‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়ে আইপিএলে থেকে সরে দাঁড়ালেন ব্রুক, হতে পারেন নিষিদ্ধ
টানা দুই মৌসুম আইপিএল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন হ্যারি ব্রুক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত রাতে বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন। আইপিএলে নাম লিখিয়েও না খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারেন ইংল্যান্ডের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
ব্রুককে ২০২৪ আইপিএলের নিলাম থেকে ৪ কোটি রুপিতে কিনেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। কিন্তু দাদির মৃত্যুতে পরিবারের পাশে থাকতে গত বছর তিনি খেলেননি। সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত এবারের মেগা নিলামে তাঁর দাম ওঠে ৬ কোটি ২৫ লাখ রুপি। এবারও তাঁকে দলে ভেড়ায় দিল্লি ক্যাপিটালস। কিন্তু আইপিএলের ১৮তম আসর শুরুর মাত্র ১২ দিন আগে সরে দাঁড়ালেন ব্রুক। ২০২৫ আইপিএলে না খেলার কারণ হিসেবে তিনি জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
সদ্য সমাপ্ত আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ডের ভরাডুবির পর নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান জস বাটলার। ধারণা করা হচ্ছে, বাটলারের জায়গায় ব্রুককে সাদা বলের দুই সংস্করণের অধিনায়ক বানাবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)।
২৬ বছর বয়সী ব্রুক টেস্ট দলেরও নিয়মিত সদস্য। বোর্ডের সঙ্গে তিন সংস্করণেরই চুক্তি আছে তাঁর। কেন্দ্রীয় চুক্তির মেয়াদ বাকি আরও ১৮ মাস। ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’ ঠিকঠাকভাবে করতেই ব্রুক ২০২৫ আইপিএলে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শেষ মুহূর্তে বিদেশি খেলোয়াড়দের আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা অহরহ তা করে চলেছেন। গত মৌসুমে কলকাতা নাইট রাইডার্স কেনার পরও ইংল্যান্ডের জেসন রয় না খেলার সিদ্ধান্ত নেন। দেশটির দুই পেসার মার্ক উড ও গাস অ্যাটকিনসনও নিজেদের ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে একই কাজ করেছেন।
বিদেশি খেলোয়াড়দের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো উপযুক্ত কারণ ছাড়া বা শুধু ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে কোনো বিদেশি না খেলার সিদ্ধান্ত নিলে আইপিএলে দুই মৌসুমের জন্য নিষিদ্ধ হবেন।
অর্থাৎ, নিষিদ্ধ হলে হ্যারি ব্রুক ২০২৬ ও ২০২৭ মৌসুমে চাইলেও খেলতে পারবেন না। আইপিএল পরিচালনা পর্ষদ ব্রুকের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করার পর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিতে পারে।
এক্স ও ইনস্টাগ্রামে ব্রুক লিখেছেন, ‘আমি আসন্ন আইপিএল থেকে সরে দাঁড়ানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি দিল্লি ক্যাপিটালস এবং তাদের সমর্থকদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি। আমি ক্রিকেট ভালোবাসি। ছোটবেলা থেকেই আমার দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন ছিল এবং এই স্তরে আমার প্রিয় খেলাটি খেলার সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।’
ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের আন্তর্জাতিক মৌসুম শুরু হবে আগামী মে মাসের শেষ সপ্তাহে। এ বছর দলটি তিন সংস্করণ মিলিয়ে খেলবে আরও ২৫ ম্যাচ। ব্রুক এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি নিতে চান, ‘আমার আস্থাভাজন ব্যক্তিদের নির্দেশনায় আমি এই সিদ্ধান্ত (আইপিএলে না খেলা) গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছি এবং সময় বের করেছি। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের জন্য এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আসন্ন সিরিজের প্রস্তুতির জন্য পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে চাই। এটি করার জন্য আমার সময় প্রয়োজন। নিজেকে পুনর্জীবিত করতে আমি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ব্যস্ততম সময় থেকে এটি বের করেছি। আমি জানি, সবাই ব্যাপারটি বুঝতে পারবে না। আমিও তাদের কাছ থেকে তেমনটা আশা করি না।’
আইপিএল থেকে সরে দাঁড়িয়ে কোনো ভুল করেননি বলে মনে করেন ব্রুক, ‘নিজের কাছে যা সঠিক মনে হয়েছে, সেটাই করতে হবে। আমার পূর্ণ মনোযোগ ও (প্রথম) অগ্রাধিকার দেশের হয়ে খেলা। আমাকে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং আমি যে সমর্থন পেয়েছি, তার জন্য আবারও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
এবারের আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালই একমাত্র দল, যারা এখনো নিজেদের অধিনায়কের নাম ঘোষণা করেনি। ভারতের রাজধানী ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে এবার ব্রুকের বিকল্পও খুঁজে বের করতে হবে।
ব্রুকের আইপিএল অভিষেক হয়েছিল ২০২৩ মৌসুমে। আগের বছর ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টি জেতার পর তাঁকে ১৩ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে দলে ভিড়িয়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ওই মৌসুমে তিনি ১১ ম্যাচে ১৯০ রান করেন। ইডেন গার্ডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে তাঁর ৫৫ বলে অপরাজিত সেঞ্চুরিও আছে।