সিরিজ জয়ের পরও রয়ে গেছে অনেক প্রশ্ন

সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশ দলশামসুল হক

সমালোচনা আর বিতর্কের মধ্যেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষটা হয়েছে জয়ের আনন্দে। তবে ২–১ ব্যবধানে জেতা এই সিরিজ শেষেও রয়ে গেছে অনেক প্রশ্ন, যেগুলো ওয়ানডে সংস্করণে বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। সেই দুশ্চিন্তা এমনকি দলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যেও আছে। যে সংস্করণে বাংলাদেশ দল ছিল সবচেয়ে সফল, সেটিতেই হঠাৎ ছন্দপতন কেন, তা খতিয়ে দেখার আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
দেড় বছরে ৪ সিরিজ পর গতকাল আবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেটিও ঘরের মাঠের পূর্ণ সুবিধা নিয়ে, যেখানে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল কালো মাটির স্পিন সহায়ক উইকেট। তিন ম্যাচের সিরিজে স্পিনারদের সর্বোচ্চ ৪৪ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড দেখেছে এই সিরিজ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পুরো ৫০ ওভার স্পিনারদের দিয়ে করিয়েও রেকর্ড করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল।

সিরিজ জয়ের পর হাসি ফুটেছে কোচ ফিল সিমন্সের মুখেও
প্রথম আলো

এই সিরিজের আগে টানা ৪ সিরিজে বাংলাদেশ দুবার আফগানিস্তান এবং একবার করে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হেরেছে। ওয়ানডেতে এই ছন্দপতনের পেছনে বোর্ডের ভুল পরিকল্পনাকে দায়ী করছেন অনেকে। অন্য দুই সংস্করণে ব্যস্ততার কারণে ওয়ানডে সংস্করণের দিকে হয়তো তাদের দৃষ্টিটা সেভাবে ছিলই না।
গত বছর ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের ৬ মাস পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। এরপর তিন মাস বিরতি দিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলে শারজায়। মাঝে ওয়ানডের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি তেমন হয়নি। এক সংস্করণ থেকে আরেক সংস্করণের ম্যাচ খেলতে নামার প্রক্রিয়াটাও ‘আদর্শ’ হয়নি। হাই পারফরম্যান্স ইউনিট আর বাংলাদেশ টাইগার্সের অনুশীলন ক্যাম্প ঠিকভাবে হতে পারেনি বৃষ্টির বাধায়। এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল ক্রিকেটারদেরও।

টি–টোয়েন্টি সিরিজের দল নিয়ে এমন ব্যাখ্যাই দিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন

খেলোয়াড়দের টানা খেলিয়ে একটু ক্লান্তই করে ফেলা হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও আছে। এশিয়া কাপ শেষ করে দেশে না ফিরেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছেন ক্রিকেটাররা। প্রায় দেড় মাস দেশের বাইরে থাকার ক্লান্তির মধ্যেই ঢাকায় ফিরে ৩ দিন পর নামতে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে। এটাকে খেলোয়াড়দের প্রতি একটু ‘অমানবিক’ আচরণ বলেই মন্তব্য করেছেন বিসিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। কারণ, শারীরিক ও মানসিকভাবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাননি ক্রিকেটাররা। আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ তো ছিলই না।

আরও পড়ুন

হঠাৎ করে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সংকটও সমস্যায় ফেলেছে বাংলাদেশকে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ভরসা হয়ে থাকা মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। তাঁদের জায়গায় যাঁরা এসেছেন, তাঁদের কেউ এখনো সেভাবে ধারাবাহিক হতে পারেননি। অবশ্য এটাও ঠিক, দীর্ঘ দেড় দশক জাতীয় দলে খেলা এই দুই ক্রিকেটারের শূন্যতা পূরণে বিকল্প তৈরি করতে আরও কিছুটা সময়ের প্রয়োজন।
অনেক প্রশ্ন রেখে ওয়ানডে সিরিজটা জিতে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা এখন তাকিয়ে ২৭ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রামে শুরু তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজের দিকে। দুই দলের ক্রিকেটাররা আজ চট্টগ্রামে পৌঁছেও গেছেন।
গতকাল টি–টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ঘোষিত দলে আছেন পাঁজরের চোট কাটিয়ে ফেরা অধিনায়ক লিটন দাসও। সর্বশেষ আফগানিস্তান সিরিজের দলে থাকা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও সৌম্য সরকার নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দলে।

আরও পড়ুন
চোট কাটিয়ে টি–টোয়েন্টি সিরিজে ফিরেছেন লিটন দাস
ইনস্টাগ্রাম

আফগানিস্তান সিরিজের দলে থাকলেও ভিসা না হওয়ায় আমিরাতে যাওয়াই হয়নি সৌম্যর। অর্থাৎ টি–টোয়েন্টি দলে ডাক পেয়েও না খেলেই বাদ পড়লেন তিনি। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন এর ব্যাখ্যায় প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আফগানিস্তান সিরিজে লিটনের বদলে সৌম্যকে নেওয়া হয়েছিল। এবার লিটন ফেরায় সে বাদ পড়েছে। আর আগের সিরিজে ১৬ জনের স্কোয়াড ছিল, তবে বিশ্বকাপে যেহেতু ১৫ জনের স্কোয়াড দিতে হবে; তাই এখন থেকে আমরা ১৫ জনের স্কোয়াডই দেব।’
জাতীয় ক্রিকেট লিগে খুলনা দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সৌম্য। তবে সাইফউদ্দিন এখনো জাতীয় দলের সঙ্গে চট্টগ্রামেই আছেন। তাঁকে ‘যেকোনো মুহূর্তে দরকার হতে পারে’ বিবেচনাতেই এই সিদ্ধান্ত। অনুশীলনের মধ্যে রাখতেই তাঁকে দলের সঙ্গে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ।

আরও পড়ুন