স্মিথের ব্যাটে বড় রানের পথে অস্ট্রেলিয়া

লর্ডস টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৮৫ রানে অপরাজিত স্টিভেন স্মিথরয়টার্স

বল ৫৫ ওভার পুরোনো। কিন্তু ইংল্যান্ড পেসাররা তখনো সিম মুভমেন্ট পাচ্ছিলেন। কখনো সুইংও। ধারাভাষ্যে নাসের হুসেইন তখন বলছিলেন, ‘এটা যদি ইংল্যান্ড না হয়ে অস্ট্রেলিয়া হতো, তাহলে বল গুলির মতো সোজা যেত।’ লর্ডসে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন বোলিংয়ের জন্য আদর্শ কন্ডিশন পেয়েও অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলতে পারেনি ইংলিশরা।

চার পেসার ও বেন স্টোকসের সাজানো ইংলিশ বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে সারা দিন অস্ট্রেলিয়ার রান রেট ছিল ৪ এর আশপাশে। দিন শেষে তাদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩৩৯ রান। ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের পর ফিফটি করেছেন স্টিভ স্মিথ ও ট্রাভিস হেডও। স্মিথ ১৪৯ বল খেলে ৮৫ রানে অপরাজিত আছেন। ৩৪ বলে ১১ রানে খেলছেন অ্যালেক্স ক্যারি। পেস বোলারদের জন্য আদর্শ কন্ডিশনে অফ স্পিন করে ইংল্যান্ডের হয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন জো রুট। পেসার জস টাংয়ের শিকারও দুই উইকেট।

সবুজ ঘাসের লর্ডসে টসে জিতে অস্ট্রেলীয়দের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান স্টোকস। মেঘলা আকাশের নিচে অ্যান্ডারসন-ব্রডের জুটি দাপট দেখাবে, প্রত্যাশা ছিল এমনই। কিন্তু নতুন বলের চ্যালেঞ্জটা দারুণভাবে উতরে যান ওয়ার্নার ও উসমান খাজা। ওয়ার্নার স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন, খাজা খেলেছেন সময় নিয়ে। দুজনের জুটিতে এসেছে ৭৩ রান, যা মেঘলা কন্ডিশনে বিরাট ব্যাপার।

চার বলের মধ্যে ট্রাভিস হেড ও ক্যামেরন গ্রিনকে আউট করেন জো রুট
রয়টার্স

তবে উইকেটে ২০ ওভারের বেশি সময় কাটিয়েও থিতু মনে হয়নি দুই অস্ট্রেলীয় বাঁহাতিকে। বল নিয়মিত দুজনের ব্যাটের পাশ ঘেঁষে গিয়েছে। ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল পড়েছে স্লিপের সামনে। এর মাঝে যা রান আসার তা এসেছে ওয়ার্নারের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে। খাজা খেলছিলেন সময় নিয়ে। ২৩.১ ওভারে এসে যার সমাপ্তি টানেন দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা টাং। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আসা টাংয়ের ওবল সিম ডেলিভারিটি ছেড়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন খাজা। কিন্তু সিমে হিট করে বল ভেতরে এসে স্টাম্প খুঁজে নেয়। বার্মিংহামে দুই ইনিংসেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করা খাজার এবারের ইনিংস থামে ১৭ রানে, বল খেলেছেন ৭০টি।

আরও পড়ুন

ওপেনিং সঙ্গীকে হারালেও রানের পেছনে ছুটছিলেন ওয়ার্নার। ফিফটি করে বড় ইনিংসের আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই টাংয়ের বোলিংয়ে ওয়ার্নারকেও থামতে হয়। সেটাও রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ভেতরে আসা বলে। ২৯.৫ ওভারে ফুল লেংথের সুইং মেশানো বল ভেতরে এসে ওয়ার্নারের স্টাম্প ভেঙে দেয়। ৮৮ বলে ৬৬ রানের দারুণ ইনিংসটি থামে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে।

দুই ওপেনারের গড়ে দেওয়া মঞ্চটা কাজে লাগাতে ভুল করেননি স্মিথ ও মারনাস লাবুশেন। এজবাস্টন টেস্টে অস্ট্রেলিয়া জিতলেও দুজনই ব্যর্থ ছিলেন। বিশেষ করে দুই ইনিংসে ০ ও ১৩ রান করা লাবুশেনের দিকে ছিল সবার চোখ। আজ অবশ্য লাবুশেন খেলেছেন নিজের চেনা ব্যাটিংটাই।

এজবাস্টনে তিনি শাফল করে অফ স্টাম্পের বাইরে চলে আসছিলেন। যে কারণে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ড্রাইভ করে টানা দুই ইনিংসে আউট হন তিনি। আজও লাবুশেন শাফল করেছেন। তবে সেটা অফ স্টাম্পের বাইরে নয়। ৫৪.২ ওভারে ওলি রবিনসনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে আউট হলেও কৌশল পাল্টে ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার তিন নম্বর ব্যাটসম্যান। তাঁর ৯৩ বলে ৪৭ রান স্মিথের সঙ্গে আরও একটি বড় জুটি (১০২) গড়তে সাহায্য করে।

৭৩ বলে ৭৭ রান করেন ট্রাভিস হেড
রয়টার্স

এজবাস্টনে রান পাননি ট্রাভিস হেডও। আজ অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের আক্রমণাত্মক রূপ দেখে লর্ডস। কাট আর পুল শটে ওয়ানডে মেজাজে রান করেছেন তিনি। ইংলিশ বোলাররা শর্ট বল করে তাঁকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটি কাজে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত জো রুটের অফ স্পিনে থামে হেডের বিস্ফোরক ইনিংস। ৭৪.২ ওভারে রুটের ফ্লাইট ও টার্ন মেশানো বলটি ক্রিজ ছেড়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন হেড। আউট হওয়ার আগে ৭৩ বল খেলে হেড যোগ করেন ৭৭ রান। ১৪টি চার ছিল এই বাঁহাতির ইনিংসে।

আরও পড়ুন

রুট অবশ্য সেখানেই থামলেন না। দুই বল পরেই ক্যামেরন গ্রিনকে আউট করেন তিনি। তবে রুটকে অনেকটা উইকেট উপহার দিয়েছেন গ্রিন। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা রুটের শর্ট বলটি মিড উইকেটে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন মিড অফে। সেখানে দাঁড়ানো অ্যান্ডারসন ক্যাচটা ধরেছেন হাসতে হাসতে।

তবে দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার হাসিটাই বেশি চওড়া মনে হবে। ৮৫ রানে অপরাজিত স্মিথ যে দ্বিতীয় দিন ইনিংসটাকে আরও বড় করতে চাইবেন, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। পেস সহায়ক লর্ডসে আরও ১০০ রান যোগ করতে পারলেই অনেকটাই এগিয়ে যাবে অস্ট্রেলীয়রা।

আরও পড়ুন