টপ অর্ডার ব্যর্থ, লড়াই করেও পারলেন না নাসুম–তানজিম
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম টি-টোয়েন্টি
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৫/৩
বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ১৪৯
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬ রানে জয়ী।
শুধু আফসোসটাই বাড়িয়ে গেলেন নাসুম আহমেদ আর তানজিম হাসান। শেষ দিকে তাঁরা ম্যাচটা এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখান থেকে ৪ ওভারে দরকার ছিল ৪৭ রান। টি–টোয়েন্টিতে এই সমীকরণ তো মেলানোই যায়। হাতে উইকেট থাকলে চট্টগ্রামের উইকেটে তা সম্ভবও ছিল। কিন্তু সে সম্ভাবনা যে শেষ করে দিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরাই।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামজুড়ে আজ যেন টি–টোয়েন্টির উৎসব লেগেছিল। প্রায় গ্যালারিভর্তি দর্শক, প্রতিটি চার–ছক্কায় বাড়তি উচ্ছ্বাস। উইকেটও রান করার জন্য দারুণ উপযোগী ছিল। কিন্তু সেই রঙিন মঞ্চই বিবর্ণ হয়ে গেল, যখন ১৬৬ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ৫৭ রানেই ৫ উইকেট হারাল। শেষ পর্যন্ত ২ বল বাকি থাকতে অলআউট ১৪৯ রানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বাংলাদেশ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি হেরে গেল ১৬ রানে।
ম্যাচের ছকটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাজিয়েছিল যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তায়। ওপেনাররা ধীরে শুরু করে গড়েছিলেন শক্ত ভিত। পরে রোভম্যান পাওয়েল আর শাই হোপ দলের রানটা জেতার মতো জায়গায় নিয়ে যান। আর পরে তাঁদের নিখুঁত বোলিং ও ফিল্ডিং লিখে দিয়েছে ম্যাচের গল্প।
প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৬ রান তুলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে আসে ৩৫ রান। এই সময়টায় ক্যারিবীয় ওপেনারদের চেয়ে বেশি আলো কেড়েছেন বাংলাদেশের স্পিনার নাসুম আহমেদ। পাওয়ারপ্লেতে দুই ফিল্ডার বাইরে থাকার পরও ২ ওভার বল করে দেন মাত্র ৪ রান।
পাওয়ারপ্লে শেষে ওপেনাররা খোলস ছেড়ে বেরোতে শুরু করলেন। কিন্তু তখনই বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন রিশাদ হোসেন। আগের ওভারে সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভাঙতে না পেরে অ্যালিক অ্যাথানেজেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন, এবার তাঁকেই বোল্ড করে ভাঙলেন ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। একই সঙ্গে পেলেন নিজের টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শততম উইকেট।
উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ চেষ্টা চালায় রানের গতি ধরে রাখতে। কিন্তু পরপর দুই বলে ২ উইকেট নিয়ে তাঁদের চাপে ফেলেন তাসকিন আহমেদ। ৩৬ বলে ৩৩ করা ব্রেন্ডন কিংয়ের পর ফেরেন শেরফান রাদারফোর্ড। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল, তবে শততম টি–টোয়েন্টি খেলতে নামা পাওয়েল তা হতে দেননি।
পাওয়েল এরপর হোপকে সঙ্গী করে অঙ্ক কষা ব্যাটিংয়ে দলের ইনিংস এগিয়ে নেন। স্পিনারদের বিপক্ষে খুব স্বাচ্ছন্দ্য নন তিনি—১৫তম ওভারে নাসুমের ৫ বল খেলেও কোনো ঝুঁকি না নিয়ে করেন মাত্র ২ রান। তখন তাঁর রান ছিল ১৭ বলে ৮। তানজিমের হাত থেকে সহজ ক্যাচ ফসকে যেতেই ভাগ্য খুলে যায় পাওয়েলের। ইনিংসের শেষ ৭ বলের চারটিতে ছক্কা মেরে ২৮ বলে অপরাজিত ৪৪ রানে শেষ করেন ইনিংস। ৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন হোপও। ৩ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস থামে ১৬৫ রানে।
লক্ষ্যটা সহজ ছিল না, কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরেও নয়। বাংলাদেশের শুরুটা আসলে আরও ভালোই হয়েছিল। কিন্তু তানজিদ হাসান ৫ বলে ১৫ রান করে শেফার্ডের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরার পরই যেন সব এলোমেলো হয়ে গেল। লিটন টি-টোয়েন্টিতে নিজের ফেরাটা রাঙাতে পারলেন না। সাইফ হাসান এক ছক্কা মেরে ৭ বলে ৮ রান করে ফেরেন। জেসন হোল্ডারের বলে বোল্ড হয়ে যান শামীম হোসেন। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৪২ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। নুরুল হাসানও ফিরেছেন ১০ বলে ৫ রান করে।
তারপরই ইনিংসের আরেক রকম শুরু। তখনো শেষ ভরসা হিসেবে ক্রিজে তাওহিদ হৃদয়। তাঁর ২৮ বলে ২৫ রানের ইনিংস শেষ হয় জেডেন সিলসের বলে। তখন ৪৮ বলে দরকার ৮৯ রান।
সেখান থেকেই ম্যাচে প্রাণ ফেরান নাসুম আহমেদ ও তানজিম হাসান। দুজনের জুটিতে ২৩ বলে আসে ৪০ রান। শেষ ৪ ওভারে সমীকরণ নেমে আসে ৪৭ রানে। তখনো রিশাদ ব্যাট হাতে নামেননি।
১৩ বলে ২০ রান করে নাসুম আউট হলেও তাই গ্যালারি ফাঁকা হয়নি। বরং দর্শকদের মনে তখনো আশার ঝিলিক—‘যদি কিছু হয়ে যায়!’ সেই আশাটাই নিভে যায় রিশাদ ৩ বলে ৬ রান করে আউট হয়ে গেলে। হতাশা নিয়েই দর্শকেরা বাড়ির পথ ধরেন—টপ অর্ডারদের ব্যর্থতায় যেটা তাঁদের ধরার কথা ছিল আরও অনেক আগেই। বাড়তি সময় তাঁদের মাঠে রাখলেও শেষ পর্যন্ত আর জয়ের আনন্দ এনে দিতে পারেননি নাসুম-তানজিম!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৫/৩ (হোপ ৪৬*, পাওয়েল ৪৪*, অ্যাথানেজ ৩৪, কিং ৩৩; তাসকিন ২/৩৬, রিশাদ ১/৪০, নাসুম ০/১৫)। বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ১৪৯ (তানজিম ৩৩, হৃদয় ২৮, নাসুম ২০; হোল্ডার ৩/৩১, সিলস ৩/৩২, আকিল ২/২২)। ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রোভম্যান পাওয়েল।