এনামুল কেন নেই, নাঈম কেন আছেন—কী ব্যাখ্যা নির্বাচকদের
এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রীতিমতো রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন এনামুল হক। ১৪ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরিতে করেছিলেন ৮৭৪ রান। এপ্রিলে ওই টুর্নামেন্টের মাঝপথেই এনামুলকে ডাকা হয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট দলে। তবে প্রায় তিন বছর পর দলে ফেরার তিন মাস না যেতেই এখন তাঁর সুযোগ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সেটা এতটাই যে এনামুল প্রিমিয়ার লিগে যে সংস্করণে খেলেছেন, সেই ৫০ ওভার ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরবর্তী সিরিজে তাঁকে দলেই রাখা হয়নি। শ্রীলঙ্কা সফররত বাংলাদেশ দল জুলাইয়ে স্বাগতিকদের সঙ্গে তিনটি ওয়ানডে খেলবে। আজ সেই সিরিজের জন্য ১৬ সদস্যের যে দলটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে এনামুলের নাম নেই। এমনকি ওয়ানডে দলে তাঁর না থাকা নিয়ে তেমন আলোচনাও নেই।
এনামুলের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার পেছনে শুধু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগই নয়, নির্বাচকদের বিবেচনায় ছিল সর্বশেষ প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্টের সাফল্যও। গত নভেম্বরে শেষ হওয়া জাতীয় লিগে ৭ ম্যাচে ৭০০ রান করেছিলেন এই ডানহাতি। কিন্তু ঘরোয়া প্রথম শ্রেণি ও ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেটের এই সাফল্য এনামুল জাতীয় দলে ধরে রাখতে পারেননি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ৩৯ রান করেছিলেন। তবে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসেই আউট হয়েছেন এক অঙ্কে। একবার শূন্য, আরেকবার ৪ রানে। ব্যাটিং–বান্ধব উইকেটে যতক্ষণ ব্যাটিংয়ে ছিলেন, বেশ অস্বস্তিতেই কেটেছে তাঁর সময়। আউটও হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করলেও জাতীয় দলে এনামুলের এই ব্যর্থতার প্রসঙ্গ উঠেছিল আজ নির্বাচকদের দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে। এ বিষয়ে নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা তো হতাশাজনকই। আমরা যাঁকেই নিই, অনেস্টলি নেওয়া হয়। দলের সুবিধা হবে, সেটা চিন্তা করে নেওয়া হয়। এটাও খুবই স্বাভাবিক নিয়ম যে সবাই সব জায়গায় ভালো খেলবে না। হয়তো বিজয়ের (এনামুল) ও রকম একটা মিস হয়েছে আর কী।’
তবে এনামুলের ব্যর্থতায় ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন রাজ্জাক, ‘এর (এনামুলের ব্যর্থতার) মানে এটা হতে পারে না যে যাঁরা ঘরোয়াতে পারফর্ম করছেন, তাঁদের আমরা দেখতে পারব না বা নিতে পারব না। (এমন নয়) যে বিজয় মিস করেছে তাহলে হয়তো আর কেউ করবে না। তাহলে আমরা কী দেখে নেব আসলে, কিসের ভিত্তিতে দল গঠন করা হবে? আমরা আমাদের ধারা (ঘরোয়ার পারফরম্যান্স মূল্যায়ন) অব্যাহত রাখব।’
এনামুল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন ২০১৩ সালে। এক যুগের লম্বা ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৭ টেস্টের ১৩ ইনিংসে রান মাত্র ১৪৩। এবারও ব্যর্থ হলে ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল নির্বাচকদের কাছে।
উত্তরে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বলেন, ‘বিজয় যদি ব্যর্থ হন, তাহলেও তাঁকে সিস্টেমে রাখব, জাকির (হাসান), (মাহমুদুল হাসান) জয় সবাই সিস্টেমের মধ্যে থাকবে। ব্যর্থ হওয়া ক্রিকেটেরই অংশ। কিন্তু সেখান থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করা যে কীভাবে তাঁরা সফল হতে পারেন, এখানে খেলোয়াড়দেরও নিবেদন থাকতে হবে। তিনি (খেলোয়াড়) হচ্ছেন মুখ্য মানুষ, যে তাঁর ভুলত্রুটিগুলো শুধরাতে পারেন। অভিজ্ঞতাকে কেনা যায় না। যাঁরা অভিজ্ঞ হয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, তাঁদের একদম দৃশ্যপট থেকে বাদ দেওয়ার মধ্যে আমরা নেই।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দলে সুযোগ পেয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম। দুই বছর পর এই সংস্করণের ক্রিকেটে ফিরেছেন এই ওপেনার। সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ১১ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরিতে ৬১৮ রান করেছেন নাঈম, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। বাঁহাতি এ ওপেনারকে মূলত একাদশে পারভেজ হোসেন ও তানজিদ হাসানের বিকল্প ভাবনায় নেওয়া হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরনও নির্বাচকদের চোখে পড়েছে বলে জানান গাজী আশরাফ হোসেন, ‘দলের মধ্যে যেটা চাচ্ছি, ভালো স্ট্রাইক রেটের জন্য ভালো ইনটেনসিটিতে ব্যাটিং করা। সেখানে একে-অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছেন তানজিদ ও পারভেজ। নাঈম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো হয়তো খেলতে পারেননি। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁকে জানানো হয়েছিল (ভালো স্ট্রাইক রেটের কথা)। সেই আলোকে তিনি যথেষ্ট অনুশীলন করেছেন, প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি তিনি খুব ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করছেন।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩ ওয়ানডের সিরিজ শুরু হবে ২ জুলাই।