একটা বাজে লোক সব নষ্ট করেছে—কাকে ইঙ্গিত করলেন শহীদ আফ্রিদি
সেই খেলোয়াড়ের নাম উল্লেখ না করলেও তাঁকে বাজে লোক বলে কটাক্ষ করেছেন শহীদ আফ্রিদি।
বার্মিংহামের এজবাস্টনে রোববার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডসে (ডব্লুসিএল) মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল ভারত–পাকিস্তানের। অবসর নেওয়া ক্রিকেটারদের নিয়ে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হলেও যুবরাজ সিং–সুরেশ রায়নাদের সঙ্গে শহীদ আফ্রিদি–শোয়েব মালিকদের ম্যাচ ঘিরে আগ্রহ ছিল দুই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের।
কিন্তু সেই আগ্রহে জল ঢেলে দিয়েছে ভারত চ্যাম্পিয়নস। দলটির পাঁচ ক্রিকেটার—ইউসুফ পাঠান, ইরফান পাঠান, হরভজন সিং, সুরেশ রায়না ও শিখর ধাওয়ান পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে রাজি না হওয়ায় ম্যাচটি বাতিল করতে বাধ্য হন আয়োজকেরা। আফ্রিদি–হাফিজ–আকমলদের সঙ্গে তাঁদের খেলতে আপত্তি জানানোর কারণ দুই দেশের সাম্প্রতিক উত্তেজনা।
ভারতীয়দের এমন সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ শহীদ আফ্রিদি। পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নস দলের এই খেলোয়াড় বিশেষ একজন খেলোয়াড়কে দায়ীও করেছেন। নাম উল্লেখ না করলেও পারিপার্শ্বিক ঘটনায় খেলোয়াড়টি শিখর ধাওয়ান বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সাবেক ভারতীয় ওপেনারকে আফ্রিদি ‘বাজে লোক’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকদের আফ্রিদি বলেছেন, ‘আমরা এখানে (ইংল্যান্ডে) ক্রিকেট খেলতে এসেছি, ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে এসেছি এবং বন্ধুত্বপূর্ণভাবে আড্ডা দিতে এসেছি। কিন্তু কখনো কখনো একটা বাজে লোক অন্য সবার সবকিছু নষ্ট করে দেয়।’
সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিখর ধাওয়ানই প্রথম পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নসের বিপক্ষে মাঠে নামতে আপত্তি জানিয়ে আয়োজকদের চিঠি লেখেন। এরপর একে একে আপত্তি জানান হরভজন সিং, ইউসুফ পাঠান, ইরফান পাঠান ও সুরেশ রায়না।
গত এপ্রিলে পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তান যখন সামরিক সংঘাতে জড়ায়, তখন আফ্রিদির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তর্ক হয়েছিল ধাওয়ানের।
এবার ডব্লুসিএলে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল হওয়ার আগে ধাওয়ান ম্যাচ খেলতে না চাওয়ার বিষয়ে একটি পোস্ট করেন ইনস্টাগ্রামে। সেখানে এ–ও জানান যে গত ১১ মে–তেই তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবেন না বলে মেইল করেছিলেন।
এসব ঘটনার পর শেষমেশ আয়োজক কর্তৃপক্ষ ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য হয়। আফ্রিদির দাবি, পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নসের বিপক্ষে খেলতে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনও করেছে ভারত চ্যাম্পিয়নস। পরে নির্দিষ্ট একজনের (শিখর ধাওয়ান) কারণে সরে দাঁড়িয়েছে, ‘ওরা (ভারত) যদি পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতেই না চায়, তাহলে এখানে আসার আগেই বলে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা এখানে এসেছে, এমনকি অনুশীলনও করেছে। কিন্তু হঠাৎ এক দিনের মধ্যে সবকিছু বদলে গেল।’
৪৫ বছর বয়সী এই তারকা আরও বলেন, ‘খেলাধুলার মাধ্যমে দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই যদি রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সম্পর্কের উন্নতি হবে কী করে? আলোচনা ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান করা যায় না। এ কারণেই এই ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। যোগাযোগের ঘাটতি পরিস্থিতিকে শুধু খারাপের দিকেই নিয়ে যায়। একজন খেলোয়াড়ের তার দেশের জন্য ভালো দূত হওয়া উচিত, লজ্জার কারণ নয়।’
ম্যাচ বাতিল হওয়ার খবরে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ওপর চটেছেন আবদুর রউফ খানও। পাকিস্তানের সাবেক এই পেসার বলেছেন, ‘ওরা (ভারতীয়রা) জনগণকে দেখাতে চায়, তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলে না। কিন্তু পর্দার আড়ালে ওরা পাকিস্তানিদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করে, কেনাকাটা করে। এটা মোটেও ভালো ব্যাপার নয়।’
১৮ জুলাই শুরু হওয়া ডব্লুসিএলে ভারত, পাকিস্তান ছাড়াও অংশ নিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড। শীর্ষ চার দল সেমিফাইনালে উঠবে। দুই সেমিফাইনালের জয়ী দল আগামী ২ আগস্ট ফাইনালে মুখোমুখি হবে। ভারত–পাকিস্তানের আবারও মুখোমুখি হওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে।
সেমিফাইনাল বা ফাইনালে যদি দুই দল মুখোমুখি হয়, তাহলে কি খেলবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নসের মালিক কামিল খান জিও নিউজকে বলেছেন, ‘বাকি সব ম্যাচ সূচি অনুযায়ী চলবে। এতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সেমিফাইনালের কথা যদি বলেন, আমরা যদি সেখানে পৌঁছাই, তাহলে (ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ) এড়িয়ে যাব। যদি ফাইনালে পৌঁছাই, তাহলে সিদ্ধান্ত তখনই নেওয়া হবে।’
ভারত চ্যাম্পিয়নস ম্যাচ বর্জন করায় পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নসকে ২ পয়েন্ট দেওয়া হবে বলেও দাবি করেছেন কামিল খান, ‘এই ম্যাচের (বাতিল হওয়া ম্যাচ) কথা বলতে গেলে, ২ পয়েন্ট আমাদের দেওয়া হবে। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এই পয়েন্টগুলো আমাদের প্রাপ্য।’