মিরপুরেও যে কারণে ইংলিশ পেসারদের নিয়ে ভয়

ইংল্যান্ডের দুই তারকা পেসার জফরা আর্চার ও মার্ক উড। বাংলাদেশের কন্ডিশনেও তাঁরা বিপজ্জনকছবি: প্রথম আলো

মার্ক উড বা সাকিব মেহমুদ তখনো বের হননি।

মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের মূল মাঠের এক পাশের এক উইকেটে বোলিং করে চলেছেন চার ইংলিশ পেসার—জফরা আর্চার, ক্রিস ওকস, স্যাম কারেন ও রিস টপলি। পিচের গুড লেংথের জায়গাটা মার্ক করা, স্টাম্পের ওপরে বেলসের বদলে স্পঞ্জের মতো কিছু একটা রাখা, যেটি তাক করে বোলিং করছিলেন তাঁরা।

‘টপ অব অফ’ লক্ষ্যভেদ করতে সফলও হচ্ছিলেন। আর্চারের গুড লেংথে পড়া কোনো কোনো বল যেভাবে লাফিয়ে উঠছিল, তা ছিল দেখার মতো। উইকেট যেমনই হোক, দিন শেষে গতি তো গতিই!

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

মিরপুরের উইকেটে মন্থর গতি, টার্ন মিলিয়ে বরাবরই স্পিন থাকে আলোচনায়। এ সিরিজের আগেও আছে। স্পিন বিভাগেও ইংল্যান্ড দলে আছে বৈচিত্র্য। অফ স্পিনার মঈন আলীর সঙ্গে আছেন এ মুহূর্তে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। তরুণ লেগ স্পিনার রেহান আহমেদও হতে পারেন ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’। হাত ঘোরাতে পারেন অফ স্পিনার উইল জ্যাকসও।

তবে এমন কন্ডিশনেও ইংলিশ পেসাররা যে বড় একটা হুমকি তৈরি করবেন, সেটি বলাই যায়। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডেতে সে অর্থে পূর্ণ শক্তির পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে খেলতে পারেনি ইংল্যান্ড। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে সেটি পাচ্ছে তারা।

চোট কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে ফিরেই ভালো করেছেন আর্চার। এখন সামনে বাংলাদেশ
ছবি: এএফপি

বেশ লম্বা চোট কাটিয়ে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ফিরেছেন জফরা আর্চার, শেষ ওয়ানডেতে ৬ উইকেট নিয়ে বার্তাও দিয়েছেন—তিনি ফিরে এসেছেন ভালোভাবেই। তবে আর্চারের ফেরার সিরিজে ছিলেন না মার্ক উড। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম দ্রুতগতির বোলার ছিলেন তিনি। এবার ফিরেছেন উডও।

তাঁর সঙ্গে ইংল্যান্ড বিকল্প হিসেবে পাচ্ছে সাকিব মেহমুদকে, যিনিও বেশ লম্বা সময় ছিলেন মাঠের বাইরে। সম্প্রতি ইংল্যান্ড লায়নসের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে খেলেছেন তিনি, এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার অপেক্ষায়।

আরও পড়ুন

আর্চার, উড বা সাকিব—তিনজনেরই অন্যতম অস্ত্র গতি। দিন শেষে উইকেট যেমনই হোক, গতি পার্থক্য গড়ে দিতেই পারে। আজ সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার মঈন আলীও যেমন বললেন, গতি থাকলে উইকেটের ধরনে কিছু যায় আসে না, ‘আমাদের অবশ্যই কয়েকজন স্পিনার আছে। কিন্তু পেসাররা—শুধু বাংলাদেশ বলে নয়, বিশ্বের যেকোনো জায়গাতেই আমরা তাদের নিয়ে যাব। কারণ, তারা গতিময় বোলিং করতে পারে। আর যেকোনো উইকেটেই ফাস্ট বোলিং নিয়ে বিলাসিতা দেখাতে পারবেন আপনি।’

ইংল্যান্ড দলে থাকা বাকি যে তিনজন পেসার, তাঁরা ঠিক ওপরের তিনজনের মতো গতিময় না হলেও হুমকি তৈরি করতে সক্ষম। বাঁহাতি দীর্ঘদেহী রিস টপলি সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ড আক্রমণের নিয়মিত মুখ। ২০২২ সালের শুরু থেকে ইংল্যান্ড পেসারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট তাঁরই। দীর্ঘদেহী বলে তাঁর বাউন্স নিয়মিত অসুবিধায় ফেলতে পারে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের, সঙ্গে আছে তাঁর ইয়র্কারও।

ফিল সল্টের সঙ্গে ইংল্যান্ডের অনুশীলনে মার্ক উড। গতির ঝড় তুলতে পারেন তিনিও
ছবি: প্রথম আলো

আরেক বাঁহাতি কারেন তো সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়, সে সংস্করণে ডেথ বোলিংয়ে তাঁর স্কিলের উন্নতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। এ সিরিজেও ডেথ ওভারে জস বাটলারের অন্যতম ভরসার নাম হতে পারেন কারেন। মিরপুরের উইকেট যদি মন্থর গতিরও হয়, কারেনের কাটার ঝামেলায় ফেলতে পারে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের।

তাঁদের সঙ্গে আছেন আরেক অভিজ্ঞ ক্রিস ওকস। এমনিতে ইংল্যান্ডের সিমিং কন্ডিশনে তাঁর বোলিং বেশি উপযুক্ত মনে হলেও স্কেলমাপা বোলিং ওকস-হুমকি এড়িয়ে যেতে দেবে না। সব মিলিয়ে ছয়জনের এমন পেস আক্রমণ মানে তিন ম্যাচের সিরিজে ইংল্যান্ড ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলাতে পারে সবাইকেই। এ বছর ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ বলে উপযুক্ত একটা পেস কম্বিনেশনও নিশ্চয়ই খুঁজে পেতে চাইবে তারা।

আরও পড়ুন

মিরপুরের উইকেটে শুধুই গতি নয়, আরেকটি হুমকিও তৈরি করতে পারেন ইংলিশ পেসাররা, মঈন মনে কড়িয়ে দিয়েছেন সেটিও, ‘মাঝে মাঝে সমান গতির উইকেটের চেয়ে টু-পেসড (বা অসম গতির) উইকেটে ফাস্ট বোলিং খেলা বেশি কঠিন। তারা শুধু ফাস্ট নয়, তারা খুবই ভালো ও ফাস্ট। এটিই বড় পার্থক্য গড়ে দেয়।’

২০১৯ সালের পর বাংলাদেশের মাটিতে বিদেশি পেসাররা বাংলাদেশের বিপক্ষে নিয়েছেন ৫৬ উইকেট, যেখানে বিদেশি স্পিনাররা নিয়েছেন ৩৯টি। স্বাভাবিকভাবেই উপমহাদেশের বাইরের দলগুলো তেমন স্পিননির্ভর নয় বলে এমন পরিসংখ্যান খুব একটা অবাক করার মতো হওয়ার কথা নয়ও।

স্যাম কারেনও বাংলাদেশের বিপক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন
ছবি: প্রথম আলো

তবে ইংল্যান্ডের এ দলের বোলিং আক্রমণে স্পিনাররা যেমন হুমকি তৈরি করবেন, পেসারদের তৈরি করা হুমকিও তো বড় চ্যালেঞ্জই হবে বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের প্রধান কোচ হাথুরুসিংহেও নিশ্চয়ই সেটি জেনেশুনেই আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন কথাটি, ‘বিশ্বেরই অন্যতম সেরা পেস বোলিং আক্রমণ তাদের। এ সফরে পাঁচজন ফাস্ট বোলার (আদতে ছয়) ও তিনজন স্পিনার আছে। তাদের ফাস্ট বোলারদের খেলাই এ সিরিজে বড় চ্যালেঞ্জ হবে।’

সে চ্যালেঞ্জ কতটা সামলাতে পারবেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা, হয়তো সেটির ওপর অনেকখানিই নির্ভর করছে সিরিজের ভাগ্যও।