‘বেবি এবি’ নিয়ে ভারতে হচ্ছেটা কী
ঝড়টা আসলে কোথায় উঠেছে? অস্ট্রেলিয়ায় না ভারতে?
বলা যায়, দুই জায়গাতেই। দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভাল্ড ব্রেভিস অস্ট্রেলিয়ায় ঝড় তুলেছেন মাঠে। ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান স্বাগতিকদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪১ বলে সেঞ্চুরি করেছেন, গতকাল শেষ টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ২৬ বলে ৫৩।
ফিফটি করতে গিয়ে ছক্কা মেরেছেন ৬টি, এর মধ্যে টানা ৩টি ‘নো লুক’ শটে। ‘বেবি এবি’ নামে পরিচিত ব্রেভিস অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যত ঝড় তুলে চলেছেন, ভারতে তাঁকে নিয়ে ততই আলোচনা বেড়ে চলেছে। ভারতে আসলে ব্রেভিসকে নিয়ে হচ্ছেটা কী?
ভারতে যে ঝড় শুরু হয়েছে, সেখানে পরোক্ষ একটা অবদান আছে আরেক প্রোটিয়ার—এবি ডি ভিলিয়ার্স। এই ভিলিয়ার্সের আরেক রূপ হিসেবেই ব্রেভিসকে ডাকা হয় ‘বেবি এবি’। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ব্রেভিস ৫৬ বলে ১২৫ রানের ইনিংস খেলার পর ডি ভিলিয়ার্স এক্সে লিখেছিলেন, ‘ডেভাল্ড ব্রেভিসকে নিলামে দলে নেওয়ার জন্য আইপিএল দলগুলোর সামনে সোনালি সুযোগ ছিল। দলগুলো সেটা হাতছাড়া করেছে। চেন্নাই হয়তো ভীষণ ভাগ্যবান ছিল, অথবা এটাকে বলা যায় সবচেয়ে বড় মাস্টার স্ট্রোক।’
ব্রেভিস সর্বশেষ আইপিএলের নিলামে থাকলেও তাঁকে কোনো দল কেনেনি। পরে চেন্নাই সুপার কিংসের পেসার গুরজাপনীত সিং আহত হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলে দলটি ব্রেভিসকে বদলি হিসেবে নেয়।
মাঝপথে বদলি হিসেবে যোগ দিলে ব্রেভিস পারফর্মও করেছেন। ৬ ম্যাচে রান করেছেন ২২৫, ব্যাটিং করেছেন ১৮০ স্ট্রাইক রেটে। বোঝাই যাচ্ছে, চেন্নাই ভালোই লাভবান হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, এমন একজন বিধ্বংসী ক্রিকেটারকে স্কোয়াডে যুক্ত করা চেন্নাইকে সামনে বাড়তি সুবিধা দেবে।
অস্ট্রেলিয়ায় ব্রেভিসের ভালো করা এবং ডি ভিলিয়ার্সের মন্তব্যের পর তাঁর নামটি উঠে আসে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মুখে। গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়া অশ্বিন এ বছর আইপিএল খেলেছিলেন চেন্নাইয়ের হয়ে। তবে ক্রিকেটার পরিচয়ের বাইরে তিনি এখন বিশ্লেষকই হিসেবেই বেশি আবির্ভূত হন।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলের আলোচনায় অশ্বিন ব্রেভিসকে চেন্নাই দলে নেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ভারতের সাবেক এই অফ স্পিনার দাবি করেন, চেন্নাই নাকি ব্রেভিসকে নিয়মিত মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ দিয়ে দলে নিয়েছে।
তাঁর কথায়, ‘শুনেছি, দু-তিনটি দল ওর সঙ্গে কথা বলেছিল। কিন্তু বাড়তি টাকা দিতে না পারায় তারা হাল ছেড়ে দেয়। নিলামে ওর একটা ভিত্তিমূল্য ছিল ঠিকই, তবে এজেন্টের সঙ্গে আলোচনা আর দরকষাকষি নিশ্চয়ই হয়েছিল—“আমি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পেলে তবে খেলব।” সে হয়তো ভেবেছিল এই মৌসুমে খেলতে পারলে পরের নিলামে দাম আরও বাড়বে। তাই সে হয়তো চেন্নাইকে বলেছিল, “আমার অতিরিক্ত টাকা লাগবে।” আর দলও সেটা মেনে তাঁকে দলে নিয়েছিল।’
অশ্বিনের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা অন্যদিকে মোড় নেয়। কারণ, আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ক্রিকেটারকে বদলি হিসেবে দলে নিলে তাঁর পারিশ্রমিক সেই খেলোয়াড়ের সমান বা কম হতে হবে।
এ ছাড়া মৌসুমের যে ম্যাচগুলো ওই খেলোয়াড় আসার আগে হয়ে গেছে, তার জন্য পারিশ্রমিকে কাটছাঁট করার বিধানও আছে। নিলামে গুরজাপনীতকে কেনা হয়েছিল ২ কোটি ২০ লাখ রুপিতে। মানে এই টাকার অনেক কম পাওয়ার কথা ব্রেভিসের। অশ্বিনের দাবি সত্য হলে চেন্নাই তাঁকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দলে নিয়েছে।
নিজেদের বিপদ বুঝতে পেরে ব্রেভিসের বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে চেন্নাই সুপার কিংস। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন দলটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ব্রেভিসকে নিয়ম মেনেই কেনা হয়েছিল। বিবৃতিতে দলটি লিখেছে, ‘চেন্নাই সুপার কিংস স্পষ্ট করে জানাচ্ছে, আইপিএল ২০২৫–এ ডেভাল্ড ব্রেভিসকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে দলে নেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াই লিগের নিয়মকানুন মেনে হয়েছে।’ ফ্র্যাঞ্চাইজিটি আরও জানায়, ১৮ এপ্রিল আইপিএলের পক্ষ থেকেও এই নিয়ম মেনে চুক্তির বিষয়টি গণমাধ্যমে জানানো হয়েছিল।
চেন্নাই বিবৃতি দেওয়ার পর অশ্বিনও আর চুপ থাকেননি। আরেকটি ভিডিও দিয়ে অশ্বিন দাবি করেছেন, ভুলটা আসলে কারোই হয়নি। তিনি বলেছেন, ‘এখানে আসলে কারও দোষ নেই। অনেকের মনে সন্দেহ তৈরি হওয়াতেই ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়েছে। আসল কথা হলো খেলোয়াড়ের কোনো দোষ নেই, ফ্র্যাঞ্চাইজির কোনো দোষ নেই, হয়তো গভর্নিং বডিরও কোনো দোষ নেই।’
অশ্বিন আরও বলেছেন, ‘আরেকটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই। আমার ভিডিওর উদ্দেশ্য ছিল বোঝানো যে ব্রেভিস কত দারুণ ব্যাটিং করছে। আমাদের বুঝতে হবে, আইপিএলে খেলা প্রতিটি খেলোয়াড়ের চুক্তি ত্রিপক্ষীয়, এখানে চুক্তি হয় খেলোয়াড়, ফ্র্যাঞ্চাইজি আর আইপিএলের মধ্যে। তাই যদি কোথাও ভুল থাকত, সেটা অনুমোদনই পেত না।’
কিন্তু তাঁকে নিয়ে ভারতে যে এত কথা–চালাচালি আর বিবৃতি চলছে, অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ব্রেভিস কি তা টের পাচ্ছেন?