যাটসম্যানদের জন্য একেবারে বধ্যভূমি ছিল না সেটি। চতুর্থ ইনিংসে অভিষিক্ত জাকির হাসানের সেঞ্চুরিই তার বড় প্রমাণ। মিরপুরের মন্থর উইকেটে আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জটা চট্টগ্রামের চেয়ে বেশিই হওয়ার কথা। 

চট্টগ্রাম টেস্টের আগে ভারত অধিনায়ক লোকেশ রাহুল বলেছিলেন, তাঁরা চান আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তার দরকার পড়েনি। স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলেই বড় জয় পেয়েছে ভারত।

হতাশ করেছেন লিটন
ছবি: শামসুল হক

দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ সময় নিয়েই ইনিংস ঘোষণা করেছেন লোকেশ, একেবারে নিরাপদ অবস্থানে থেকে। তবে মিরপুরে ব্যাপারটা সে রকম না-ও হতে পারে। এমনিতেই বেশ স্পিন-সহায়ক থাকে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট, ম্যাচে ফলও আসে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে এ মাঠে কোনো টেস্ট ড্র হয়েছে, সেটিও বৃষ্টির কারণে। মিরপুরে তাই ব্যাটিংয়ের ভুলের প্রভাব হয়ে উঠতে পারে আরও সর্বনাশা। 

টেস্ট ম্যাচ জিততে গেলে ২০ উইকেট নেওয়ার বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ বোলাররা এ কাজটা নিয়মিতই করেন, কিন্তু ম্যাচ জয়ের জন্য যে পরিমাণে রান বোর্ডে দরকার, থাকে না সেটি। কেন, সেই প্রশ্নে প্রথম ম্যাচের পর প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কথাই বলেছেন। 

আরও পড়ুন

তো সে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিটা আসলে কীভাবে তৈরি হয়? বিকেএসপির ক্রিকেট পরামর্শক নাজমূল আবেদীন বলছেন, দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলার অনভ্যস্ততা এর অন্যতম কারণ, ‘টেস্টের ব্যাটিংটা বেশ জটিল, বোলাররা এখানে নিজেদের দক্ষতা প্রয়োগের পুরো স্বাধীনতা পায়। আমরা এত বিরতি দিয়ে টেস্ট খেলি, এ চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি তাই নিয়মিত হতে পারি না।

অনেক ব্যাটসম্যানই ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলে না, খেললেও সেই চাপ বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় না। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের প্রভাবটা তাই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পড়ে। মানসিক প্রস্তুতিহীনতার প্রভাব থাকে সব সময়। ব্যাটসম্যানের আস্থার সংকট এভাবেই তৈরি হয়।’

চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসের তুলনায় বাংলাদেশ দলের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংটা মোটামুটি ভালোই হয়েছে। মিরপুর টেস্টে উইকেট যদিও প্রতিপক্ষ হতে পারে, তবু ব্যাটসম্যানদের কাছে আরেকটু ভালো কিছুর আশা নাজমূলের, ‘চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ইনিংসে সামর্থ্যের প্রয়োগটা ভালো ছিল। জাকির তো দেখিয়েছে, নিজের স্বকীয়তা, নিজস্বতা ধরে রেখে খেলা সম্ভব। মিরপুরে ফল কী হবে জানি না। তবে শরীরী ভাষা দেখে, খেলার ধরন দেখে যাতে মনে হয়, তাদের নিজেদের ওপর আস্থা আছে। সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিচ্ছে না, শট খেলার পেছনে যৌক্তিক একটা ব্যাপার যাতে থাকে।’