গিলের জয়ের আনন্দ, স্টোকসের আফসোস
ম্যাচ জিততে পারবেন, এই আত্মবিশ্বাস কি ছিল? ভারতের অধিনায়ক শুবমান গিলের উত্তর, হ্যাঁ ছিল।
হ্যারি ব্রুকেরও একই বিশ্বাস ছিল। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মাইকেল আথারটনকে বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস ছিল আজকের দিনে। দুজন ভালো ব্যাটসম্যান ছিল (ক্রিজে)। ভেবেছিলাম, সহজেই জিতব।’
আত্মবিশ্বাস তো তাঁর থাকতেই হবে। ওভাল টেস্ট জিততে আজ শেষ দিনে হাতে ৪ উইকেট রেখে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩৫ রান। ক্রিজে জেমি স্মিথের মতো স্বীকৃত ব্যাটসম্যার এবং জেমি ওভারটনের মতো অলরাউন্ডার, যিনি কিনা ব্যাটিংটাও ভালো করেন। এ অবস্থায় ব্রুকদের জয়ের আত্মবিশ্বাস না থাকাটাই বরং অস্বাভাবিক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ৬ রানে হারার পর এই টেস্ট না খেলা দলটির মূল অধিনায়ক বেন স্টোকস বলতে বাধ্য হলেন, ‘আমরা পারলাম না!’
দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে এই যেন আনন্দ-বেদনার বৈপরীত্য—এটাই তো ক্রিকেটের সৌন্দর্য, যেখানে আসল জয়ী আসলে টেস্ট ক্রিকেট। ২-২–এ ড্র হওয়া এ সিরিজের আজ শেষ দিনে ইংল্যান্ডের শেষ উইকেটটি পড়ার আগপর্যন্তও কেউ নিশ্চিত ছিলেন না, জিতবে কে!
যদিও পুরস্কার বিতরণীতে গিলের দাবি, জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই ফিল্ডিংয়ে নেমেছিল ভারত, ‘হ্যাঁ, আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। এমনকি গতকালই আমরা বুঝেছিলাম, ইংল্যান্ড চাপে ভুগছে। আমরা এই চাপটাই শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে চেয়েছি। চাপে পড়লে যা করতে চান না, সেটাই সবাই করে বসেন।’
পিছিয়ে থেকে সিরিজ ড্রয়ের আনন্দটা বোঝাতে গিয়ে দুই দলের জমজমাট লড়াইয়ের উদাহরণ টানলেন গিল, ‘গোটা সিরিজে দুই দল যেভাবে খেলেছে, প্রতিটি দিন সেটা চতুর্থ কিংবা পঞ্চম, কে জিতবে, সেটা কেউই জানত না...এর অর্থ হলো দুই দলই নিজেদের সেরা খেলাটা খেলেছে। তাই ভালো লাগছে যে শেষ পর্যন্ত জিততে পেরেছি।’
ওভাল টেস্টে ইংল্যান্ডের দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে একাই বোলিং করেছেন ৩০.১ ওভার, যেখানে তাঁর শিকার ৫ উইকেট। সিরাজকে নিয়ে গিল বলেন, ‘হ্যাঁ, সে অবশ্যই যেকোনো অধিনায়কের জন্য বড় পাওয়া। পাঁচটি টেস্টে প্রতিটি দিনে, প্রতিটি স্পেলেই সে নিজের সর্বস্ব নিংড়ে দিয়েছে। যেকোনো দল ও অধিনায়ক এমন খেলোয়াড় পেতে চান। তাকে দলে পেয়ে আমরা ভাগ্যবান।’
কাঁধের হাড় স্থানচ্যুত হওয়ায় অকেজো একটি হাত নিয়েই ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন ইংল্যান্ডের শেষ উইকেট ক্রিস ওকস। তাঁর প্রশংসায় সম্প্রচারকদের স্টোকস বলেন, ‘ব্যাটিংয়ে নামা নিয়ে ওকসের মনে কোনো প্রশ্ন ছিল না। ভাঙা পা কিংবা আঙুল নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামার খেলোয়াড় আছে আমাদের। দেশের হয়ে খেলতে কী প্রয়োজন, এটা তা বুঝিয়ে দেয়।’
সিরিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে স্টোকস বলেন, ‘গোটা সিরিজটাই ছিল দুর্দান্ত। প্রতিটি মুহূর্তেই আবেগ উপচে পড়েছে...এমনকি দ্বিতীয় ইনিংসে (খেলোয়াড়েরা) যে সাহস ও চেষ্টা সবাই দেখিয়েছে, সেটা অসাধারণ। গত পাঁচ দিন নিয়ে অনেক যদি-কিন্তু আছে, যেটা খেলাটির মহিমা বাড়িয়েছে, তবে ব্রেন্ডন (ম্যাককালাম) ও আমি শুধু চেয়েছিলাম, সবাই যেন নিজেদের সবটুকু নিংড়ে দেয়। টাং, অ্যাটকিনসন ও ওভারটন সেটাই করেছে।’
ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ম্যাচ শেষে স্কাই স্পোর্টসকে বলেন, ‘আমার দেখা কিংবা অংশ নেওয়া পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের মধ্যে এটাই সেরা। ছয় সপ্তাহের এই সিরিজে সবকিছুই ছিল।’