হৃদয় বললেন, ‘যেটা হয়েছে, তাতেই আলহামদুলিল্লাহ’

৯২ রান করেছেন হৃদয়ছবি: শামসুল হক

আউট হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে গ্লাভস মিলিয়ে গেলেন মুশফিকুর রহিম। মাঠ ছাড়ার আগে হৃদয়ের মাথায় হাত রেখে উৎসাহ আর সাহসও দিয়ে গেলেন মুশফিক।

ওয়ানডে অভিষেকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৮ রান দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন হৃদয়। নিজে ফিফটি না পেলেও হৃদয়ের কথা ঠিকই মাথায় রেখেছিলেন মুশফিক। তাতে অবশ্য কাজ হলো না, এক বল পরই মুশফিককে অনুসরণ করলেন হৃদয়। হলো হৃদয়ভঙ্গ। তবে ওই ৮ রান নিয়ে কোনোই আক্ষেপ করছেন না ২২ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ বিপিএলে দারুণ পারফরম্যান্সের পর জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন হৃদয়, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ওয়ানডে দলে থাকলেও খেলার সুযোগ পাননি। তাদের বিপক্ষেই টি-টোয়েন্টিতে আলো ছড়ানোর পর এবার আয়ারল্যান্ডে বিপক্ষে এসে ওয়ানডে অভিষেকও হয়ে গেল। তবে হৃদয়ের ব্যাটিং দেখে মনে হলো, এ মঞ্চ যেন কত দিনের চেনা তাঁর! শুধু ৮ রানের আক্ষেপটাই থেকে গেল!

সেঞ্চুরি মিসে খুব একটা আক্ষেপ নেই হৃদয়ের
ছবি: শামসুল হক

হৃদয়ের অবশ্য আক্ষেপ নেই কোনো। ম্যাচসেরা হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, ‘আমি শুরুতে আউট হতে পারতাম। যেটা হয়েছে তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। অভিষেকে এত রান, চিন্তাই করিনি।’ সেঞ্চুরি না পাওয়া নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন হলো তাতে। হৃদয় কখনো বললেন, ‘এটিই ভাগ্যে ছিল, ভবিষ্যতে হবে।’ সেঞ্চুরি না পেলেও অভিষেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড গড়া হৃদয় এরপর যোগ করলেন, ‘ভবিষ্যতে যাদের অভিষেক হবে তাদের জন্য শুভকামনা, তারা যাতে আরও ভালো করে।’

হৃদয় যখন নেমেছিলেন, বাংলাদেশ তখনো ম্যাচে ঠিক নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এরপর সাকিবের সঙ্গে তাঁর জুটিতে বড় স্কোরের ভিত পায় বাংলাদেশ, মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে এগিয়ে যায় আরও। সাকিবের ব্যাটিং দেখেও আজ শিখেছেন হৃদয়, ‘আমি প্রথম থেকে চেয়েছিলাম ইন্টেন্ট ঠিক রেখে খেলতে। কখনো ভাবিনি একটু থিতু হয়ে নিই। বলের মেরিট অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছি। সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে খেলা ভালো একটা ব্যাপার, কারণ উনি অনেক অভিজ্ঞ। সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের সময়ই অনেক কিছু শিখছিলাম। উনিও বলছিলেন, “এভাবে এভাবে করলে ভালো হবে। ” উপভোগ করেছি অনেক।’

সাকিব তাঁকে কখনো পরামর্শ দিয়েছেন, কখনো খেলতে দিয়েছেন একেবারে নিজের মতো করেই, ‘কথাও বলেছেন, স্পেসও দিয়েছেন। যখন মনে হয়েছে সমস্যা হচ্ছে, জিজ্ঞাসা করলে বলেছেন কী করতে পারি। এ ছাড়া সব সময়ই বলেছেন, “ভালো হয়েছে, চালিয়ে যা। যতটা বড় করা যায় ইনিংস। ”’

আরও পড়ুন

সাকিব সেঞ্চুরি পাননি, তবে হৃদয় এরপর ঝোড়ো জুটি গড়েছেন মুশফিকের সঙ্গে। সেই মুশফিক, যাঁকে দেখে জাতীয় দলে খেলার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন একদিন। বগুড়ার ছেলে হৃদয় সে গল্পও ছোট করে গতকাল শোনালেন, ‘২০০৭ সালের একটা কাহিনি। মুশফিক ভাই বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জিতে একটা স্টাম্প পেয়েছিলেন। তখন আমি অনেক ছোট, একদিন স্টেডিয়ামে গিয়েছিলাম। একটা প্রোগ্রামে মুশফিক ভাইয়ের কাছে স্টাম্প দেখেই অনেক অনুপ্রাণিত হই। ওখান থেকেই ইচ্ছে ছিল যদি আমি একদিন খেলতে পারি জাতীয় দলে।’

মুশফিকের কাছেই আজ ওয়ানডে ক্যাপটা পেয়েছেন হৃদয়
ছবি: শামসুল হক

মুশফিকের কাছেই আজ ওয়ানডে ক্যাপটা পেয়েছেন হৃদয়। মুশফিক উৎসাহ দিয়েছিলেন ক্যাপ পরিয়ে দেওয়ার সময়ও, ‘ “ভালো কিছু করো ভবিষ্যতে, দেশকে ভালো কিছু দাও। ” উৎসাহ দিয়েছেন।’

কাল ওয়ানডে ক্যাপ পেলেও টি-টোয়েন্টি ক্যাপটা তো হৃদয় পেয়েছেন আগেই। এর আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাঁর ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের প্রশংসা হয়েছিল। ওয়ানডেতেও আজ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মকই ছিলেন। এ ক্ষেত্রে নিজের পরিকল্পনাই কাজে লাগিয়েছেন, ‘আমরা বেশির ভাগ ক্রিকেটারই ওয়ানডেতেই অভ্যস্ত, মানে ভালো খেলি। চেষ্টা করেছি-সব সময় নিজের পরিকল্পনায় থাকার। আমার একটা পরিকল্পনা আছে, ওয়ানডে ক্রিকেটে। চেয়েছি সেটি যাতে বাস্তবায়ন করতে পারি।’

সে পরিকল্পনার অনেকটাই তো হৃদয়ের বাস্তবায়িত হয়েছে নিশ্চিতভাবেই গতকাল সিলেটে।

আরও পড়ুন