দুঃস্মৃতি ভুলে ভালো শুরুর আশা বাংলাদেশের

হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে আবুধাবিতে অনুশীলনে বাংলাদেশ দলবিসিবি

স্বপ্ন, সম্ভাবনা আর হতাশা—এশিয়া কাপের বাংলাদেশকে বোঝাতে এই তিনটা শব্দই যথেষ্ট। কখনো কান্নাভেজা চোখে শিরোপার দুয়ার থেকে ফিরে আসা, কখনো হতাশায় ডুবে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়। শিরোপার খুব কাছে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে তিনবার। হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আজ আরও একবার আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে এই মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরে নামছে বাংলাদেশ দল।

টি–টোয়েন্টিতে ছোট দল, বড় দলের ব্যবধান অনেকটাই কমে আসে। তারপরও কাগজে–কলমে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দুর্বল দলের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে জয় ছাপিয়ে জয়ের ব্যবধানেই বেশি দৃষ্টি থাকার কথা বাংলাদেশের। পরশু রাতে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে গ্রুপের আরেক দল আফগানিস্তান ১৮৮ রান করে তার অর্ধেক রানেই থামিয়ে দেয় হংকংকে। হংকংয়ের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয়ের তাড়না এরপর আরও বেড়েই যাওয়ার কথা বাংলাদেশের।

আরও পড়ুন

টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ আছে গ্রুপ–‘বি’তে, যেটিকে ‘গ্রুপ অব ডেথ’ও বলা যায়। গ্রুপের চার দলের সেরা দুই দল যাবে সুপার ফোরে। কিন্তু এই চার দলের তিনটি যখন বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান; সেরা চারের লড়াই জমে ওঠারই কথা। সে ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত নেট রান রেটও হয়ে উঠতে পারে বড় ব্যাপার। হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়টাই হবে স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু টি–টোয়েন্টিতে এই দলটার বিপক্ষে বাংলাদেশের ছোট্ট অতীতটা যে বড় দুঃসহ!

আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে দুই দলের সাক্ষাৎ হয়েছে একবারই, চট্টগ্রামে ২০১৪ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেই ম্যাচে ২ উইকেটে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। হংকংয়ের হয়ে সেই ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়া নিজাহাত খান এবারও আছেন দলে। তবে তিনি যতই বলুন, হংকং নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে এখনো বাংলাদেশকে হারিয়ে দিতে পারে; কিন্তু বাস্তবতা তো এটাই যে অঘটন কালেভদ্রে ঘটে বলেই সেটা অঘটন। বারবার ঘটলে তা আর অঘটন থাকে না।

আবুধাবিতে নেটে অনুশীলন করছেন লিটন
বিসিবি

তবে শেষ পর্যন্ত যদি আজ আরেকটি অঘটন ঘটেই যায়, সেটি এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে প্রায় ধুলায় মিশিয়ে দেবে। কারণ, টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ কতটুকু এগোতে পারবে, তা ঠিক হবে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচে। তার আগেই হংকংয়ের বিপক্ষে হেরে গেলে সেই ধাক্কা সুপার ফোরের লড়াই থেকে ছিটকেও দিতে পারে বাংলাদেশকে।

আরও পড়ুন

হংকংয়ের জন্য অবশ্য ব্যাপারটা ভিন্ন। বাছাইপর্বের সেমিফাইনালে ওমানের কাছে হারের পর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নেপালকে হারিয়ে এশিয়া কাপে জায়গা করে নেয় তারা। কিন্তু টি–টোয়েন্টি সংস্করণে আগের দুই এশিয়া কাপে ৬ ম্যাচ খেলেও জয়শূন্য দলটা। টুর্নামেন্টে একটা জয়ই তাই পরম পাওয়া হবে তাদের জন্য।

অবশ্য বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এ নিয়ে খুব একটা উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখাচ্ছেন না হংকংয়ের কোচ কুশল সিলভা। এসিসির পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ভালো দল। আমাদেরও ভালো মানের ক্রিকেট খেলতে হবে তাঁদের বিপক্ষে। আমাদের হাতে যেটুকু আছে, আপাতত মনোযোগটা সেদিকেই রাখছি।’

অনুশীলনের এক ফাঁকে শরীফুলের সঙ্গে মোস্তাফিজ
বিসিবি

বাংলাদেশ এই ম্যাচে কী চাইবে, সে ধারণা তো আগেই দেওয়া হয়েছে। বড় জয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করার সুযোগটা নিশ্চয়ই হারাতে চাইবে না তারা। পরশু অধিনায়ক লিটন দাস তো এমনও আভাস দিয়েছেন, কখনো এশিয়া কাপ জিততে না পারার ‘ইতিহাস’ এবার বদলাতে চান তাঁরা।

সে জন্য প্রাথমিক শর্ত—শেষ চারে যাওয়া। শ্রীলঙ্কা বা আফগানিস্তান, গ্রুপ পর্বে কোনো এক দলের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেলেই হয়তো সেটা সম্ভব। তবে সুপার ফোরে গেলে মুখোমুখি হতে হবে ভারত, পাকিস্তানের মতো প্রতিপক্ষের। এই দুই ধাপ পেরোলে তবেই যাওয়া যাবে ফাইনালের মঞ্চে—এরপরই না শিরোপা জয়ের স্বপ্ন!

মরুভূমির উত্তপ্ত বালুতে দৌড়ে বেড়ানোর মতোই কঠিন ওই চ্যালেঞ্জের শুরুটা আজ বাংলাদেশ করছে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। তবু সাবধানতা জরুরি—পচা শামুকেই না আবার পা কেটে যায়! বড় কিছু করার স্বপ্ন বুকে নিয়ে আমিরাত এশিয়া কাপে খেলতে এসেছে বাংলাদেশ। পুরোনো হতাশা ভোলার সে পথে আজ বড় এক পদক্ষেপই ফেলতে চাইবে বাংলাদেশ।