ভারত ফেবারিট বলেই নির্ভার নিউজিল্যান্ড
ইব্রাহিমের ধারণা, দুবাইয়ে আজ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের যে দলটা খেলবে, তারাও সবাই কোনো না কোনোভাবে ভারতীয়। খেলা হবে আসলে ভারতীয়দের মধ্যেই। ট্যাক্সিচালকের কথা শুনে তাঁর দিকে একবার না তাকিয়ে পারা গেল না। ইব্রাহিম হাসছেন এবং বলে যাচ্ছেন, ‘ক্রিকেটটা ভারতীয়দেরই খেলা। অন্য যত দেশ ক্রিকেট খেলে, খুঁজলে দেখবে তাদের পূর্বপুরুষদের কেউ না কেউ ভারতীয়। কিছু পাকিস্তানিও থাকতে পারে।’
অদ্ভুত এই চিন্তার সঙ্গে তাল না মেলানোই ভালো মনে হলো। দুবাইয়ে এত বেশি ভারতীয় যে এখানে ভিনদেশি অন্য যে কারও মনে হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ নেই। ইব্রাহিম যে বরং পকিস্তানকেও হিসাবের মধ্যে রাখছেন, এটাই বেশি।
তবে এশিয়ার অন্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর প্রতি তাঁর তাচ্ছিল্য গায়ে লাগার মতো। বিশেষ করে ক্রিকেটের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম না বলাটা একজন বাংলাদেশি হিসেবে মেনে নেওয়া কঠিন। এশিয়ায় বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার মতো আরও কয়েকটি দেশও ক্রিকেট খেলে বলায় ইব্রাহিমের মন্তব্য, ‘নেপালও তো খেলে। ওগুলোকে গোনায় ধরে কে! আসলে ভারতই শেষ কথা।’
শেষে ভবিষ্যদ্বক্তা হিসেবে এটাও বললেন, আজ ফাইনালে ভারতই নাকি চ্যাম্পিয়ন হবে। ট্যাক্সি স্টেডিয়ামে পৌঁছে যাওয়ায় আলোচনাটা আর এগোয়নি। তাঁকে বলা হয়নি নিউজিল্যান্ড কিন্তু একবারই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে এবং সেটা ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল খেলে। আইসিসির টুর্নামেন্টে ভারতকে ফাইনালে পেলেই তারা হারিয়ে দেয়।
২০০০ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর ২০২১ সালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছে। এখন পর্যন্ত ৬টি আইসিসি ইভেন্টের ফাইনাল খেলে নিউজিল্যান্ডের দুটি জয়ই ভারতকে হারিয়ে। কাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এসে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার তো তিনে তিনের কথাও বলে গেলেন, ‘আশা করি আমরা তৃতীয়বারের মতো সৌভাগ্যবান হব।’
অবশ্য ক্রিকেটে ভারতীয় আধিপত্য নিয়ে ইব্রাহিমের কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আজ দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ১৯ দিনের যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা শেষ হতে চলেছে, সেটা কি তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য মেনেই নয়! মাঠ এবং মাঠের বাইরে তাদেরই তো শাসন চলল। টুর্নামেন্টের আয়োজক পাকিস্তান অথচ ভারতের হাইব্রিড মডেলের শর্ত মেনে তারাও ভারতের বিপক্ষে খেলে গেছে দুবাইয়ে এসে। অন্য দলগুলো দু্বাই–পাকিস্তান ওড়াউড়ি করেই ক্লান্ত অথচ ভারত এক শহরে বসেই আরাম করে কাটিয়ে দিল পুরো টুর্নামেন্ট।
মাঠের শক্তিতে তো এমনিতেই ভারতীয় দল এগিয়ে। গভীর ব্যাটিং লাইনআপ, বোলিং আক্রমণ পেস–স্পিনে ভারসাম্যপূর্ণ। তার ওপর খেলেছে এক জায়গায় থেকে।
মাঠের শক্তিতে তো এমনিতেই ভারতীয় দল এগিয়ে। গভীর ব্যাটিং লাইনআপ, বোলিং আক্রমণ পেস–স্পিনে ভারসাম্যপূর্ণ। তার ওপর খেলেছে এক জায়গায় থেকে। অন্য দলের সঙ্গে এটাও ভারতের পারফরম্যান্সের ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়ে থাকতে পারে। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড এবং এরপর সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া—এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এখন পর্যন্ত চার ম্যাচে অপরাজিত। নিউজিল্যান্ডও ফাইনাল পর্যন্ত ভালো খেলেই এসেছে। তবে তারা এখন পর্যন্ত একটা ম্যাচই হেরেছে, গ্রুপ পর্বে সেটা ভারতের কাছে।
ফাইনালটা যেহেতু ভারত–নিউজিল্যান্ডের মধ্যেই, ফাইনালের আগে দুই দলের আগের ম্যাচের প্রসঙ্গ আসেই। সেই ম্যাচ ভারত ৪৪ রানে জিতলেও ৩০ রানে প্রথম ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই পড়ে গিয়েছিল চাপে।
ফাইনালের আগে কাল ভারতের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে সহ–অধিনায়ক শুভমান গিল অবশ্য বলেছেন, সেই শুরু আজ বরং তাদের বাড়তি আত্মবিশ্বাসই যোগাবে, ‘গত ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে আমরা ৩ উইকেট হারিয়েও জিতেছি। এখানে আমরা টানা চারটি ম্যাচ খেলেছি। কাজেই আমার মনে হয় না ওই ম্যাচ নিয়ে আমাদের আর কিছু ভাবার আছে। তবে হ্যাঁ, আমরা আশা করব ওপরের দিকের তিন ব্যাটসম্যানের কেউ ভালো করবে।’ ঘরের মাঠে ২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেনি ভারত। এবার সেই আক্ষেপ ঘোচাতে চান গিলরা।
টুর্নামেন্টের শুরুর তুলনায় দুবাইয়ে গরম এখন বেড়েছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের প্রভাব ফাইনালের উইকেটেও পড়তে পারে কিছুটা। যদিও গিল ভিন্ন কিছুর আশা করছেন না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুবাইয়ের উইকেট এখনো তিন শ রানের ম্যাচ দেখেনি। আবহাওয়া যে রকমই থাকুক, উইকেট আগের মতোই থাকবে বলে তাঁর ধারণা। সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন নিজেদের শক্তির জায়গাটা, ‘আমরা জানি এ ধরনের উইকেটে কীভাবে বোলিং–ব্যাটিং করতে হয়।’
ফাইনাল মানেই চাপের ম্যাচ। তবে এই চাপ নিয়ে শুভমান গিলের একটা তত্ত্ব আছে। চাপ ভাবলেই চাপ, না ভাবলে নয়।
ভারতের ব্যাটিং অর্ডার গিলের কাছে তাঁর দেখা সেরা ব্যাটিং অর্ডার। কোহলি অন্যতম সেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যানদের একজন আর রোহিত সেরা ওপেনারদের একজন। দলে পরের দিকে যাঁরা ব্যাটিং করেন, শ্রেয়াস আইয়ার, কে এল রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া তাঁরাও গিলের চোখে সেরা। পরে তাঁদের মতো ব্যাটসম্যান থাকাতেই ভারতের ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানরা নির্ভার খেলতে পারেন। পরে স্যান্টনারও বলে গেছেন, এসব কারণেই ভারতের বিপক্ষে খেলাটা চাপের, বিশেষ করে বড় আসরের ফাইনালে। নিজেদের পক্ষে বললেন শুধু একটা কথাই, ‘আমরাও খুব ভালো ক্রিকেট খেলছি।’
ফাইনাল মানেই চাপের ম্যাচ। তবে এই চাপ নিয়ে শুভমান গিলের একটা তত্ত্ব আছে। চাপ ভাবলেই চাপ, না ভাবলে নয়। বড় ম্যাচে এটা যারা ভালো সামলে নেয়, তারাই এগিয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে গিল এক সময়কার ওয়েস্ট ইন্ডিজ–অস্ট্রেলিয়ার কথা বলেছেন; চাপটাপ সব প্রতিপক্ষের ওপর ঢেলে দিয়ে নকআউট ম্যাচগুলোতে যারা অন্যদের উড়িয়ে দিত।
কথাটা বলা যত সহজ, করা তত নয়। যেকোনো ফাইনাল থেকেই আসলে চাপ শব্দটা উধাও করে দেওয়া কঠিন। বিশেষ করে ১৩০ কোটি মানুষের প্রত্যাশার বোঝা মাথায় নেওয়া একটা দলের পক্ষে। অবচেতনে ক্রিকেটারদের মনে চিন্তা আসবেই, ‘খেলাটা ফাইনাল। আমরা ফেবারিট। আমাদের জিততে হবে। এই একটা ম্যাচ জিততেই তো এত কিছু!’
নিউজিল্যান্ডের ওপর আবার প্রত্যাশার চাপটা নেই। ফাইনালে গিয়েও তারা হেরে যায়, এটা যেমন ঠিক। ফাইনালে ভারতকে পেলে তারা ছাড়ে না, এটাও তো ঠিক। বরং ফাইনালে ভারত ফেবারিট বলেই নির্ভার থাকবে নিউজিল্যান্ড।