‘বরিশাল ভুয়া’, ‘চট্টগ্রাম ভুয়া’। ‘ভুয়া’ যেন এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান। কিছু হলেই যে কেউ ‘ভুয়া’ হয়ে যাবেন। বিপিএলে বাউন্ডারিতে যে খেলোয়াড়ই ফিল্ডিং করতে যান, একবার হলেও দর্শকদের কাছ থেকে শুনতে হয় ‘ভুয়া, ভুয়া।’ চট্টগ্রামে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে যেমন তা শুনতে হয়েছিল ঢাকা ক্যাপিটালের লিটন দাসকে।
আজ চিটাগং কিংস, ফরচুন বরিশাল ম্যাচের আগেও জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মূল গেটের সামনের দর্শক সারিতে ‘ভুয়া, ভুয়া’ রব। চট্টগ্রামের দর্শকেরা বরিশালের দর্শকদের বলছেন ‘ভুয়া’, বরিশালের দর্শকেরা তার পাল্টাও দিচ্ছেন ‘ভুয়া’ বলে।
তা এই ‘ভুয়া’ বলে যদি সত্যিই কিছু থেকে থাকে, চট্টগ্রাম আর বরিশালের সমর্থকেরা যে ম্যাচটা দেখতে মাঠে এসেছিলেন, সেটাও কিন্তু সেই ধরনেরই এক ম্যাচ হয়েছে। প্রেসবক্স থেকে মনে হচ্ছিল উইকেটে বল কখনো কখনো বুঝি একটু থেমে আসছে। সে কারণেই হয়তো বিপিএলের আগের ম্যাচগুলোর তুলনায় ব্যাটিং করাটা একটু কঠিন হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের।
তবে ম্যাচ শেষে চট্টগ্রামের স্পিন কোচ এনামুল হক সেই সংশয়ও দূর করে দিয়ে বলেছেন, উইকেট ভালো ছিল। ব্যাটসম্যানরাই বাজে ব্যাটিং করেছে, সঙ্গে বরিশালের বোলারদের ভালো বোলিংয়েরও কৃতিত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার। সেটা এতটাই যে, ঘরের মাঠের ভালো উইকেটেও ১২৪ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছে চিটাগং। আবার এই অল্প রান তাড়া করতে গিয়েই বরিশাল আবার ৫৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে।
সব মিলিয়ে যা হয়েছে তা আসলে বাজে ক্রিকেটেরই প্রদর্শনী। অবশ্য বরিশালের শুরুটা ওরকম ব্যাটিং বিপর্যয় দিয়ে হওয়াতে ‘লো স্কোরিং’ ম্যাচটাও কিছু সময়ের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ ছড়াতে পেরেছে। ঘরের মাঠে চিটাগং কিংসের ৮ উইকেট হারিয়ে করা ১২১ রানের জবাবে ফরচুন বরিশাল শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতেছে ৬ উইকেটে এবং তাও ১৬.৫ ওভারেই। বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে এসে চিটাগং কিংস হারল পর পর দুই ম্যাচেই।
প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা যেটা বলা হলো, সেটা আসলে বরিশালের ইনিংসের ১০ম ওভার পর্যন্তই। চিটাগংয়ের ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেই যেন বরিশালের ব্যাটসম্যানরাও মাঠ-ড্রেসিংরুমে আসা-যাওয়া শুরু করলেন। ম্যাচের চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম ও দশম ওভারে একে একে বিদায় নেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ।
সঙ্গী ওপেনার ডেভিড ম্যালানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে তামিম রান আউট দলের ১৪ রানে। মাঠ ছাড়ার সময় তামিম একটু অসন্তোষও প্রকাশ করলেন ম্যালানের প্রতি। বরিশালের পরের তিন উইকেট পড়েছে ১৬, ৩২ ও ৫৩ রানে।
তবে চিটাগংয়ের বোলারদের এরপর্ আর কোনো সুযোগই দেননি ম্যালান আর মোহাম্মদ নবী। পঞ্চম উইকেটে তাদের অবিচ্ছিন্ন ৬৯ রানের জুটিতেই শেষ ম্যাচ। ৪১ বলে ৫৬ রানে ম্যালান ও ২১ বলে ২৬ রানে অপরাজিত থেকে যান নবী।
২৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে মায়ের মৃত্যুশোক কাটিয়ে দলে ফেরা খালেদই চিটাগংয়ের সবচেয়ে সফল বোলার। ম্যাচ শেষে এনামুল জানিয়েছেন, যেহেতু প্রতিপক্ষ ছিল বরিশালের মতো বড় দল, খালেদ নিজেই চেয়েছেন সিলেট থেকে চলে এসে ম্যাচটা খেলতে।
চিটাগং ২ উইকেট হাতে রেখে পুরো ২০ ওভার খেলেও করেছে এবারের আসরের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান ১২৪। রানের সংখ্যা দেখলে অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনের ৩৫ আর আরাফাত সানির অপরাজিত ২৭ রানের কথাই বলতে হয়। কিন্তু টি-টোয়েন্টির মেজাজ ছিল না কারও ব্যাটিংয়েই। মিঠুন, সানি দুজনই তাদের ইনিংসে বল খেলেছেন ৩৪টি করে।
বরিশালের প্রায় সব বোলারকে খেলতেই কষ্ট হয়েছে চিটাগংয়ের ব্যাটসম্যানদের। তার মধ্যে বেশি সফল বোলার ১২ রানে ৩ উইকেট নেওয়া পাকিস্তানের পেসার ফাহিম আশরাফ। আরক পেসার রিপন মণ্ডলও ৩ উইকেট নিয়েছেন ২৩ রানে।