এবার মুখোমুখি জয়াসুরিয়া–মুরালিধরনের ছেলে
শ্রীলঙ্কার অনূর্ধ্ব–২৩ পর্যায়ের ক্রিকেটে আজকের দিনটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথম শ্রেণির একধাপ নিচের পর্যায়ের এই টুর্নামেন্টে আজ পি সারা ওভালে মুখোমুখি হয়েছে তামিল ইউনিয়ন ও এসএসসি। এমনিতে এই ম্যাচকে আর দশটি সাধারণ ম্যাচের মতোই দেখা যায়। তবে দুই দলের স্কোয়াডে তাকালে তাৎপর্যটা ধরা যায়। আরে, এ তো জয়াসুরিয়ার মুখোমুখি মুরালিধরন!
একটু ভুল হলো। এসএসসির হয়ে খেলছেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের কিংবদন্তি সনাৎ জয়াসুরিয়ার ছেলে ১৭ বছর বয়সী রানুক জয়াসুরিয়া। মুত্তিয়া মুরালিধরনের ছেলে নরেন মুরালিধরনও ১৭ বছর বয়সী, প্রতিনিধিত্ব করছেন তামিল ইউনিয়নের। গুগল করে দেখা গেল, সনাৎ জয়াসুরিয়ার সঙ্গে রানুকের চেহারার যা একটু মিল পাওয়া যায়, মুরালিধরনের সঙ্গে নরেনের চেহারার মিল খুবই কম। তারওপর নরেন চশমা পরেন।
তবে এই দুই ছেলেকে দেখে এবং তাঁদের বাবার নাম জানার পর পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব ক্রিকেটপ্রেমীরা নস্টালজিয়ায় ডুব মারতে পারেন। তাঁদের বাবাদের ক্যারিয়ার কী আর যেনতেন ক্যারিয়ার!
মুত্তিয়া মুরালিধরন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই সর্বোচ্চ (১৩৪৭) উইকেটশিকারি। টেস্টে ৮০০ উইকেট নেওয়ার যে চূড়া তিনি গড়েছেন, তা কোনো দিন কেউ ভাঙতে পারবে বলে মনে হয় না! পাশাপাশি চোখের সামনে তাঁর বোলিং দেখার স্বাদটাও অন্য রকম ছিল। কবজির মোচড়ে করা ‘দুসরা’ এবং ভয়ংকর বাঁকগুলো স্মৃতিতে এখনো অমলিন। আর জয়াসুরিয়া?
‘মাতারা হারিকেন’–কে ওয়ানডেতে প্রথম ১৫ ওভারে ব্যাটিংয়ের ধাঁচ বদলে দেওয়ার অন্যতম কারিগর মানার পাশাপাশি আরও একটি বিষয় উঠে আসে। ওয়ানডেতে ১৩ হাজারের (১৩৪৩০) বেশি রান করার পাশাপাশি যে লোক তিন শর (৩২৩) বেশি উইকেটও নিয়েছেন—তাঁকে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের কাতারেও রাখেন কেউ কেউ। সংখ্যার এই কচকচানির বাইরে জয়াসুরিয়া চিরকালীন হয়ে ওঠার সবচেয়ে কারণ হলো তাঁর ব্যাটিংয়ের ধার। ওয়াসিম আকরামের ভাষায়, ‘অফ স্টাম্পের বাইরে ইঞ্চিখানেক জায়গা পেলেও মেরে দেবে!’
মুরালিধরন ও জয়াসুরিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছেড়েছেন ১৪ বছর। এখন তাঁদের ছেলেদের পালা। সেই পালাতেই এবার মাঠে মুখোমুখি দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটারের সন্তান। ঘরোয়া ক্রিকেট ধরে উঠে আসা দুই তরুণের শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব–১৯ দলের হয়ে আগামী বছর জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যুব বিশ্বকাপেও খেলার সম্ভাবনা প্রবল।
বাবা মুরালিধরনের মতো তাঁর ছেলে নরেনও তামিল ইউনিয়নে খেলছেন। রানুক আলাদা। তাঁর বাবা কলম্বো ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। রানুক বেছে নিয়েছেন এসএসসিকে।
মুরালির সঙ্গে নরেনের মিল আছে আরও। বাবার মতোই তিনি অফ স্পিনার। আর পার্থক্য হলো, বাবা বিশেষজ্ঞ অফ স্পিনার হলেও তাঁর ছেলে ব্যাটিংটাও পারেন। শুধু পারেন না, খুব ভালোই পারেন। ২০১৯ সালে অল আইল্যান্ড স্কুলস অনূর্ধ্ব–১৫ ক্রিকেটে গেটওয়ে কলেজের হয়ে টানা দুই সেঞ্চুরি (১৬২ ও ১০৫) মেরেছিলেন কয়েক বছর আগে। আগের বছর গেটওয়ের হয়ে অনূর্ধ্ব–১৩ ক্রিকেটে ইন্টার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল টুর্নামেন্টে সব ধরনের বড় ট্রফিই তিনি জিতে নেন। সেরা বোলার, ব্যাটসম্যান ও খেলোয়াড়ের ট্রফি জিতেছিলেন নরেন। মুরালিধরন নিজেই কোচের ভূমিকায় তাঁর ছেলেকে ক্রিকেটার বানিয়েছেন।
তেমনটি জয়াসুরিয়াও। বাবার মতো রানুকও বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কয়েক বছর আগে রানুককে নেটে জয়াসুরিয়ার ব্যাটিং করানোর ছবি ভাইরাল হয়েছিল। গত বছর এসএসসির হয়ে এসএলসি মেজর লিগ অনূর্ধ্ব–২৩ টুর্নামেন্টে অভিষেকেই ফিফটি পান। তার আগে খেলেছেন ইংল্যান্ডের ডোরসেট ক্রিকেট লিগেও। ইংল্যান্ডের আবাসিক স্কুলে লেখাপড়া করেছেন রানুক।