বাংলাদেশের সামর্থ্যের সেরাটুকু কবে দেখব

একঘেয়ে একটা বিশ্বকাপকে জাগিয়ে তুলেছে আফগানিস্তান ও নেদারল্যান্ডস। এ দুই দলের জয় টুর্নামেন্টটাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বাংলাদেশের আজ চতুর্থ ম্যাচ, মানে প্রথম পর্বের প্রায় অর্ধেক শেষ হয়ে যাবে তাদের। যারা জয়ের ধারায়, তারা নিজেদের রণকৌশল ও একাদশ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু হারতে থাকলে এসব নিয়ে বেশি ভাবতে হয়। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ও ফেবারিট ভারত প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বস্তির নয় মোটেও। হ্যাঁ, তাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক ফল বাংলাদেশের পক্ষে। কিন্তু বিশ্বকাপের ম্যাচে সেটি খুব একটা উজ্জীবিত করবে বলে মনে হয় না।

পুনের উইকেট বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রানে ফেরার সুযোগ করে দিতে পারে। মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ ছাড়া বাকি কেউ কিন্তু সেভাবে ফর্মে নেই। বিচ্ছিন্ন কিছু ইনিংস দিয়ে বিশ্বকাপে ভালো করা যায় না। ব্যাটসম্যানদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আজ বড় প্রতিবন্ধকতা অবশ্যই যশপ্রীত বুমরা, মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদবের মতো বোলাররা। বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, সামর্থ্যের সেরাটি দেওয়া যায়নি বলে ভালো করা যায়নি। তো সেই সেরাটুকু কবে দেখব? বাংলাদেশ বিশ্বমানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কতটুকু খেলতে পারছে, সেটি দেখানোর মঞ্চ তো বিশ্বকাপই!

আরও পড়ুন

এমনিতে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ শক্তিমত্তায় অনেক পিছিয়ে থাকলেও তাদের সঙ্গে ম্যাচে একটা অহমের ব্যাপার তৈরি হয়েছে। সেটি এশিয়া কাপ বা দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পাওয়া সাফল্যের কারণে। ফলে বিশ্বকাপের আজকের ম্যাচ ঘিরে বাড়তি আগ্রহ থাকবে। বাংলাদেশের সামর্থ্য দেখানোর সুযোগ এই ম্যাচে।

একে তো পুনেতে খেলা, তার ওপর আবার প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভারত। দুই ইনিংসেই উইকেট ব্যাটিং–সহায়ক থাকার কথা। ফলে কঠিন এক পরীক্ষা হবে বাংলাদেশের বোলারদের জন্য। বোলাররা চাপে থাকবেন। এর আগে ইনিংসের শুরুর দিকে ছাড়া বাংলাদেশের বোলাররা ম্যাচের বাকি অংশে সেভাবে সুবিধা করতে পারেননি। এ ঘাটতিগুলো ভারতের বিপক্ষে আরও প্রবলভাবে ফুটে উঠতে পারে।

ভারত ম্যাচের আগে অনুশীলনে পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে পেসাররা
ছবি: রয়টার্স

তারপরও আজ দিনটা হতে পারে তাসকিন আহমেদের। দুই প্রান্তে ডানহাতি থাকলে তাসকিন লাইন-লেংথের ক্ষেত্রে অনেক ছন্দে থাকেন। ভারতের প্রথম ছয়জনই ডানহাতি বলে ইনিংসের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি কার্যকরী হবেন, এমন আশা করি। ফর্ম বিবেচনায় আপাতত শরীফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমানের চেয়ে তিনি একটু পিছিয়েই আছেন। উইকেট নিতে হবে, এর বিকল্প নেই।

আজ সাকিব খেলবেন বলেই শুনছি। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে ডানহাতি বেশি বলে তাঁর বোলিংটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁকে ১০ ওভার করতেই হবে, আগের ম্যাচের একাদশ ধরে রাখা হলে সাকিবের বিকল্প নেই বোলিংয়ে। তবে সাকিব পূর্ণাঙ্গ ফিট না হলে ঝুঁকি নেওয়া সমীচীন হবে না। বিশেষ করে পরের ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষ বিবেচনায় যেহেতু বাংলাদেশের সুযোগ এ ম্যাচের চেয়ে বেশি।

আরও পড়ুন

দলের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে আসলে কথা বলে আর লাভ নেই, কীভাবে সেটি সাজানো হচ্ছে, তা বোঝা বেশ মুশকিল হয়ে গেছে। তবে যাঁরা মোটামুটি একটু রানের ধারায় আছেন, তাঁদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। টপ অর্ডারের একজনের কাছ থেকে একটা সেঞ্চুরি আশা করি আজ। উইকেট বড় স্কোরের মতো মনে হলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ইনিংস মেরামতের প্রয়োজন হতে পারে, বিভিন্ন পরিস্থিতি আসতেই পারে। তবে কেউ থিতু হলে চাইব তিনি তাঁর সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে ইনিংস বড় করে আসবেন, ৩০-৪০ রানে যেন আউট হয়ে না যান।

এ ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও যে খুব বড় কিছু হয়ে যাবে, তা নয়। তবে গত কয়েকটি ম্যাচে দলের আত্মবিশ্বাসটা নড়বড়ে লেগেছে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে আত্মবিশ্বাসী দেখতে চাই।

গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক