২য় দিন শেষে
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৫৯ ওভারে ৫৩১
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫ ওভারে ৫৫/১
হিসাবটা পরিষ্কার। চট্টগ্রাম টেস্ট বাঁচাতে হলে প্রথম ইনিংসে গড়তে হবে রানের পাহাড়। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৫৩১ রানের জবাবটা বড় রান করেই দিতে হবে। বাংলাদেশ তা করতে পারবে তো? নিতে পারবে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং-স্বর্গের সুবিধা? দিনের খেলা ঘণ্টা দেড়েক বাকি থাকতে এই কৌতূহল জাগিয়ে ব্যাটিংয়ে নামলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে উইকেটের চরিত্র আরও ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতেও সময় নেননি তাঁরা।
তবে ওটুকু সময়টা আলাদা করে নিলেও শেষ হাসিটা শ্রীলঙ্কার। বাংলাদেশকে উইকেট না হারিয়ে সময়টা পার করতে দেননি লঙ্কান পেসার লাহিরু কুমারা। ১৩তম ওভারে ফুল লেংথ থেকে ভেতরে ঢোকানো দারুণ এক বলে মাহমুদুলকে বোল্ড করেন তিনি। ৪২ বলে ৩ চারে ২১ রানে মাহমুদুল আউটের মাধ্যমে ভাঙে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটি। শেষ পর্যন্ত ১৫ ওভারে ১ উইকেটে ৫৫ রানে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। জাকির ২৮ রানে অপরাজিত, নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলাম শূন্য রানে। শ্রীলঙ্কা এগিয়ে আছে ৪৭৬ রানে।
আজ দিনের শুরুর আলোচনাটা ছিল অন্য রকম। সাগরিকার ব্যাটিং–স্বর্গে ৪ উইকেটে ৩১৪ রানে দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কার ইনিংস কতটা দীর্ঘ হবে, এ নিয়েই ছিল যত কৌতূহল। প্রথম দিনের মতো আজও উইকেট নিষ্প্রাণ, কোনো ঝুঁকি না নিলে মনে হচ্ছিল না কেউ এই উইকেটে আউট হতে পারেন। এমন উইকেটে যে ধরনের ব্যাটিং করা দরকার, লঙ্কানরা ঠিক তা–ই করেছেন।
প্রায় সারা দিনই তাদের রান রেট ছিল সাড়ে তিনের আশপাশে। লঙ্কানদের এমন হিসেবি ব্যাটিংয়ের পথটা সুগম করেছে বাংলাদেশের হতশ্রী ফিল্ডিং। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসের পর চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনের মতো ক্যাচ ফেলার রোগটা ভুগিয়েছে আজও। যা কাজে লাগিয়ে অর্ধশত করেছেন ছয় লঙ্কান ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে তিনজনের রান ছাড়িয়েছে আশির ঘর। তাতেই প্রথম ইনিংসে ৫৩১ রানের পাহাড় গড়েছে লঙ্কানরা। কোনো ব্যাটসম্যানের শতক ছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি।
কিন্তু দিনটা অন্য রকম হতে পারত। সকালের মেঘলা আবহাওয়ায় বাংলাদেশ দলের পেসাররা সুযোগ সৃষ্টি করেও উইকেটের দেখা পাননি। দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদের বল বেশ কয়েকবার দুই লঙ্কান ব্যাটসম্যানের ব্যাটের বাইরের কানা ঘেঁষে কিপারের গ্লাভসে যায়। দুবার ব্যাটে লাগলেও তা পড়েছে স্লিপ ফিল্ডারের সামনে।
দিনের প্রথম ব্রেকথ্রুটা এসেছে সাকিব আল হাসানের সৌজন্যে। ১০৬তম ওভারে সাকিবের বলে কট বিহাইন্ড হন চান্ডিমাল। আউট হওয়ার আগে যিনি করেছেন ১০৪ বলে ৫৯ রান। উইকেট হারালেও রানের গতি ঠিক রাখেন ধনাঞ্জয়া ও মেন্ডিস।
দুজনের জুটি ভাঙে মধ্যাহ্নবিরতির পরই। সকাল থেকেই দারুণ বোলিং করে যাওয়া খালেদ ১১৯তম ওভারে ভালো লেংথ থেকে বল ভেতরে এনে ধনাঞ্জয়াকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন। একই স্পেলে সদ্য ক্রিজে আসা প্রবাত জয়সুরিয়াকেও আউট করার সুযোগ ছিল। কিন্তু জয়াসুরিয়ার স্লিপে তুলে দেওয়া ক্যাচ নাজমুল, জাকির ও শাহাদাত মিলেও ধরতে পারেননি।
প্রবাত তখন ৬ রানে। ২৩ রানে আবার প্রবাতকে সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। এবার তাইজুলের বলে কট বিহাইন্ডের সুযোগ হাতছাড়া করেন লিটন দাস। শেষ পর্যন্ত ২৮ রানে প্রবাতকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন সাকিব। ততক্ষণে মেন্ডিস ও প্রবাত মিলে খেলে ফেলেন ১৪০ বল, রান যোগ করেন ৬৫।
উইকেট পতনের পর আরও এক বোলার বিশ্ব ফার্নান্ডোকে নিয়ে সেশনের বাকি সময়টা পার করে দেন মেন্ডিস। জীবন পেয়েছেন তিনিও। তাইজুলের বলে ব্যক্তিগত ৬০ রানের সময় ডিপ মিডউইকেটে মেন্ডিসের ক্যাচ ফেলেছেন হাসান। সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসিতা ফার্নান্ডো ও লাহিরু কুমারার সঙ্গে দুটি ২১ রানের জুটি গড়েন মেন্ডিস। নিজে পৌঁছে যান নব্বইয়ের ঘরে। দুর্ভাগ্য, শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফার্নান্ডো শূন্য রানে রানআউট হলে মেন্ডিসকে ৯২ রানে অপরাজিত থাকতে হয়।