ফিলিপসের ক্যারিয়ার-সেরা বোলিংয়ের পর চ্যালেঞ্জের মুখে নিউজিল্যান্ড

যে বল দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দিয়েছেন, মাঠ ছাড়ার সময় সেটাই প্রদর্শন করেছেন গ্লেন ফিলিপস। আজ ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভেএএফপি

গ্লেন ফিলিপস কী পারেন না! ছিলেন মূলত উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। কিন্তু দলে উইকেটকিপারের আধিক্যের কারণে ভূমিকা বদলে ফেলেছেন। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি চতুর ফিল্ডিংয়ে রান বাঁচানোর কাজ তো করেনই; প্রয়োজনে ‘পার্টটাইমার’ তকমা তুলে রেখে টানা বোলিংও করতে পারেন।

হঠাৎ ‘আচরণ’ বদলানো ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভের পিচে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজনেই আজ তৃতীয় দিনে টানা ১৬ ওভার বল করেছেন ফিলিপস। তাঁর অফ স্পিনেই ব্যাটিংয়ে ধস নেমেছে অস্ট্রেলিয়ার। সফরকারীরা দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয়েছে ১৬৪ রানে। ফিলিপস নিয়েছেন ৫ উইকেট। এটি তাঁর ক্যারিয়ার–সেরা তো বটেই, গত দেড় যুগে ঘরের মাঠে কোনো কিউই স্পিনারের সেরা বোলিং।

এরপরও খুব একটা স্বস্তিতে নেই নিউজিল্যান্ড। স্বাগতিকদের ৩৬৯ রানের লক্ষ্য দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টিম সাউদির দল আজ ৩ উইকেটে ১১১ রান তুলে দিনের খেলা শেষ করেছে। জিততে দরকার আরও ২৫৮ রান।

ট্রাভিস হেডকে আউট করার পর গ্লেন ফিলিপসের উদ্‌যাপন
এএফপি

লক্ষ্যটা ছুঁতে হলে ঘরের মাঠে টেস্টে সর্বোচ্চ রান তাড়ার পাশাপাশি নিজেদের ইতিহাসেও রেকর্ড লক্ষ্য তাড়া করতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। নিউজিল্যান্ডে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে টেস্ট জয়ের রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ১৯৬৯ সালে অকল্যান্ড টেস্টে গ্যারি সোবার্স-ক্লাইভ লয়েডদের পরাক্রমশালী দলটি ৩৪৫ রানের লক্ষ্য টপকে গিয়েছিল। নিউজিল্যান্ড সর্বোচ্চ ৩২৪ রান তাড়া করে টেস্ট জিতেছে ১৯৯৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে।

তবে বেসিন রিজার্ভে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটা নিউজিল্যান্ডেরই। ২০১৭ সালের সেখানে টেস্টের শেষ দিনে বাংলাদেশের দেওয়া ২১৭ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেন কেইন উইলিয়ামসন–রস টেলররা। প্রথম ইনিংসে যথেষ্ট রান (৫৯৫/৮) হয়েছে ভেবে ডিক্লেয়ার দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সে সময়ের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।

বেসিন রিজার্ভের উইকেট সবুজাভ হলেও কাল দ্বিতীয় দিন থেকেই স্পিন ধরতে শুরু করে। অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার নাথান লায়ন ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়ে সেটাই দেখিয়েছেন। লায়নের ঘূর্ণিতে প্রথম ইনিংসে ১৭৯ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

আরও পড়ুন

সেটা বুঝতে পেরে আজ নিউজিল্যান্ডও ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’র কাজটা করেছে। বল একটু পুরোনো হতেই অধিনায়ক সাউদি বোলিংয়ে এনেছেন ফিলিপসকে। তবে দিনের প্রথম উইকেটটা এনে দিয়েছেন পেসার ম্যাট হেনরি। আগের দিন পড়ন্ত বিকেলে নামা টেলএন্ডার লায়ন আজ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন। ইনিংসের ১৬তম ওভারে হেনরি লায়নকে যখন ইয়াংয়ের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান, ততক্ষণে তিনি ৪১ রান করে ফেলেছেন। ফিলিপস তখনো বোলিংয়ে আসেননি।

ইনিংসের ২১তম ওভারে প্রথমবার হাত ঘোরাতে আসা ফিলিপস প্রথম শিকার করেছেন উসমান খাজাকে দিয়ে। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে তাঁর ওপর চড়াও হতে গিয়ে স্টাম্পড হন খাজা। এরপর একে একে ফিরিয়েছেন প্রথম ইনিংসে বীরোচিত সেঞ্চুরি করা ক্যামেরন গ্রিন, ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ ও অ্যালেক্স ক্যারিকে। পরে বোলিংয়ে ফিরে প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ককে তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ‘লেজ ছেঁটে দেন’ হেনরি।

৫৬ রানে অপরাজিত আছেন রাচিন রবীন্দ্র
এএফপি

৩৬৯ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ৫৯ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান টম ল্যাথাম, উইল ইয়াং ও কেইন উইলিয়ামসনকে হারায় স্বাগতিকেরা। ৩ উইকেটই নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনাররা; লায়ন দুটি আর হেড একটি। তবে চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধা রাচিন রবীন্দ্র ও ড্যারিল মিচেল দলের আর কোনো ক্ষতি হতে দেননি। দুজন মিলে ৫২ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন আছেন। রবীন্দ্র টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিততে আগামীকাল রবীন্দ্র–মিচেলের পাশাপাশি ফিলিপসের ব্যাট থেকেও নিশ্চয় বড় কিছুর আশা করবে নিউজিল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া : ৩৮৩ ও ৫১.১ ওভারে ১৬৪
(লায়ন ৪১, গ্রিন ৩৪, হেড ২৯, খাজা ২৮; ফিলিপস ৫/৪৫, হেনরি ৩/৩৬, সাউদি ২/৪৬)

নিউজিল্যান্ড : ১৭৯ ও ৪১ ওভারে ১১১/৩
(রবীন্দ্র ৫৬*, ইয়াং ১৫, মিচেল ১২*; লায়ন ২/২৭, হেড ১/১০)

* ৩য় দিন শেষে