টেস্ট ক্রিকেট থাকবে কি—উত্তর ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজে

ওভালে অবিশ্বাস্য জয়ের পর ক্যামেরার সামনে ভারতের ক্রিকেট দলএএফপি

পাঁচটি টেস্ট, মোট ২৫ দিনের খেলা। কিন্তু সবচেয়ে নাটকীয়, সবচেয়ে রোমাঞ্চকর এবং সবচেয়ে উত্তাপ ছড়ানো মুহূর্তটা যে একেবারে শেষ দিনের জন্য জমানো ছিল, কে জানত! দুর্দান্ত এক সিরিজের কী অবিশ্বাস্য সমাপ্তি! আহ্‌, টেস্ট ক্রিকেট, এর চেয়ে রোমাঞ্চকর কিছু আদৌ কি হতে পারে!

ওভাল টেস্টটা প্রায় ইংল্যান্ডের মুঠোয় চলে গিয়েছিল। অন্তত চতুর্থ দিন শেষেও তা-ই মনে হচ্ছিল। কিন্তু কী দারুণভাবেই না সেটা ছিনিয়ে নিল ভারত। বা ছিনিয়ে নিলেন মোহাম্মদ সিরাজ!

আরও পড়ুন

শেষ দিনে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩৫ রান, ভারতের ৪ উইকেট। কিংবা বলা যায় ভারতের দরকার ছিল অলৌকিক কিছু! কিন্তু দিনের শুরুটা আভাস দিয়েছিল অন্য কিছুর। সকালের হালকা রোদে ইংল্যান্ড শুরু করেছিল টানা দুটি বাউন্ডারি দিয়ে। ম্যাচ থেকে ভারত একেবারে ছিটকে গেছে বলেই মনে হচ্ছিল তখন। ফেরালেন সিরাজ। দারুণ ছন্দে থাকা এই পেসার প্রথমে ফেরালেন জেমি স্মিথকে, এরপর এলবিডব্লু করলেন ওভারটনকে।

যতটা সম্ভব লড়াই করেও জিততে না পারলে কেমন লাগে তা জিজ্ঞেস করতে পারেন ইংল্যান্ডের গাস অ্যাটকিনসন ও ক্রিস ওকসকে
এএফপি

ইংল্যান্ডের জন্য সেই মুহূর্ত থেকে প্রতিটি রান করা হয়ে গেল এক একটা যুদ্ধ জয়ের সমান। এরপর জশ টাংও। গাস অ্যাটকিনসনের সঙ্গে শেষ ভরসা তখন ক্রিস ওকস। দলের জন্য দরকার হলে জীবন দিয়ে দেবেন, এ কথা আগের দিনই বলেছিলেন। ভাঙা কাঁধ নিয়ে এক হাতে ব্যাটিং করতে নেমে বোঝালেন, কথাটা তিনি এমনি এমনি বলেননি।

কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না ইংল্যান্ডের। সিরাজের নিখুঁত ইয়র্কারে আছড়ে পড়ল অ্যাটকিনসনের অফ স্টাম্পের গোড়ায়! খেলতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ছুঁতেও পারলেন না। সিরাজ দুই হাত তুলে তাকালেন আকাশের দিকে। চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৪ রানের লক্ষ্যে নামা ইংল্যান্ড থেমে গেল ৩৬৭ রানে। ৬ রানের জয়ে সিরিজে ২-২ সমতা ফেরাল ভারত।

আরও পড়ুন

সবার আগে সিরাজের দিকেই ছুটে গেলেন ভারতের সবাই। ধ্রুব জুরেল গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন সিরাজকে। বাকিরা ছুটে এলেন আউটফিল্ড থেকে। কেউ হাসছেন, কেউ কাঁদছেন—এই একটা মুহূর্ত যেন পুরো সিরিজেরই প্রতিচ্ছবি।

উদ্‌যাপনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে ভারত অধিনায়ক শুবমান গিল একটু থেমে প্রশংসা করলেন ক্রিস ওকসের সাহসের। কাঁধ ভাঙা অবস্থায় ব্যাট করতে নেমেছিলেন—এক হাতে, যে হাতে ব্যাট করেন না, সেই হাতে! সোয়েটারের ভেতর বাঁ হাত ঢোকানো। এ দৃশ্যও দীর্ঘদিন থেকে যাবে দর্শকদের মনের ফ্রেমে।

স্লিংয়ে এক হাত ঝুলিয়ে সেটা সোয়েটারের ভেতরে রেখে ওকসের ব্যাটিংয়ে নামার মুহূর্ত
এএফপি

টেস্ট ক্রিকেট টিকে থাকবে কি না, কিছুদিন পরপরই এমন প্রশ্ন ওঠে। উত্তর হতে পারে এই সিরিজটা। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য যদি বিজ্ঞাপন বানাতে হয়, ওভালের এই ম্যাচটা থেকেই হতে পারে তার পোস্টার। ম্যাচ শেষে আবেগ সামলাতে সামলাতে ধরা গলায় সেই কথাটা বললেন ভারতের ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুলও, ‘টেস্ট ক্রিকেট থাকবে কি না, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়ে গেছে।’

সিরিজের ফলটাও যেন একটা প্রতীকী ছবি। ইংল্যান্ড-ভারত কেউ জিতল না, জিতে গেল টেস্ট ক্রিকেট। এমন নাটক, এমন লড়াই, এমন আবেগ—এটাই তো টেস্ট ক্রিকেটের চিরন্তন সৌন্দর্য।