বিপিএল: মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ নাচলেন, নাচলেন মিলারও

বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ফরচুন বরিশালের খেলোয়াড়েরা মুশফিককে নিয়ে এভাবেই আনন্দে মেতে ওঠেন। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেশামসুল হক

চারপাশে তখন অন্ধকার। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইড বন্ধ। লাইট শো আর আতশবাজির যতটুকু আলো তাতে আশপাশটা দেখা যাচ্ছিল। একদিকে আলোকসজ্জার ঝলকানি, অন্যদিকে অন্ধকার। এর মধ্যেই বিগ স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে, ‘ফরচুন বরিশাল, বিপিএল চ্যাম্পিয়ন।’

পরিবেশটা আরও জমিয়ে তুলেছিল ডিজে মিউজিক। সুর–সঙ্গীতের তালেই নাচ শুরু করে দিলেন ডেভিড মিলার। ব্যাট, গ্লাভস সব ফেলে প্যাড পরেই কাঁধ নাড়াতে শুরু করেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান। ফরচুন বরিশালের এত বড় তারকা যখন শিরোপা জয়ের উদযাপনে নাচ শুরু করেন, বাকিরা দাঁড়িয়ে থাকবে কেন!

আরও পড়ুন

একে একে খালেদ আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান রানা, রাকিবুল হাসান মিলারকে সঙ্গ দিতে শুরু করলেন। গতকাল রাতে বিপিএল ফাইনাল শেষে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বরিশালের ড্রেসিংরুমের সামনের এই দৃশ্য দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন তামিম ইকবাল। তাঁর চোখেমুখে তৃপ্তির হাসি। নাচতে নাচতে মিলাররা যখন ড্রেসিংরুমের সামনে তখন তামিম এসে জড়িয়ে ধরলেন নেচে ঘেমে একাকার মিলারকে। খালেদরা অবশ্য থামেননি। আনন্দের প্রকাশে বিরামহীন নৃত্য চলছিলই!

একটু পর নাচের দলে যোগ দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। উদ্দাম নাচ কাকে বলে, তা দেখিয়ে দিলেন মিরাজ একাই। ততক্ষনে কয়েকজন ঢোল নিয়ে এসে মিরাজকে ঘিরে ধরলেন। বরিশালের এই অলরাউন্ডার যেন নাচের মধ্যমণি!

সতীর্থদের সঙ্গে আনন্দে যোগ দিয়েছলেন মাহমুদউল্লাহও
শামসুল হক

মাহমুদউল্লাহ নাচে যোগ দিলেন বেশ আয়োজন করে। বরিশাল দলের খেলোয়াড়দের ঘিরে রাখা সাংবাদিকদের একটু জায়গা করে দিতে বললেন তিনি। এরপর শিরোপা জয়ের আনন্দ উদযাপন করলেন তিনিও। আরেক অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকেও তো কোলে তুলে নেচেছেন খালেদরা।

মিনিট দশেক পর লাইট শো শেষ হলো। ফ্লাড লাইটেও আলো ফিরে এলো। অধিনায়ক তামিম তখন ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া বরিশালের খেলোয়াড়দের এক করে ভিক্টোরি ল্যাপ দিলেন তামিম। ভিড়ের মধ্যেই খালেদকে পাওয়া গেল। বরিশালের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেচেছেন এই পেসার। কথাটা তাঁকে বলতেই হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘আরে কী বলছেন। নাচব না! ট্রফি জিতেছি, নাচতে তো হবেই।’

আরও পড়ুন

মাহমুদউল্লাহর অবশ্য বেশি কিছু বললেন না। মুখে চওড়া হাসি টেনে শুধু এটুকুই বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ।’ মুশফিকও স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিলেন, ‘সবাই তো শিরোপা জয়ের জন্যই খেলতে আসে। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছে।’ ডেভিড মিলারও অল্প কথায় নিজের অনুভূতি জানালেন, ‘অবিশ্বাস্য মুহূর্ত। বিশ্বাস হচ্ছে না কী হচ্ছে।’ মিরাজ যেতে যেতে মনে করিয়ে দিলেন বিপিএল ফাইনালের আগে বলা নিজের কথাটা। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় চেঁচিয়ে বলছিলেন, ‘বলেছিলাম না ট্রফিটা নিয়ে যাব?’  

তুমুল হইচইয়ের মধ্যেই সাংবাদিকদের একটা জটলা ঘিরে ধরে ইংল্যান্ডের জেমস ফুলারকে। নাচ গান তাঁকে খুব একটা টানছিল না। তিনি বরং ফাইনাল ম্যাচের ছোটখাটো বিশ্লেষণ দিয়ে দিলেন, ‘এটা দারুণ অনুভূতি। দলের অংশ হতে পেরে ভালো লাগছে। দেখুন, এই দলে অভিজ্ঞ অনেক ক্রিকেটার আছে। রান তাড়ায় একটু কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম মাঝে। কিন্তু আমাদের দুজন ওপেনার খুবই ভালো খেলেছে। বিশেষ করে অধিনায়ক কি দারুণ একটা ইনিংস খেললেন। যখন ২০-২৫ রান প্রয়োজন ছিল তখন একটু নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু এখন খুবই ভালো লাগছে।’

ফরচুর বরিশালের ড্রেসিংরুমে প্রশংসা করেছেন কাইল মেয়ার্স
প্রথম আলো

নীরব রইলেন আরেক বিদেশি কাইল মেয়ার্স। বিপিএলের শেষের দিকে যোগ দিয়ে এই ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার খেলেছেন ৬ ম্যাচ। এর মধ্যে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন ৩ ম্যাচ। বরিশালের ভাগ্য বদলানোর গল্প লিখতে গেলে এই ক্যারিবিয়ানের নামটা সবার আগে আসবে। ভিড়ের মাঝে তাঁকেও পাওয়া গেল।

মেয়ার্সও বিড়বিড় করে বার্বাডোজের ইংরেজিতে বললেন, ‘দেখুন, আমার প্রথম বিপিএল এটি। আমার জন্য সহজ ছিল না এখানে এসেই মানিয়ে নেওয়া। কিন্তু দলের পরিবেশটা এমন সাজানো গোছানো ছিল যে আমার এসেই মনে হয়েছে খুবই পরিচিত একটা জায়গায় এসেছি। আর ভালো আবহ থেকেই ভালো পারফরম্যান্স আসে। সেটা তো দেখতেই পারছেন।’

বরিশালের ড্রেসিংরুম কতটা স্বাস্থ্যকর এবং ভালো, তা তো মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের মতো অভিজ্ঞদের উদ্দাম নাচেই পরিস্কার।

আরও পড়ুন