শামার জোসেফ: গায়ানার নিভৃত গ্রাম থেকে স্বপ্নের টেস্ট অভিষেক

ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই স্টিভেন স্মিথের স্বপ্নের উইকেট পেয়েছেন শামার জোসেফএএফপি

গায়ানার গ্রাম বারাকারা থেকে সবচেয়ে কাছের শহরে যেতেও নৌকায় লাগে ছয় ঘণ্টা। ২০১৮ সালের অক্টোবরের আগে সে গ্রামে ইন্টারনেট ছিল না, যে সময়ের মধ্যে স্টিভেন স্মিথের টেস্ট সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছিল ২২টি। সেই স্মিথের বিপক্ষে অ্যাডিলেডে যখন ক্যারিয়ারের প্রথম বলটি করতে গেলেন বারাকারার ছেলে শামার জোসেফ, দৌড়ে গিয়েও বলটা ছুড়তে পারলেন না। নিজের প্রিয় ব্যাটসম্যান স্মিথ, তাঁর বিপক্ষে ওই বলটি করতে গিয়ে এতটাই স্নায়ুচাপ পেয়ে বসেছিল বছরখানেক আগেও নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করা ২৪ বছর বয়সীকে।

এরপর যা ঘটল, সেটিকে স্বপ্ন ছাড়া আর কী বলবেন! অফ স্টাম্পের বাইরের বলটিতে খোঁচা দিলেন ক্যারিয়ারে প্রথমবার ইনিংস ওপেন করতে আসা স্মিথ, ক্যাচ গেল আরেক অভিষিক্ত জাস্টিন গ্রিভসের কাছে। জোসেফ যেন হয়ে উঠলেন উসাইন বোল্ট, তাঁকে তখন থামাবেন কে! ইতিহাসের ২৩তম ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেট পেয়ে গেলেন জোসেফ। পরে বলেছেন, পারলে ছুটতে ছুটতে গ্যালারিতেই উঠে যেতেন!

স্মিথের উইকেট যে জোসেফের স্বপ্নের সীমাকেও ছাড়িয়ে গেছে, ‘ড্রেসিংরুমে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তাদেরকে বলেছি, আমি প্রথম বলেই উইকেট পাব। তবে জানতাম না এটি স্টিভ স্মিথ হবে। যখন থেকে ডাক পেয়েছি, অনেকেই আমাকে বলেছে, “আমি চাই স্টিভ স্মিথের উইকেট নাও, আমি চাই স্টিভ স্মিথের উইকেট নাও”। সবাই স্টিভ স্মিথকে নিয়েই বলেছে।’

স্মিথকে ফেরানোর পর তাঁর নাকি মনে হচ্ছিল, যেকোনো ব্যাটসম্যানকেই এরপর আউট করতে পারবেন তিনি
এএফপি

কীভাবে সে উইকেট পেলেন, জোসেফ ব্যাখ্যা করেছেন তা–ও, ‘আমি স্টিভ স্মিথকে স্রেফ ভালোবাসি। তার কয়েকটি টেস্ট পুনরায় দেখেছি। তার একটা দুর্বলতা আছে। আমি শুধু বলেছি, শুধু অফ স্টাম্পের শীর্ষে আঘাত করতে হবে। কারণ, সে এমন একজন ব্যাটসম্যান, যে অনেক নড়াচড়া করে। সে চাইবে আপনি যেন লাইন বদলে ফেলেন। আমি শুধু মৌলিক ব্যাপারেই থেকেছি, অফ স্টাম্পের মাথায় তাক করেছি। একটু বেরিয়ে যাওয়ার মতো মুভমেন্ট পেয়েছি, তাতেই ব্যাটের কানায় লেগেছে।’

জোসেফ ৬ ওভার বোলিং করে নিয়েছেন আরেকটি উইকেট। সে ব্যাটসম্যানের নাম মারনাস লাবুশেন বলে সে উইকেটও কম মূল্যবান নয়। তবে সেটিও স্মিথেরটির মতোই ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জোসেফের সরাসরি উত্তর, ‘না, মোটেও না। স্টিভ স্মিথের উইকেট পাওয়াই সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।’

আরও পড়ুন

স্মিথকে ফেরানোর পর তাঁর নাকি মনে হচ্ছিল, যেকোনো ব্যাটসম্যানকেই এরপর আউট করতে পারবেন তিনি। কদিন আগেও নিজের গ্রামে লেবু, পেয়ারা দিয়ে বোলিং করা জোসেফ যেমন বলেছেন, ‘সারা জীবন এটি মনে রাখব। আসলে একটা ছবি নিয়ে ঘরে টাঙাব।’

এ টেস্ট শুরুর আগেও স্থানীয় এক দোকানে গিয়ে আর্মগার্ড কিনে এনেছেন, কেউ তাঁকে চিনতেও পারেননি। পেশাদার ক্যারিয়ারেই এর আগে মাত্র ৯টি ম্যাচ খেলা জোসেফকে চিনবেনই–বা কে! তবে আজকের দিনের পর এখন অনেকেই চিনবেন তাঁকে। ২ উইকেট নেওয়ার আগে ১১ নম্বরে নেমে তিনি খেলেছেন ৩৬ রানের ইনিংস, অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো ব্যাটসম্যানের এ পজিশনে যেটি সর্বোচ্চ।

আরও পড়ুন

জোসেফের আশা, রাত জেগে বারাকারার মানুষ তাঁর এ পারফরম্যান্স দেখেছেন। নিজ গ্রামকে নিয়ে পরে বলেছেন, ‘আমি জানি সেখানে সমর্থন দারুণ ও অসাধারণ আমার জন্য। এখান থেকেই অনুভব করতে পারি। আমি বারাকারার জন্য আসলে কত কিছু যে করতে চাই। যখন চাই, তখন হয়তো হবে না। তবে আমি জানি, ভবিষ্যতে সেখানে গিয়ে তাদের জন্য অনেক কিছু করব, কারণ তারা আমাকে সব সময়ই সমর্থন দিয়ে এসেছে। লোকে আপনাকে সমর্থন দিলে, যা করতে ভালোবাসেন, সেটি করে যেতে উৎসাহ জোগালে—এসব আমার জন্য দুর্দান্ত, আমার ক্যারিয়ার নিয়ে যেতে দারুণ।’

বারাকারা নিশ্চয়ই দেখেছে তাদের ছেলের এমন স্বপ্নের পারফরম্যান্স!