বাংলাদেশের আজই শেষ সুযোগ, লিটনরা নামবেন ‘বিশ্বাস’ নিয়ে

আবুধাবিতে অনুশীলনে বাংলাদেশ দলপ্রথম আলো

দুই দলের ঠিকানা দেড় শ কিলোমিটার দূরের দুই শহরে। দুবাইয়ে আফগানিস্তান শুধু থাকেই না, তাদের অনুশীলনও হয় সেখানেই। অথচ গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ খেলতেই তাদের আসতে হচ্ছে আবুধাবিতে। বাংলাদেশ দলের অবশ্য যাত্রার এই ধকলটুকু নেই। আবুধাবির শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে মিনিট দশেক দূরত্বের পার্ক রোটানা হোটেল তাদের ঠিকানা।

আরও পড়ুন

তবে ক্রিকেটীয় বিবেচনায় বাংলাদেশ দল আজ এমন এক লড়াইয়ে নামছে, যেটির রথ কয়েক বছর ধরে চলছে উল্টো পথে। ২০১৪ সালে মিরপুরে সহযোগী দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে লড়াইয়ের সূত্রপাত হয়েছিল বাংলাদেশের ৯ উইকেটের বড় জয়ে। অথচ ১১ বছর পেরিয়ে এখন সেই লড়াইয়ে ১২ ম্যাচের ৭টিতেই জিতে পাল্লাটা আফগানিস্তানের দিকে ভারী। এর মধ্যে সব সংস্করণেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে এমন কিছু হারের সাক্ষী বাংলাদেশ হয়েছে, যা বেদনা বাড়িয়েছে কয়েক গুণ।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাঁধে বড় দায়িত্ব। অনুশীলনে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা
বিসিবি

গত বছর জুনে কিংসটাউনে আফগানিস্তানের কাছে বিপক্ষে হেরে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে আফগানিস্তান চলে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। বিশ্বকাপে সেরা চার দলের একটি হওয়ার সেই আত্মবিশ্বাসের কথা এবারের এশিয়া কাপে বারবারই মনে করিয়ে দিচ্ছে তারা।

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলতে গিয়ে গতকালও বছরখানেক আগের ম্যাচটাকে স্মরণ করেছেন আফগানিস্তানের প্রধান কোচ জনাথন ট্রট। এবার যদিও দুই দল দাঁড়িয়ে ভিন্ন পটভূমিতে। হংকংয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বড় জয়ে আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় আছে আফগানিস্তান। আর একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অতৃপ্তির জয়ের পর শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে বাংলাদেশ তাঁদের ভাগ্যটা তুলে দিয়েছে অন্যদের হাতে।

আরও পড়ুন

শ্রীলঙ্কা যেন শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে দেয়, এমন আশায় বুক বেঁধে থাকতে হলেও আজ আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততে হবে। সেই পথে বাংলাদেশের বড় সম্বল ‘বিশ্বাস’। গতকাল দলের প্রতিনিধি হয়ে ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আসা স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদের কথাগুলোই শুনুন, ‘আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে সুপার ফোরে খেলার। কোচিং স্টাফ ও ম্যানেজমেন্ট—সবাই সেই বিশ্বাসটাই খেলোয়াড়দের মধ্যে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। কোচ হিসেবে আমরাও মনে করি, যোগ্য দল হিসেবেই সুপার ফোরে ওঠা সম্ভব। কাজটা কঠিন, অনেক শর্ত সামনে। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবলে হবে না।’

পেস বোলিং কোচ শন টেইটের সঙ্গে অনুশীলনের ফাঁকে আলাপচারিতায় তাসকিন
বিসিবি

মুশতাকের দলের যে অবস্থা, তাতে অবশ্য তাদের ওপর বিশ্বাস রাখা মানুষের সংখ্যাটা কমই। স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে রিশাদ হোসেনের দায়িত্বটা তাঁর কাঁধে—এখানেও স্বস্তি নেই পাকিস্তানের সাবেক এই কিংবদন্তির। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১ ওভারে ১৮ রান দেওয়ার পর তাঁকে আর বোলিংয়ে আনারই সাহস করেননি অধিনায়ক লিটন দাস।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাঁর একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মুশতাক এখানেও বলছেন ‘বিশ্বাসের’ কথাই। সংবাদ সম্মেলনে আসার আগেই নাকি রিশাদকে মনে করিয়ে দিয়ে এসেছেন—প্রথম তিনটা বল জায়গামতো করতে পারলেই তোমার স্পেলটা ভালো হবে।

আজকের ম্যাচের একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে তাওহিদ হৃদয়েরও। হংকংয়ের বিপক্ষে রান পেলেও তিনি ঠিক ভরসা করার মতো কিছু করতে পারছেন না। তবে ম্যাচের আগের দিন হৃদয়কে নিয়ে মুশতাক বলেছেন, ‘কোচ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো তাকে সেই জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া, যেখানে সে চাপমুক্ত থেকে ক্রিকেটটা উপভোগ করবে।’

নিজের দল ছাপিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা প্রতিপক্ষকে নিয়েও কম নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সব মাঠই বাংলাদেশের চেয়ে ভালো চেনা আফগানিস্তানের। ভয় আছে রশিদ খান–আল্লাহ মোহাম্মদ গজনফর–নূর আহমেদদের নিয়ে গড়া বোলিং আক্রমণ নিয়েও। প্রতিপক্ষের মাঝের ওভারগুলো নিয়ে মুশতাকও সেই চিন্তার কথাই বলে গেছেন।

অনুশীলনে এমন ফুরফুরে মেজাজ মাঠের লড়াইয়ে থাকবে তো বাংলাদেশের
প্রথম আলো

আফগানিস্তানের কোচ জনাথন ট্রটের ধারণা ছিল বাংলাদেশ এশিয়া কাপের কয়েকবারের চ্যাম্পিয়ন। সংবাদ সম্মেলনেই মিডিয়া ম্যানেজার ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছেন, তবু বাংলাদেশের প্রতি সমীহ কমেনি তাঁর, ‘বাংলাদেশের সত্যিকারের ম্যাচ জেতানোর মতো খেলোয়াড় আছে। আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিই হতে হবে।’

বাংলাদেশ দল নিশ্চয়ই চাইবে জনাথন ট্রটের এই ধারণা যেন আজ ভুল প্রমাণিত না হয়।