মুশফিকের মঞ্চে দাঁড়িয়ে লিটনের সেঞ্চুরি
লিটন দাসের রান তখন ৯১। ম্যাথু হ্যামফ্রিসের বল লং অনের ওপর দিয়ে তুলে মারলেন। বলটা উড়ে গিয়ে বাউন্ডারির ওপারে পড়তেই মুষ্ঠিবদ্ধ হাত হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন লিটন। নিজেকেই যেন তিনি বললেন, ‘শাবাশ!’
লিটনকে নিয়ে এমন দৃশ্য একটু অপরিচিত। তাঁর মধ্যে আবেগের ঝড় দেখা যায় কমই। তবু স্পিনারকে লং অন দিয়ে ছক্কা মারার তৃপ্তিটা তিনি উদ্যাপনই করলেন এভাবেই। দিনভর তাঁর শট অবশ্য আনন্দে ভাসিয়েছে দর্শকদের।
লিটন যখন উইকেটে আসেন, তখন সব উপলক্ষ ঘিরে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। কাল শেষ বিকেলে যখন সিঙ্গেলস নিয়ে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে থাকা মুশফিককে স্ট্রাইক দেন, গ্যালারি থেকে ভেসে এসেছে স্লোগান। লিটন নিজের দায়িত্বটা পালন করেছেন ঠিকঠাক।
আজও যখনই সুযোগ পেয়েছেন, মুশফিককে দিয়েছেন পাদপ্রদীপের আলো। শততম টেস্টে তাঁর শতকের সময়টাতে সঙ্গী ছিলেন লিটন। মুশফিকের বিদায়ের পর নিজের দিকে আলোটা কেড়ে নেন লিটন।
ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা, রিভার্স সুইপে মারা চার—সবকিছুই মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। এমন মায়াবী ব্যাটিং লিটনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর হঠাৎ বিভ্রমও তো কম নয়।
হুট করেই একটা ‘হাফ শট’ শেষ করে দেয় দুর্দান্ত সব ইনিংস। আগের ৫১ টেস্টের ১৯ হাফ সেঞ্চুরিও তাই সেঞ্চুরিতে বদলেছে মাত্র ৪ বার। তাঁর ইনিংসটা দীর্ঘ না হওয়ার হতাশাও তাই কম নয়।
আজ অবশ্য তেমন কোনো হতাশায় লিটনকে পুড়তে হয়নি। এটি ছিল লিটনের শততম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ হিসেবে। তাঁর জন্যও তাই উপলক্ষটা ছিল বিশেষ—৭ চার ও ২ ছক্কায় সেঞ্চুরিতে সেই উপলক্ষ রঙিনও করেছেন লিটন।
গ্যাভিন হোইয়ের বলে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছানোর পর গ্যালারি থেকে ভেসে আসে করতালি। অভিবাদনের জোয়ার দেখা যায় বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের সামনেও। সেসবের জবাবে নিজের হেলমেট খুলে চুমু খেয়ে তা লিটন উঁচিয়ে ধরেন চারদিকে।
গত বছর রাওয়ালপিন্ডিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন লিটন। পরের সেঞ্চুরিটির জন্য তাঁর অপেক্ষা লম্বা হলো বছরখানেক। সেই অপেক্ষা শেষ হলো মুশফিকের জন্য সাজিয়ে রাখা মঞ্চে। তবে সেঞ্চুরির পর বেশিদূর এগোতে পারেননি লিটন। ১৯২ বলে ১২৮ রান করে হামফ্রিসের বলে আউট হন।