ক্রিকেটে ম্যাচ রেফারির কাজ কী, কেন গুরুত্বপূর্ণ

ক্রিকেটকে ন্যায়সংগতভাবে ও নিয়ম মেনে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ম্যাচ রেফারির ভূমিকা অনেক।

আইসিসি এলিট প্যানেলের ৫ ম্যাচ রেফারি—জেফ ক্রো, রঞ্জন মাদুগালে, জাভাগাল শ্রীনাথ, স্যার রিচি রিচার্ডসন ও অ্যান্ডি পাইক্রফট (বাঁ থেকে)ছবি: আইসিসি

রেফারি শব্দটা ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবলসহ অন্য খেলার সঙ্গেই বেশি যায়। তারপরও ক্রিকেটে ম্যাচ রেফারি নিয়ে হঠাৎ আলোচনা আর বিতর্ক কেন, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।

দুবাইয়ে গত রোববার ভারত–পাকিস্তান এশিয়া কাপের ম্যাচে টসের সময় আগা সালমানের সঙ্গে হাত মেলাননি সূর্যকুমার যাদব। ম্যাচ শেষেও পাকিস্তানিদের সঙ্গে করমর্দন না করেই ড্রেসিংরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন ভারতীয়রা।

ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে টসের সময় দুই অধিনায়ককে হাত মেলাতে বারণ করেন ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট (বাঁয়ে)
ছবি: পিসিবি

এ ঘটনায় ভারতের আচরণে হতাশ হলেও পাকিস্তান ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের ওপর। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আইসিসির কাছে অভিযোগ করে, টসের সময় ম্যাচ রেফারি পাইক্রফটই দুই অধিনায়ককে হাত না মেলানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা নিয়মবিরুদ্ধ।

পাইক্রফটের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে তাঁকে এশিয়া কাপ থেকে সরিয়ে দিতে আইসিসিকে ই–মেইল পাঠায় পিসিবি। নয়তো টুর্নামেন্ট বর্জনের হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত পাইক্রফট পাকিস্তান দলের ম্যানেজার ও অধিনায়কের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় দলটি আবারও খেলতে নামে।

অনেকের কাছে মনে হতে পারে, মাঠের দুই আম্পায়ার যেহেতু দুই দলের সবচেয়ে কাছকাছি থেকে ম্যাচ পরিচালনা করেন, তাই তাঁদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু খেলাটিকে ন্যায়সংগতভাবে ও নিয়ম মেনে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ম্যাচ রেফারির ভূমিকাও কম নয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক, ক্রিকেটে ম্যাচ রেফারির প্রধান দায়িত্বগুলো কী কী—

নিয়মের প্রয়োগ: ম্যাচ রেফারি খেয়াল রাখেন যেন খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা ক্রিকেটের নিয়ম এবং নির্দিষ্ট ম্যাচের শর্তগুলো মেনে চলেন।

শৃঙ্খলা রক্ষা: খেলা চলাকালে যদি কোনো খেলোয়াড় বা দলের কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করেন, সেটি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া।

স্টেডিয়াম ও মাঠের পরিবেশ নজরদারি: গ্যালারি, পিচ, আবহাওয়া, আলোসহ ম্যাচের যাবতীয় পরিস্থিতি দেখেন এবং প্রয়োজনে খেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

যোগাযোগ রক্ষা: দল, আম্পায়ার ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখা ও সমস্যা সমাধানে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করা।

প্রতিবেদন লেখা: খেলা শেষে তিনি একটি প্রতিবেদন দেন, যেখানে খেলোয়াড় ও স্টাফদের আচরণ, কোনো ঘটনা এবং প্রয়োজনে পরবর্তী করণীয় উল্লেখ থাকে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ: খেলার সময় কোনো বিরোধ বা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন।

আবেদন পর্যালোচনা: খেলোয়াড়ের আচরণ বা আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে যদি কেউ আবেদন করেন, তা পর্যালোচনা করা।

কীভাবে ম্যাচ রেফারি নিয়োগ দেওয়া হয়?

আইসিসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, আসন্ন ম্যাচ, সিরিজ বা টুর্নামেন্টের জন্য যত দ্রুত সম্ভব, প্রাথমিকভাবে ম্যাচ রেফারি নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। কখনো কখনো ম্যাচ বা সিরিজ শুরুর আগে নিয়োগে পরিবর্তন আসতে পারে। কোন ম্যাচে কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা ঠিক করার সময় আইসিসি কিছু বিষয় খেয়াল রাখে—

নিরপেক্ষ দেশের ম্যাচ রেফারি নিয়োগ।
ম্যাচের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনায় সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া।
যাঁরা ভালো পারফর্ম করেন, তাঁদের বেশি ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ দেওয়া।
একই দলের ম্যাচে বারবার একই ব্যক্তিকে দায়িত্ব না দেওয়ার চেষ্টা করা।
তাঁর কাজের চাপ বিবেচনায় রাখা।

আরও পড়ুন

এলিট প্যানেলের ম্যাচ রেফারি কারা?

বর্তমানে আইসিসির এলিট প্যানেলের ম্যাচ রেফারি পাঁচজন—ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার রিচি রিচার্ডসন, নিউজিল্যান্ডের জেফ ক্রো, ভারতের জাভাগাল শ্রীনাথ, শ্রীলঙ্কার রঞ্জন মাদুগালে এবং জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি পাইক্রফট।

পাকিস্তান দলের ম্যানেজার নাভিদ আকরাম চিমা ও অধিনায়ক আগা সালমানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট
ছবি: পিসিবি

এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, হংকং, ওমান ও আরব আমিরাত খেলছে। তাই আইসিসি এই আট দেশের বাইরে থেকে ম্যাচ রেফারি রেখেছে। একজন জিম্বাবুয়ের পাইক্রফট, আরেকজন ওয়েস্ট ইন্ডিজের রিচার্ডসন।

ম্যাচ রেফারি কত টাকা পান?

ম্যাচ রেফারিদের আয় আইসিসি কখনো প্রকাশ করেনি। তবে ক্রিকেট–বিষয়ক কিছু ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।

সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, একজন ম্যাচ রেফারি পারিশ্রমিক হিসাবে প্রতি টেস্টে ২৫০০ ডলার (৩ লাখ ৪ হাজার টাকা), প্রতি ওয়ানডেতে ১৫০০ ডলার (১ লাখ ৮২ হাজার টাকা) এবং প্রতিটি টি–টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য ৮৫০ ডলার (১ লাখ ৩ হাজার টাকা) পেয়ে থাকেন।