স্বার্থের সংঘাত নিয়ে অভিযোগের জবাবে ইনজামামের ব্যাখ্যা

ইনজামাম–উল–হকছবি: আইসিসি

পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক পদ থেকে গত মাসে সরে দাঁড়ান ইনজামাম–উল–হক। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) নিবন্ধিত একটি খেলোয়াড়দের ব্যবস্থাপনা কোম্পানিতে তাঁর শেয়ার আছে এবং সে কারণে দলে খেলোয়াড় নির্বাচনে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হয়েছে—ইনজামামের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে এমন অভিযোগ ওঠার পর পিসিবি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল।

স্বাধীন তদন্তের সুযোগ করে দিতে প্রধান নির্বাচকের পদ ছেড়েছিলেন ইনজামাম। এবার টিভি সাক্ষাৎকারে ইনজামাম দাবি করেছেন, তিনি ইয়াজু নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে আছেন। তবে এই প্রতিষ্ঠান খেলোয়াড়দের ব্যবস্থাপনা করে না।

আরও পড়ুন

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানের মালিক বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও শাহিন আফ্রিদির এজেন্ট তালহা রেহমানি। ক্রিকেট পাকিস্তান জানিয়েছে, রিজওয়ান ও রেহমানি এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদও সামলাচ্ছেন।

স্বার্থের সংঘাত ওঠার অভিযোগের জবাবে ইনজামামের ব্যাখ্যা, প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব দেওয়ার আগে বোর্ড তাঁর কাছে এ বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে তিনি সানন্দে বলতেন। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কোনো আর্থিক লেনদেন নেই বলে দাবি করেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি এ ব্যাটসম্যান। ক্রিকেট পাকিস্তান জানিয়েছে, নিজের আইনজীবীর মাধ্যমে ইনজামাম দুই দিন আগে পিসিবিতে একটি চিঠি পাঠান। তদন্ত কমিটি এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। যদিও ইনজামাম মনে করেন, তদন্ত কমিটির তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত ছিল এবং তালহা রেহমানিকে কেন এখনো ডাকা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ইনজামাম।

ক্রিকেট পাকিস্তান ইনজামামের বক্তব্য প্রকাশ করেছে। সেখানে তিনি বলেছেন, বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনে সাইকেলের হেলমেট সরবরাহ করতে কোভিড মহামারির সময় তাঁরা ইয়াজু নামের একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। ব্যবসা করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সফলতার মুখ দেখেননি। ইনজামাম দাবি করেন, তাঁকে জানানো হয় সায়া করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান ক্রিকেটারদের চুক্তিপত্র ব্যবস্থাপনা করে—ইনজামামের চুক্তিও—এবং তাঁরা ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্টে খুব দক্ষ। আর কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যাপারটি ফয়সালা হয়েছে গত জুনে, তখন ইনজামাম পিসিবিতে ছিলেন না বলে দাবি করেন। প্রধান নির্বাচক হিসেবে তিনি এসেছেন আগস্টে। তত দিনে চুক্তিপত্রে কে কে থাকছেন এবং ক্যাটাগরিগুলো নিশ্চিত হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

ইনজামাম দাবি করেন, চুক্তি নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের ঝামেলা নিরসনে তাঁকে সাধুবাদ জানানো উচিত। বোর্ড তাঁকে সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিল। বর্তমান পিসিবি চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ এবং পাকিস্তান দলের অধিনায়ক বাবর আজমের সঙ্গে বসে বিষয়টির সমাধান করেছিলেন ইনজামাম। আইসিসির রাজস্বের যে ভাগ পায় পিসিবি, বাবররা সেখান থেকে ভাগ দাবি করেছিলেন এবং ইনজামাম তাঁদের সে সময় আশ্বস্ত করেছিলেন এ বিষয়ে।

ইনজামাম আরও দাবি করেন, সায়া করপোরেশনের নথিপত্র বোর্ডে আছে। বিষয়টি গোপন কিছু নয়। স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ যখন উঠেছিল, তখন পিসিবি ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান জাকা আশরাফ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রতিষ্ঠান চার বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে দাবি করেন ইনজামাম। ওয়ানডেতে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ইনজামাম এরপর সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহিন আফ্রিদি এবং অন্য ক্রিকেটাররা কি শুধুই আমার প্রভাবে খেলে? এমনকি যখন আমি প্রধান নির্বাচকের দায়িত্বে নেই তখনো? আমি খেলোয়াড়দের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছি, সেই প্রমাণ দিন?’

ইনজামাম জানিয়েছেন, প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব তিনি নিতে চাননি। হৃৎপিণ্ডে পাঁচটি স্টেন্ট পরানোর কথা বলে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন। ইনজামাম দাবি করেন, তিনি কাউকে নিয়ন্ত্রণ করেননি। এসব বলে যেন তাঁকে লজ্জায় না ফেলা হয়। প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব নেওয়া নিয়ে অনুশোচনার কথাও জানিয়েছেন ইনজামাম, ‘অনেকেই প্রশ্ন করে, অন্যরা যখন এই দায়িত্ব নেয়নি, তখন আমি কেন প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব নিলাম। এখন আমার সে জন্য অনুশোচনা হয়। তদন্তটা ভালোভাবে হওয়ার জন্যই দায়িত্ব ছেড়েছি।’ গত ৩০ অক্টোবর ইনজামামের পদত্যাগের খবরে জানা গিয়েছিল, তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তিনি আবারও দায়িত্বে ফিরবেন।

আরও পড়ুন

পিসিবির মিডিয়া ও কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান আলিয়া রশিদ জিও নিউজকে বলেছেন, স্বার্থের সংঘাত তৈরি হতে পারে এমন কোনো কিছু বোর্ডকে জানানো উচিত ছিল ইনজামামের, ‘সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত নিয়ে পিসিবিকে জানানোর দায়িত্বটা ইনজামামের। বিশ্বকাপের সময় কোনো ক্রিকেট বোর্ডই সংবাদমাধ্যমে কৌতুকের কারণ হতে চায় না।’

আলিয়া রশিদ দাবি করেন, ইনজামাদের দায়িত্ব ছাড়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না, ‘ইনজামাম কেন পদত্যাগ করলেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়। তার বোঝা উচিত ছিল, এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে পিসিবিকে পদক্ষেপ নিতেই হতো। পিসিবি পেশাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবস্থা নিয়ে স্বার্থের সংঘাত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করেছে, কিন্তু ইনজামামকে পদত্যাগ করতে বলা হয়নি।’ আলিয়া রশিদ আরও জানিয়েছেন, এই তদন্তের অংশ নন পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যান রিজওয়ান।