বাচ্চাদের সঙ্গে থাকতে ‘জাভেদ ওমর ইনিশিয়েটিভ’

‘জাভেদ ওমর ইনিশিয়েটিভ’ -এর যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে অতিথিরাসৌজন্য

শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা তাঁর অনেক দিনের। সুবিধাবঞ্চিতদের খেলাধুলার সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করতে চান। কাজ করতে চান শিশু–কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও। করোনাকালের গৃহবন্দী জীবনে সেটা নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ পান জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর। সেই ভাবনা আজ আনুষ্ঠানিকতা পেয়েছে রাজধানীর এক রেস্তোরাঁয়, যাত্রা শুরু করেছে ‘জাভেদ ওমর ইনিশিয়েটিভ’ নামে তাঁর এ উদ্যোগ। দীর্ঘদিনের সতীর্থ, বিসিবি কর্মকর্তা ও সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে নতুন এ উদ্যোগের কথা জানান জাভেদ।

জাতীয় দলে খেলার সময়ই ছোট ছোট এ রকম উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানান জাভেদ ওমর। দেশের মানুষের জন্য কিছু করবেন বলে কানাডায় স্থায়ী হননি। একবার এতিমখানায় খাবার দিতে গিয়ে সামনে খোলা মাঠ দেখে জাভেদের মনে হয়েছে, সাহায্য করা দরকার তাদের। এরপরই ‘জাভেদ ওমর ইনিশিয়েটিভ’-এর চিন্তাটা তাঁর মাথায় দানা বাঁধে।

বিসিবি সভাপতি ও এক সময়ের সতীর্থ ফারুক আহমেদের সঙ্গে জাভেদ ওমর
সৌজন্য

শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চাওয়ার কারণ হিসেবে জাভেদ বলেছেন, ‘কিছু ব্যাপার নিয়ে আমি নিজেই খুব ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। তখন আমি যে অনুভূতির ভেতর দিয়ে গিয়েছি, তা খুব কঠিন ছিল। আমি চ্যালেঞ্জ নেওয়া পছন্দ করি, আমার মতো কেউই যদি এত ডাউন হয়ে যায়, বাচ্চারা তো তাহলে অনেক ডাউন হতে পারে। আমাদের একজন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলোয়াড়ও কয়েক বছর আগে আত্মহত্যা করেছিল।’

আরও পড়ুন

‘জাভেদ ওমর ইনিশিয়েটিভ’ কী কাজ করবে, সেটারও একটা ধারণা দিয়েছেন জাভেদ, ‘ক্রিকেট, বল, স্টাম্প দরকার হলে এগুলো দেওয়া হবে। তারা মন খুলে খেলবে। আমি একটা এতিমখানায় খাবার দিই। দেখলাম সামনে খোলা মাঠ। আমি চিন্তা করলাম, ওদের যদি একটু বল, ব্যাট দিই, তাহলে ওরা বিকেলে খেলল, সকালে খেলল। ফুটবলও আমি দিতে পারি। মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা—এসবও থাকবে। আমার যে কোম্পানি প্লাস্টিসিটি, এটা আমাদের সঙ্গে থাকবে।’

‘জাভেদ ওমর ইনিশিয়েটিভ’ -এর যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে অতিথিরা
সৌজন্য


অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ফারুক আহমেদ। যদিও তিনি পরিষ্কার করে দেন, এখানে তাঁর উপস্থিতি বোর্ড সভাপতি হিসেবে নয়, সাবেক একজন ক্রিকেটার হিসেবে। তবে মঞ্চে উঠে কথা তো বলতে হয়েছেই। যেখানে বলেছেন, ‘জাভেদের চিন্তা ও আমার চিন্তা খুব কাছাকাছি। আমাদের মধ্যে অনেক খেলোয়াড়, কিউরেটর, আম্পায়ার, সাংবাদিক আছেন, যাঁরা খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। আমি চেষ্টা করছি জাভেদের মতোই তাঁদের জন্য কিছু করতে। তাঁদের সাহায্য করতে আমরা ক্রিকেট বোর্ডেও একই রকম ফাউন্ডেশনের কথা চিন্তা করছি।’
জাভেদের উদ্যোগের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘আপনার এ নতুন যাত্রায় একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমাকে আপনি পাবেন। আমরা সবাই চেষ্টা করব যেন এটা থেমে না যায়।’

আরও পড়ুন

জাভেদ ওমরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার এমন একটা উদ্যোগের সূচনায় না এসে পারেননি। শুভকামনা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মহৎ উদ্যোগ। জাভেদ ওমর তো আমাদের বন্ধু। ও যাদের নিয়ে কাজ করছে, যে উদ্যোগটা নিয়েছে, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আন্ডার প্রিভিলেজড বাচ্চা যারা, ফাউন্ডেশন থেকে তাদের খেলার সরঞ্জাম দেওয়ার কাজটা ফাউন্ডেশন থেকে বড়ভাবে করা যায়।’
জাভেদ ওমরের দীর্ঘদিনের সতীর্থ মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, ‘ওনার এই উদ্যোগটা অনেক মহান। আমার মনে হয়, সবাই এটার পাশে থাকবে।’

আরও পড়ুন

প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র জাভেদ ওমরের খেলোয়াড়ি জীবনের কিছু কীর্তির সরস বর্ণনা দেন। জাভেদ ওমরের এ উদ্যোগ নিয়ে বলেন, ‘এমন কিছু করার পরিকল্পনার কথা দু–তিন বছর ধরেই জাভেদ বলতেন। আমি ভাবতাম, এটা আরেকটা খেয়াল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি যেটা করছেন, তা দারুণ একটা উদ্যোগ। খেলা শুধু বড় খেলোয়াড় হওয়ার জন্যই নয়, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও জরুরি। এই দুটিকে এখানে যেভাবে একসুতায় গাঁথা হয়েছে, তা দুর্দান্ত।’

জাভেদ ওমরের খেলোয়াড়ি জীবনের স্মৃতিচারণা করে তাঁর উদ্যোগের জন্য শুভকামনা জানান সাংবাদিক মোস্তফা মামুন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক ক্রিকেটার হাসিবুল হোসেন, হকি তারকা মামুন উর রশিদ ও ক্রীড়া সাংবাদিক এম এম কায়সার। অসংখ্য টেলিভিশন ক্যামেরা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক তো ছিলেনই।
অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে জাভেদ ওমরের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট জাভেদওমর ডটকমের (www.javedomer.com) উদ্বোধন করা হয়। যেখানে ‘জাভেদ ওমর ইনিশিয়েটিভ’-এর বিস্তারিত পাওয়া যাবে। জাভেদের খেলোয়াড়ি জীবনের নানা অর্জন, সাফল্য, রেকর্ডও আছে সেখানে।

আরও পড়ুন