পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৩৫/৮। বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৪/৯। ফল: পাকিস্তান ১১ রানে জয়ী।
মিরপুর নাকি দুবাই—বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছিল চিৎকারের শব্দে। বাংলাদেশের দর্শকদের উচ্ছ্বাসে বারবার কেঁপে উঠছিল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। লাল-সবুজ জার্সির ঢেউ যেন ভেসে বেড়াচ্ছিল গ্যালারিতে। কিন্তু কে জানত, সেই উচ্ছ্বাসের ভেতরেই লুকিয়ে আছে বিষাদের অপেক্ষা। কিছুক্ষণ পরই নেমে আসবে নিস্তব্ধতা, মাঠ ছাড়তে হবে পাকিস্তানের কাছে ১১ রানের হতাশায় ডুবে।
কল্পনায় তো আসলে ছিল না অনেক কিছুই। কিন্তু সবকিছুরই সাক্ষী হতে হয়েছে বাংলাদেশের সমর্থকদের। ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা পাকিস্তানের ১৩৫ রান করে ফেলা যেমন দেখতে হয়েছে। ভাবনায় না থাকা এই রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের পরিকল্পনাহীন ব্যাটিংও।
কিন্তু সবই বাস্তবতা হয়ে এসেছে সময়ের ব্যবধানে। আনন্দ–বেদনার গল্পে স্থায়ী হয়েছে হারের গল্প। খুব কাছে মনে হওয়া এশিয়া কাপের চতুর্থ ফাইনাল বাংলাদেশের জন্য দূরে সরে গেল পাকিস্তানের কাছে ১১ রানের হারে। অথচ ম্যাচটা বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় মনে হচ্ছিল শুরু থেকেই।
পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে মাত্র ২৭ রান তুলতে পেরেছিল পাকিস্তান, হারিয়েছিল ২ উইকেট। তখন মনে হচ্ছিল, ১০০ রানের আগেই অলআউট হয়ে যাবে তারা। কিন্তু ক্যাচ মিসের মহড়া সেই সম্ভাবনা শেষ করে দিল। এরপর যা হলো, তা ছাপিয়ে গেল সবকিছুকে—বাংলাদেশের ব্যাটিং।
রান না হয় না–ই এল—কিন্তু ব্যাটিংয়ের ধরন আর খেলার পরিস্থিতি বিবেচনা করতে না পারার নির্মম বাস্তবতা এত নগ্নভাবে সামনে এল যে তা আসলে প্রশ্নচিহ্ন দিয়ে দেয় সামর্থ্যের সামনেই। শুরুটা হলো পারভেজ হোসেনকে দিয়েই। ইনিংসে যদিও দুটি বলই তিনি খেলেছেন। শাহিন শাহ আফ্রিদির প্রথম বলটি প্রায় চোখেই দেখেননি, দ্বিতীয়টিতে ক্যাচ তুলে আউট হয়ে গেছেন শূন্য রানে।
তাঁর ইনিংসের দুই বলের বর্ণনা জরুরি আসলে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পরের সময়টুকু বুঝতে। সংখ্যাগুলো বললেও হয়তো যথেষ্ট হতে পারে তা—তাওহিদ হৃদয় ১০ বলে ৫, মেহেদী হাসান ১০ বলে ১১ আর নুরুল হাসান ২১ বলে ১৬ রান। এই হলো বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের অবস্থা। তাঁদের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, রান রেটের অঙ্ক মেলানোর তাড়া আছে। অথচ ম্যাচটা বাংলাদেশের শেষ বলে জিতলেও হতো!
আসলে শুধু মিডল অর্ডারের তিনজনের দোষ দিয়ে আর লাভ কী, পরের ব্যাটসম্যানরাও তো ব্যর্থ। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জাকের আলী এক দিন আগেও সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন, ফিনিশিংয়ে দলকে সাহায্য করার পথ খুঁজছেন তাঁরাও।
কিন্তু তাঁর ব্যাটিংয়ে সেটির ছাপ ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না কাল। যে পাওয়ার হিটিং সামর্থ্যের জন্য তাঁর এত নামডাক। এমনকি এই এশিয়া কাপের আগেই নিয়ে আসা পাওয়ার হিটিংয়ের বিশেষজ্ঞ কোচ জুলিয়ান উড তাঁকে ‘সেরা’ হিটার তকমাও দিয়ে গেছেন—সেই জাকের পুরো টুর্নামেন্টের ছয় ম্যাচে একটি ছক্কাও মারতে পারেননি!
তা ছক্কা না হোক, অন্তত পরিস্থিতি বুঝে খেলার চেষ্টা তো করা যেত। কিন্তু কাল তাঁর ব্যাটিং দেখে মনে হলো, দলের লক্ষ্য কত রান—সেটাই যেন ভুলে গিয়েছিলেন। ৯ বলে ৫ রান করে সাইম আইয়ুবের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে যে শট খেললেন, তাতে আউট হয়ে গেলেন। ৫ উইকেটে ৬৩ রানে ধুঁকতে থাকা দলের অধিনায়ক কীভাবে এমন শট খেলতে পারেন—জাকের হয়তো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই এই প্রশ্ন করবেন।
শেষ ভরসা ছিলেন শামীম হোসেন। তিনিও ২৫ বলে ৩০ রান করে ফিরলেন। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই বাকি ছিল। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার খেলে করল ৯ উইকেটে ১২৪ রান।
অথচ বোলিংয়ে দুর্দান্ত শুরুটা আশাই জাগিয়েছিল। পাকিস্তানের ইনিংসে ৫৫ বল ডট দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। তারপরও যে ওদের রান ৮ উইকেটে ১৩৫ পর্যন্ত গেল, সেটির দায় তো আসলে ফিল্ডারদেরই। তাসকিনের ৩ আর মেহেদী–রিশাদের ২টি করে উইকেট ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ল মূল্যহীন।
তাতে অবশ্য এশিয়া কাপ নতুন একটা ঘটনারই সাক্ষী হতে যাচ্ছে—রোববার এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো হবে ভারত–পাকিস্তান ফাইনাল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুটি দল এর আগে কখনোই ফাইনালে মুখোমুখি হয়নি!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (হারিস ৩১, নেওয়াজ ২৫, আফ্রিদি ১৯, সালমান ১৯, ফাহিম ১৪*, ফখর ১৩; তাসকিন ৩/২৮, রিশাদ ২/১৮, মেহেদী ২/২৮, মোস্তাফিজ ১/৩৩)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (শামীম ৩০, সাইফ ১৮, নুরুল ১৬, রিশাদ ১৬*, মেহেদী ১১, তানজিম ১০; আফ্রিদি ৩/১৭, রউফ ৩/৩৩, সাইম ২/১৬, নেওয়াজ ১/১৪।
ফল: পাকিস্তান ১১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শাহিন শাহ আফ্রিদি।