পরীক্ষা–নিরীক্ষা নয়, সিরিজ জিততেই আজ মাঠে নামবেন লিটনরা
মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের পুরোটা পথেই লম্বা একটা লাইনই লেগে গেল যেন। কিটব্যাগ টানতে টানতে এক–দুজন করে নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটাররা অনুশীলনে গেলেন রীতিমতো সিরিয়াল ধরে। মাঝপথে তাঁদের মেটাতে হলো সাক্ষাৎকারের আবদার— ওপেনার ম্যাক্স ও’ ডাউড তো নিজেই হয়ে গেলেন সাংবাদিক! সংবাদ সম্মেলনে সতীর্থ নোয়াহ ক্রসকে প্রশ্নও করলেন। চনমনে ডাচদের দেখে বোঝার উপায় নেই, আগের দিন প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে স্রেফ উড়ে গেছে তারা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও চনমনে আছেন কি না, তা বোঝার উপায় ছিল না কাল। তাঁদের অবশ্য তা থাকারই কথা। পরশু প্রথম ম্যাচ জেতার পর আজ সিলেটে তিন ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে নেদারল্যান্ডসকে হারালে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয় সম্পন্ন হয়ে যাবে। ম্যাচটা সেই অর্থে গুরুত্বপূর্ণই। তবে দল জিতেছে বলে বাংলাদেশের হয়ে যাঁরা খেলেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই থেকেছেন বিশ্রামে।
প্রথম ম্যাচের একাদশের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়েই অনুশীলনে এসেছিলেন কোচিং স্টাফের সদস্যরা। সেখানেও অবশ্য সিরিয়াসনেস ছিল কমই। নুরুল হাসানকে বোল্ড করে দেওয়ার পরই যেমন সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন এসে উচ্ছ্বাস নিয়ে হাত মিলিয়েছেন শামীমের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল কি না, তা যদিও দূরে দাঁড়িয়ে বোঝার উপায় নেই।
বাংলাদেশের পরের চ্যালেঞ্জ হলো এশিয়া কাপ। এই টুর্নামেন্টের আগের নেদারল্যান্ডস সিরিজে তাই ঘুরেফিরেই আসছে প্রসঙ্গটা—কিন্তু অধিনায়ক–প্রধান কোচের পথ ধরেই কাল হেঁটেছেন সালাহউদ্দীনও। পরের দুটি ম্যাচে বাংলাদেশের ভাবনায় ভিন্নভাবে নিজেদের পরখ করে নেওয়ার ভাবনা থাকবে কি না, এমন প্রশ্নে তাঁর উত্তর, ‘এটা আসলে পরীক্ষা–নিরীক্ষার জায়গা নয়। এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। জেতার জন্য যে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার, আমরা সেটাই নেওয়ার চেষ্টা করব।’
বাংলাদেশের হাতে সময়ও খুব বেশি নেই। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজ শেষের এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু এশিয়া কাপের লড়াই। প্রায় মাসখানেকের প্রস্তুতির পর এই সিরিজ—এশিয়া কাপের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্টি আছে সহকারী কোচ সালাহউদ্দীনের। তবে তিনি জোর দিচ্ছেন উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখার দিকে, ‘দলের উন্নতি কখনোই থেমে থাকবে না। এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একটা সিরিজ বা এশিয়া কাপই আমাদের শেষ নয়। কিন্তু এশিয়া কাপে আমাদের ভালো খেলতে হবে, তা–ও আমরা জানি। সেটা মনের ভেতরে আছে।’
উন্নতি কথাটা বরাবরই প্রচলিত বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ভালো কিংবা মন্দ—সবকিছুর পরই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মুখে নিয়মিতই শোনা যায় তা। তবে সালাহউদ্দীনের কাছে এখন উন্নতির তাড়নার প্রমাণও আছে। যার একটি কাল তিনি দিয়েছেন, ‘ক্রিকেটারদের অনেকে এখন নিজের টাকা খরচ করে পুষ্টিবিদ রাখে। তারা ফিটনেস নিয়ে অনেক সচেতন।’
আজ নেদারল্যান্ডসকে হারাতে পারলে টি–টোয়েন্টি সংস্করণে টানা তিন সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। আলাদা করে কেউ দৃষ্টি তাঁর দিকে কেড়ে নিচ্ছেন না—প্রয়োজনের সময় এগিয়ে আসছেন আলাদা আলাদা ক্রিকেটার। বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে দেখা যাচ্ছে দল হয়ে খেলার ছাপ। এমন ধারাবাহিকতা ধরে রাখা বাংলাদেশ কি এখন ছন্দের চূড়ায়?
সালাহউদ্দীনের উত্তর, ‘আমরা কখনোই সন্তুষ্ট হতে পারি না। কারণ, প্রতিদিনই উন্নতি করতে হবে। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনেক কঠিন। প্রতিটি মুহূর্তে খেলার ধরন–চিন্তাভাবনায় চ্যালেঞ্জ সব সময় আসতেই থাকে।’
বাংলাদেশের ছন্দ ভেঙে দিতে মরিয়া চেষ্টা থাকবে নেদারল্যান্ডসেরও। মুখে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা যতই অস্বীকার করুন, এশিয়া কাপের আগে নিজেদের পরখ করে নেওয়ার শেষ সুযোগ তো এ সিরিজই। একাদশেও তাই পরিবর্তন এনে নুরুল হাসান–মোহাম্মদ সাইফউদ্দীনদের দেখা হতে পারে।
ডাচদের জন্য সে জায়গায় মুখ্য কেবল সিরিজ বাঁচানোই। ওই বিশ্বাসটা তাঁদের দলের ভেতর ভালোভাবেই আছে বলে জানিয়েছেন কাল দলটির প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা ব্যাটসম্যান নোয়াহ ক্রস, ‘আমাদের দলে ম্যাচ জেতার বিশ্বাস আছে। গত (পরশু) রাতের ম্যাচ থেকে আমরা ভালোভাবে শিক্ষা নিয়েছি। আমরা সত্যিই এটা বিশ্বাস করি যে আমাদের সেরা ক্রিকেটটা বাংলাদেশকে হারাতে সক্ষম। তাই সিরিজ জিততে না পারার কোনো কারণ নেই।’