লিটনের ৫০তম টেস্ট, যেতে পারবেন কত দূর
টেস্ট ক্যারিয়ারের পুরোটাতেই উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে গেছেন লিটন দাস। গল টেস্টের আগেই যেমন সর্বশেষ ১০ ইনিংসে ছিল না একটি ফিফটিও। তবে এর আগে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের সময় করেছিলেন সেঞ্চুরি। মাঝে লম্বা বিরতির পর গলে প্রথম ইনিংসে ৯০ রান করে ফিরে আসার বার্তা দিয়ে রেখেছেন।
আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫০তম টেস্ট খেলতে নামছেন সেই লিটন। গলের ৯০–এর পর কলম্বোতেও ভালো কিছু করে মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচটি কি রাঙাতে পারবেন লিটন?
বাংলাদেশের ১০ম খেলোয়াড় হিসেবে ৫০তম টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন। টেস্ট ইতিহাসে ৫০ টেস্ট খেলা খেলোয়াড়ের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। লিটনের আগেই এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন ৩২০ জন ক্রিকেটার। ১০০ টেস্টই তো খেলেছেন এঁদের ৮১ জন। তবে বাংলাদেশ বলেই হয়তো ৫০তম টেস্ট খেলা নিয়ে একটু বাড়তি আগ্রহ। যে আগ্রহের পারদ সবচেয়ে বেশি চড়েছিল ২০১৭ সালে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুই মহিরুহ সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল একই ম্যাচে এই মাইলফল ছুঁয়েছিলেন বলে।
ওই ঘটনা আরও বেশি বিশেষ হয়ে যায় অন্য একটি কারণেও। সাকিব-তামিমের ৫০তম টেস্টে মিরপুরে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ওই একটিই জয়। লিটনের ৫০তম ম্যাচে এমন কিছু কি করতে পারবে বাংলাদেশ? পেলে ভালোই হয়, প্রথমবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ।
আগের ম্যাচে ৯০ রান করা লিটন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার আগে থেকেই আলোচনায় তাঁর ব্যাটিংয়ের জন্য। এরপরও যতবার ব্যর্থ হয়েছেন, প্রতিবারই ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর সামর্থ্যের প্রসঙ্গ।
তাঁর শট এক ধরনের মুগ্ধতা তৈরি করে, খেলার ধরনেও তিনি আলাদা—সব মিলিয়ে তাঁকে নিয়ে আগ্রহও থাকে সব সময়ই। সময়ের সঙ্গে অভিজ্ঞতাও সমৃদ্ধ হয়েছে লিটনের। ২০১৫ সালে ফতুল্লায় ভারতের বিপক্ষে শুরু হয়েছিল যে যাত্রা। সময়ের সঙ্গে তাঁকে নিয়ে প্রত্যাশা বেড়েছে, বেড়েছে তাঁর দায়িত্বও। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে তাঁর কাঁধে এখন লম্বা সময়ের জন্য অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। বাকি দুই সংস্করণেও নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে।
টেস্টে বাকি দুই সংস্করণের চেয়ে লিটনের ক্যারিয়ার তুলনামূলক উজ্জ্বল। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে কখনো কখনো বাদ পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় থাকা লিটন সাদা পোশাকের ক্রিকেটে জাতীয় দলে অনেকটাই থিতু। ৪৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৪ সেঞ্চুরি ও ১৮ ফিফটিতে করেছেন ২৮৮১ রান।
তাঁর সামর্থ্যের চেয়ে এই পরিসংখ্যান যে বেশ দূরে দাঁড়িয়ে, তা হয়তো জানেন লিটনও। নানা সময়ে তাঁকে নিয়ে যে উচ্চাশার পারদ বড় হয়েছিল, সেটির কাছাকাছিও তা নয়। তবে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান দাঁড়িয়ে এক মাইলফলকের সামনে। ২০০৮ সালে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে ক্লাবের সূচনা করেছিলেন হাবিবুল বাশার, লিটন সেটির দশম সদস্য হিসেবে নিজের নাম লেখাবেন।
এই সূচনা তাঁর ক্যারিয়ারে হয়তো নতুন একটা পথেও এগিয়ে নেবে। যেটিতে ব্যক্তিগত রান তো থাকবেই, লেখা থাকবে দেশের হয়ে স্মরণীয় কিছু জয়, প্রত্যাশাটা এমন। লিটন কি প্রত্যাশা মেটাতে পারবেন? উত্তরটা ভালো দিতে পারবে সময়। আপাতত ৫০তম টেস্টের মাইলফলক ছোঁয়ার জন্য আগাম অভিনন্দন।