ফাইনালে ভারতকে আটকানোর পাকিস্তানি ফর্মুলা কি এটাই
বাংলাদেশকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে এই জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল দুই পেসারের—শাহিন শাহ আফ্রিদি এবং হারিস রউফ। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই দুজন নিজেদের কাজটা দারুণভাবে করতে পেরেছেন। এখন প্রশ্ন হলো, ফাইনালে কঠিন প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষেও কি তাঁরা পারবেন?
আফ্রিদি: পাওয়ারপ্লের রাজা
শাহিন শাহ আফ্রিদিকে বলা হয় পাওয়ারপ্লে বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে তিনি পাওয়ারপ্লেতে মাত্র ১১ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। আউট করেন পারভেজ হোসেন ও তাওহিদ হৃদয়কে। নতুন বলে ব্যাটসম্যানদের কাবু করার অভ্যাস তাঁর পুরোনো। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম ছয় ওভারে তাঁর উইকেটসংখ্যা এখন ৫১টি। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বোলারদের মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট আছে শুধু টিম সাউদির—৬৫টি।
তবে শুধু বোলিং নয়, আফ্রিদির ব্যাটিংও বাংলাদেশ ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে যখন পাকিস্তান ধুঁকছিল, তখন ১৯ রানের এক ক্যামিও খেলে দলকে পথে ফেরান আফ্রিদি। এই পারফরম্যান্সের জন্য তিনি ম্যাচসেরাও হন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এ নিয়ে তিনি দশবার ম্যাচসেরা হয়েছেন, যা পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জসপ্রীত বুমরা হয়েছেন ৬ বার।
রউফ: গতিই যাঁর ভরসা
প্রায়ই শোনা যায় যে পাওয়ারপ্লেতে হারিস রউফ অকার্যকর। ওয়ানডে পরিসংখ্যান কিছুটা সেটাকেই সমর্থন করে। ওয়ানডেতে পাওয়ারপ্লেতে তাঁর গড় ৩৫। এমনকি সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ১৪ ওভারে নিয়েছিলেন মাত্র ১টি উইকেট।
তবে টি-টোয়েন্টির ছবিটা একদমই অন্য রকম। অভিষেক থেকে এখন পর্যন্ত ৯১ ইনিংসে বোলিং করা রউফ ৮১টি ম্যাচেই পাওয়ারপ্লেতে কমপক্ষে ১ ওভার বোলিং করেছেন। এর মধ্যে ২৮টি ম্যাচে করেছেন ২ ওভার।
এই পাওয়ারপ্লেতে তিনি প্রতি ১৫ বলে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন। পাকিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে ৫০ উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সেরা। তালিকার এক নম্বরে উমর গুল, যিনি প্রতি ১৪ বলে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে রউফ পাওয়ারপ্লেতে ২ ওভার বোলিং করেন। সাইফ হাসানের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি নিতে তিনি খরচ করেন ১৭ রান। কিছুটা খরুচে হলেও বাংলাদেশের মূল ব্যাটসম্যানকেই কিন্তু ফিরিয়েছেন সেদিন।
রউফের ৯০ মাইল গতি কখনো খরুচে হলেও, উইকেট এনে দেন নিয়মিতই। টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ ২০২২-এর ফাইনাল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল কিংবা মেলবোর্নে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ—প্রতি ম্যাচেই পাওয়ারপ্লেতে উইকেট নিয়েছেন রউফ। সব মিলিয়ে পাওয়ারপ্লেতে তাঁর উইকেট ৩৪টি, যা আফ্রিদির পরই সর্বোচ্চ। ফাইনালে ভারত ম্যাচেও কি তিনি সফল হবেন?
স্পিনার-বান্ধব মাঠে ভরসা সেই পেসাররাই
এই প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান-ভারত। ৪১ বছরের ইতিহাসে আগের ১৭টি আসরে যা হয়নি। ম্যাচ হবে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে, যে মাঠকে সাধারণত স্পিনার-বান্ধব মনে করা হয়। তবু এবারের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের পেসাররাই বেশি ব্রেকথ্রু বা সাফল্য এনে দিচ্ছেন।
টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানি পেসাররা নিয়েছেন ২৩ উইকেট, গড় মাত্র ১৫.৯১। অন্যদিকে স্পিনাররা নিয়েছেন ১৮ উইকেট, গড় ১৯.৮৩। কিপটেমির দিক থেকে স্পিনাররা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও এটা হয়েছে মাঝের ওভারে বোলিং করার কারণে।
সুপার ফোরে ওঠা দলগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের পেস আক্রমণই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল। সর্বোচ্চ উইকেট, সবচেয়ে ভালো গড় এবং সবচেয়ে কম ইকোনমিও পাকিস্তানের পেসারদের। ফলে ফাইনালে স্পিন-বান্ধব কন্ডিশনেও মূল ভরসা হয়ে উঠতে পারে ফাস্ট বোলাররাই। বিশেষ করে আফ্রিদি ও রউফ। এই দুই পেসার কি পারবেন তাঁদের গতি ও সুইং দিয়ে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপকে গুঁড়িয়ে দিতে?