গ্রিন-ক্যারির রেকর্ড জুটিতে অস্ট্রেলিয়ার রোমাঞ্চকর জয়

৯২ বলে ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন গ্রিনএএফপি

২০৭ রানে যখন লকি ফার্গুসনের বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দিলেন মিচেল স্টার্ক, জয়ের জন্য তখনো অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ২৬ রান, বাকি মাত্র ২ উইকেট। তবে তাদের আশা হয়ে ছিলেন ক্যামেরন গ্রিন। পায়ের মাংসপেশির চোটে বেশ কিছুক্ষণ ফিজিওর শুশ্রূষা নিতে হলো, এরপর আবার নামল বৃষ্টিও। অ্যাডাম জাম্পাকে নিয়ে অবশ্য ঠিকই অস্ট্রেলিয়াকে রোমাঞ্চকর এক জয় এনে দিলেন এ অলরাউন্ডার। অ্যালেক্স ক্যারির সঙ্গে রেকর্ড জুটির পর জাম্পার সঙ্গে নবম উইকেটে গ্রিনের ২৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২৩৩ রানের লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়া টপকে যায় ২ উইকেট ও ৩০ বল হাতে রেখেই।

২৩২ রান তাড়ায় ৪৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর অস্ট্রেলিয়ার ঘুরে দাঁড়ানোর আশা সম্ভবত খুব কম সমর্থকই করেছিলেন। তবে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের মঞ্চটা তৈরি করেন ক্যারি ও গ্রিন। তাঁদের রেকর্ড জুটিতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে প্রায় হারা ম্যাচে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। তবে এক মুহূর্তের ঝড়ে শেষটা প্রায় শুরুর বিন্দুতে মিলেই গিয়েছিল। ২০২ থেকে ২০৭ রানে যেতেই ৩ উইকেট হারায় স্বাগতিকেরা। তবে এই ঝড়েও টলে যাননি গ্রিন, অপরাজিত থাকেন ৯২ বলে ৮৯ রান করে।

আরও পড়ুন

২০০৪ সালের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি কেয়ার্নসে। ১৮ বছর পর নতুন করে ক্রিকেটে ফেরায় উইকেটের চরিত্র বোঝাটাও দুরূহ ছিল। তবু ২৩৩ রানের লক্ষ্যটা খুব বড় ছিল না অস্ট্রেলিয়ার সামনে। তবে কেয়ার্নসের ক্রিকেটে ফেরাটাকে উদ্‌যাপনের উপলক্ষ বানিয়ে নেন কিউই ফাস্ট বোলাররা। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি ও লকি ফার্গুসনের গতিময় বোলিংয়ের কোনো জবাবই যেন ছিল না অস্ট্রেলীয় টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। ১২ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় স্বাগতিকদের ব্যাটিং লাইনআপ।

ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ক্যারি (বাঁয়ে) ও গ্রিন যোগ করেন ১৬৩ বলে ১৫৮ রান
এএফপি

ডেভিড ওয়ার্নার ছাড়া প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। তবে সে পরিস্থিতিতেও দারুণ ব্যাটিংয়ে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছেন ক্যারি ও গ্রিন জুটি। বলের সঙ্গে সমানতালে রান তুলে দলকে টেনে নিয়েছেন তাঁরা। দুজন যোগ করেন ১৬৩ বলে ১৫৮ রান। ষষ্ঠ উইকেটে দেশের মাটিতে যেটি অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ, সব মিলিয়ে রানতাড়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অবশ্য দলীয় ২০২ রানে ক্যারি (৮৫ রান) ফিরে যাওয়ার পরের দুই ওভারে ম্যাক্সওয়েল ও স্টার্ককে হারিয়ে আবার চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। মধ্যে বৃষ্টি এসেও কিছুক্ষণ বাগড়া দেয়, তবে গ্রিন ও জাম্পা জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন।

আরও পড়ুন

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের শুরুটা হয়েছিল গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দুর্দান্ত এক ক্যাচ দিয়ে। মিচেল স্টার্কের বল মার্টিন গাপটিলের ব্যাটের কানায় লেগে ছুটে যাচ্ছিল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের দিকে। তবে বলকে গন্তব্যে পৌঁছাতে না দিয়ে বাঁ পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে ক্যাচ লুফে নেন ম্যাক্সওয়েল। ১০ রানে প্রথম উইকেট হারায় কিউইরা।

৪ উইকেট নেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল
এএফপি

দ্রুত উইকেট হারানোর পর কিউই ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন ডেভন কনওয়ে ও কেইন উইলিয়ামসন। তবে উইকেটে থিতু হয়েও রানের গতি বাড়াতে পারেননি এ দুই ব্যাটসম্যান। ব্যক্তিগত চল্লিশের ঘরে গিয়ে কাটা পড়েন দুজনই। দলীয় ৯১ রানে কনওয়ে (৪৬) ফেরেন অ্যাডাম জাম্পার বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ে। রিভিউও নষ্ট করেন তিনি।

আরও পড়ুন

কনওয়ে–উইলিয়ামসন জুটির পুনরাবৃত্তিই দেখা গেছে উইলিয়ামসন–টম ল্যাথাম জুটির ব্যাটিংয়ে। ধীরগতির ব্যাটিংয়েই দলকে এগিয়ে নেন এ দুজন। অবশ্য দুজনই থামেন ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে। ফিল্ডিংয়ের পর ম্যাক্সওয়েল বল হাতেও হয়ে ওঠেন বিপজ্জনক। কিউই মিডল অর্ডারকে একাই ধসিয়ে দেন তিনি। শুরুটা করেন ডিপ মিড উইকেটে উইলিয়ামসনকে (৪৫) ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যাচ বানিয়ে। এরপর ড্যারিল মিচেল (২৬), টম ল্যাথাম (৪৩) ও মাইকেল ব্রেসওয়েলকেও (৭) ফেরান তিনি।

৪১.৪ ওভারে ১৮৬ রানে ৪ উইকেট থেকে জশ হ্যাজলউডের তোপে নিউজিল্যান্ড আটকে যায় ৯ উইকেটে ২৩২ রানে। এ পেসার ৩ উইকেট নেন মাত্র ৩১ রান দিয়ে, ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন ম্যাক্সওয়েল।