মেসির উদাহরণ টেনে লারার প্রশ্ন, তারা কি সত্যিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চায়
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট পতনের দিকে—এই আলোচনা নতুন না। তবে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে ৪ অক্টোবর আহমেদাবাদে প্রথম টেস্টে ভারতের কাছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস ১৪০ রানে হারের পর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রোস্টন চেজ হারের পর ‘অবকাঠামোগত সমস্যা’ এবং ধারাবাহিকভাবে ‘আর্থিক সমস্যা’র কথা বলেছিলেন।
এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি এবং সাবেক অধিনায়ক ব্রায়ান লারাও মেনে নিলেন, ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট ক্রমশ নিম্নমুখী হওয়ার পেছনে রয়েছে অর্থ ও প্রযুক্তির অভাব। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সির প্রতি আরেকটু ভালোবাসা ঢেলে আরও ভালোভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আহ্বানও জানিয়েছেন লারা। পাশাপাশি একটি প্রশ্নও তুলেছেন কিংবদন্তি, ‘তারা (খেলোয়াড়) কি সত্যিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চায়?’
কিংস্টনে গত জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর আগস্টে ক্লাইভ লয়েড, লারা, ডেসমন্ড হেইন্স, শিবনারায়ণ চন্দরপলদের মতো ক্যারিবিয়ান গ্রেটদের নিয়ে একটি কমিটি করে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সিডব্লুআই)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে টেনে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও সেসব বাস্তবায়নের রূপরেখাও তৈরি করে সেই কমিটি। লারা ও চেজ দুজনেই এই কমিটির অংশ।
মুম্বাইয়ে গত মঙ্গলবার সিয়াট ক্রিকেট রেটিং অ্যাওয়ার্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের পতন নিয়ে কথা বলেন লারা। টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস খেলার রেকর্ডধারী কিংবদন্তির মুখেই শুনুন সেসব কথা, ‘কোনো কিছু করতে চাইলে সেটা করার সামর্থ্য থাকতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু একই সময়ে আমি রোস্টন চেজ ও বাকিদের বলতে চাই, তারা কি হৃদয়ে সত্যিই ক্রিকেট লালন করে? তারা কি সত্যিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চায়? এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাতে পথ খুঁজে নেওয়া যায়।’
লারা এরপর নিজেদের সময় ও অতীতের উদাহরণ টেনে ব্যাখ্যা করেন, ‘আমি বোঝাতে চাচ্ছি, ৩০ থেকে ৪০ বছর আগেও আমাদের উন্নত সুযোগ-সুবিধা ছিল না। ভিভ রিচার্ডস ভালো পিচে অনুশীলন করেননি। আমাদেরও একই কাজ করতে হয়েছে, একই সমস্যার ভেতর দিয়ে উঠে আসতে হয়েছে, তবে প্যাশনটা আলাদা ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার প্যাশনটাই ছিল অন্য রকম। তাই আমি তরুণ খেলোয়াড়দের বলব, এটা বুঝতে যে সুযোগটা দারুণ।’
লারা মনে করেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ আয়ের হাতছানিতে সাড়া দেওয়ার জন্য ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের দোষারোপ করাটা ঠিক হবে না। বরং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে হবে বলে মনে করেন লারা। খেলোয়াড়দের জন্য অর্থ আয়ের বিষয়টি লোভনীয় করতে পারলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন ৫৬ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি।
আর্জেন্টিনায় তাকান, মেসি বেড়ে উঠেছে ইউরোপে, কিন্তু খেলে আর্জেন্টিনার হয়ে। সে কিন্তু বার্সেলোনা, পিএসজিতে খেলেছে এবং তাকে (খেলার) অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার অনেক খেলোয়াড়ই এটা করে। তারা দেশের হয়েও গর্ব নিয়ে খেলে।ব্রায়ান লারা
লারার ভাষায়, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাইরে ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়া একজন খেলোয়াড়কেও আমি দোষ দিতে পারি না। কারণটা অসমতা—পাঁচ-ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার বিষয়টি (আর্থিক দিক থেকে) আলাদা।’ এ কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দল তাদের সেরা খেলোয়াড়দের গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে পাচ্ছে না বলে মনে করেন লারা, ‘ভারতের বিপক্ষে সিরিজে, আমরা দুনিয়ার সেরা দলের বিপক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই। সে জন্য সেরা খেলোয়াড়দের দলে থাকতে হবে। আপনি চাইবেন না (তখন) নিজের সেরা খেলোয়াড়েরা আমেরিকা কিংবা বিশ্বের অন্য কোথাও থাকুক।’
আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি লিওনেল মেসির উদাহরণ টেনেছেন লারা। মেসির ক্লাব ক্যারিয়ার আর্জেন্টিনার বাইরে, কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে খেলতে সব সময় উন্মুখ থাকেন তিনি। লারা এ নিয়ে বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনায় তাকান, মেসি বেড়ে উঠেছে ইউরোপে, কিন্তু খেলে আর্জেন্টিনার হয়ে। সে কিন্তু বার্সেলোনা, পিএসজিতে খেলেছে এবং তাকে (খেলার) অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার অনেক খেলোয়াড়ই এটা করে। তারা দেশের হয়েও গর্ব নিয়ে খেলে।’
অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের উদাহরণ টেনে লারা আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড এটা করতে পেরেছে। দেশের প্রতি তাদের খেলোয়াড়দের আনুগত্য আছে। আমাদের কারও প্রতি আঙুল না তুলেই এই কাজটা করতে হবে...যদি সত্যি সত্যিই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে হৃদয়ে ধারণ করেন, তাহলে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাবেন।’