হাতে থাকা দুই ম্যাচে কি অঙ্ক মেলাতে পারবে বাংলাদেশ

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মাঠ ছেড়েছেন মাথা নিচু করেবিসিবি

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাকি আর দুই মাস। সেদিক থেকে বাংলাদেশের হাতে আরও দুই মাস সময় আছে। কিন্তু দুই মাসে এ সংস্করণে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলবে মাত্র দুটি। হাতে মাত্র দুটি ম্যাচ থাকলেও বিশ্বকাপের আগে অনেক অঙ্কই এখনো মেলানো বাকি বাংলাদেশের। সময় যত গড়াচ্ছে, মেলানো বাকি থাকা অঙ্কগুলো যেন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। যোগ হচ্ছে নতুন নতুন দুশ্চিন্তা। ব্যাটিং বা বোলিং নিয়ে আগের উদ্বেগ টানা ম্যাচ হারে কপালের ভাঁজ আরও বাড়াচ্ছে।
টি–টোয়েন্টিতে টানা চার সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতিতে হতাশার কালো যোগ হওয়ার শুরু গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ধবলধোলাই থেকে। সেই ধাক্কা আরও জোরে লেগেছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ হেরে। সবগুলো ম্যাচই হয়েছে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের ব্যাটিং–সহায়ক উইকেটে।

এই সিরিজগুলোতে তো আমরা বিশ্বকাপের প্রস্তুতিই নিচ্ছি। বিশ্বকাপে উইকেট ভালো থাকবে। সেখানে আমাদের ১৬০, ১৭০ বা ১৮০ রান তাড়া করতে হবে। তাই এটা ভালো লক্ষণ নয়।’
হাবিবুল বাশার, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক

বিশ্বকাপের আগে নিজেদের চ্যালেঞ্জে ফেলতে এমন উইকেটকেই বেছে নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ দলের জন্য শুধু কঠিনই হয়নি, প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসিয়ে দিচ্ছে অনেক কিছুর ওপর। আইরিশদের বিপক্ষে গত পরশু বাংলাদেশ ১৮২ রান তাড়া করতে নেমে হেরেছে ৩৯ রানের ব্যবধানে। এই হারের পর রান তাড়ায় দলের বেহালও সামনে এসেছে নতুন করে। সর্বশেষ দুই বছরে বাংলাদেশ দেড় শর বেশি রান তাড়া করতে নেমেছে সব মিলিয়ে ১৫ বার, যার মধ্যে ১২টিতেই হেরেছে।

হাবিবুল বাশার, জাতীয় দলের সাবেক নির্বাচক ও অধিনায়ক
প্রথম আলো

টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন রানের ফোয়ারা ছুটতে দেখা যায় নিয়মিতই। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ চার ম্যাচের তিনটিই খেলবে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে। যেখানে টি–টোয়েন্টিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করা দলগুলোর স্কোরের গড় ১৫৩। বিশ্বকাপে তাই বাংলাদেশকে দেড় শর বেশি রান তাড়া করতে হবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর আগে রান তাড়ায় বারবার ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ বলেই মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। কাল প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, ‘এই সিরিজগুলোতে তো আমরা বিশ্বকাপের প্রস্তুতিই নিচ্ছি। বিশ্বকাপে উইকেট ভালো থাকবে। সেখানে আমাদের ১৬০, ১৭০ বা ১৮০ রান তাড়া করতে হবে। তাই এটা ভালো লক্ষণ নয়।’

আমরা ব্যাটিং অর্ডারে খুব বেশি এদিক-ওদিক করি। এটা ভালো নয়। এমন হলে সবাই আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে যায়। ব্যাটিং অর্ডারটা আমাদের মনে হয় থিতু হয়ে যাওয়া খুব দরকার। কে কোথায় ব্যাট করবে, কার কী দায়িত্ব বা ভূমিকা হবে, তা বিশ্বকাপের আগেই পরিষ্কার হওয়া দরকার।
হাবিবুল বাশার, জাতীয় দলের সাবেক নির্বাচক

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে রান তাড়া করতে নেমে ১৮ রানেই বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ব্যাটসম্যানদের অতিরিক্ত শট খেলার প্রবণতায় ইনিংসের শুরুতে উইকেট হারিয়ে দল বিপদে পড়ছে। টি–টোয়েন্টিতে শট খেলার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় উইকেট টিকিয়ে রাখাও দরকারি বলে মনে করেন হাবিবুল, ‘আমরা ভুল চিন্তাভাবনা করছি কি না, জানি না। গেম সেন্সটা ধরে রেখে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। আমি যতই মারি, পাওয়ারপ্লেতে দুটির বেশি উইকেট হারানো যাবে না। যদি এ রকম না করা যায়, তাহলে ম্যাচটা হাত থেকে ছুটে যায়।’

এ বছরের শুরুর দিকে টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সাফল্য পেয়েছে। এশিয়া কাপেও ফাইনাল খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছিল তাদের সামনে। কিন্তু এসব সাফল্যের বেশির ভাগই এসেছে বোলার ও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের হাত ধরে। শুরুর দিকে উইকেট পড়ে গেলে পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা দলকে আর জয়ের পথে এগিয়ে নিতে পারছেন না। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম (১১৬.০৭) স্ট্রাইক রেটে এ বছর টি–টোয়েন্টিতে ব্যাট করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তাঁদের খেলার ধরন নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। এর সঙ্গে ব্যাটিং অর্ডার কেমন হবে, ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে তা নিয়েও।

আরও পড়ুন
গাজী আশরাফ হোসেন ও লিটন দাস
প্রথম আলো গ্রাফিকস

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যর্থ ব্যাটিং লাইনআপ রেখে দিতে চাওয়া নিয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন অধিনায়ক লিটন দাস। একই ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে বিশ্বকাপ পর্যন্ত যেতে চান অধিনায়ক। প্রধান নির্বাচক চেয়েছেন কিছুটা রদবদল করে অন্যদেরও পরখ করে নিতে। বিশ্বকাপের আগেই নিজেদের ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করে ফেলা উচিত ছিল বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক নির্বাচক হাবিবুল, ‘আমরা ব্যাটিং অর্ডারে খুব বেশি এদিক-ওদিক করি। এটা ভালো নয়। এমন হলে সবাই আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে যায়। ব্যাটিং অর্ডারটা আমাদের মনে হয় থিতু হয়ে যাওয়া খুব দরকার। কে কোথায় ব্যাট করবে, কার কী দায়িত্ব বা ভূমিকা হবে, তা বিশ্বকাপের আগেই পরিষ্কার হওয়া দরকার।’
সে জন্য বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচই বাংলাদেশ পাচ্ছে। যার প্রথমটিতে আজ মাঠে নামছে তারা। এই সিরিজের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শুরু হবে বিপিএল ব্যস্ততা। ফর্ম হারানো ব্যাটসম্যানরা সেখানে নিজেদের খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবেন। সেটাতেও তাঁরা ব্যর্থ হলে অস্থিরতা আর আত্মবিশ্বাসের অভাব নিয়েই বিশ্বকাপে পা রাখতে হবে বাংলাদেশকে।

আরও পড়ুন