মরুভূমিতে ‘বাংলা পেস’ লড়াই, ‘বাঁহাতি কামান’ মোস্তাফিজের বিপক্ষে হার ‘টপ গিয়ার’ তাসকিনের
বাংলাদেশের পেসারদের বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দাপট ছড়ানো দেখতে কার না ইচ্ছা করে। গতকাল রাতটা ছিল তেমন এক সুযোগ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টিতে (আইএলটি২০) মুখোমুখি হয়েছিল দুবাই ক্যাপিটালস ও শারজা ওয়ারিয়রস। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে ম্যাচটা ছিল আসলে ‘বাংলা পেস লড়াই’—তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানের লড়াই।
মোস্তাফিজ সেই লড়াইয়ে জিতেছেন। তবে উইকেটসংখ্যাকে ফুটবলের গোল বিবেচনা করলে বলতে মোস্তাফিজকে ৩-২ ‘গোলে’ হারিয়েছেন তাসকিন। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে তাসকিনদের স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ৬৩ রানে জিতেছে মোস্তাফিজদের শারজা। ম্যাচে তাসকিনের বোলিং বিশ্লেষণ ৪-০-৪০-৩, মোস্তাফিজের বোলিং বিশ্লেষণ ২-০-১৩-২। প্রশ্নও উঠতে পারে একটি—মোস্তাফিজকে দিয়ে কেন মাত্র ২ ওভার বোলিং করালেন দুবাই অধিনায়ক দাসুন শানাকা?
স্কোরকার্ডে তাকালে ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যাটা মিলতে পারে। টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ১৮০ রান তোলে দুবাই। তাড়া করতে নেমে শারজা ১৭ ওভারে অলআউট হয় ১১৭ রানে। তাদের ইনিংসে দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে ৮ রান দিয়ে ওপেনার জনসন চার্লসকে ফেরান মোস্তাফিজ। এরপর ১৬তম ওভারে মোস্তাফিজ বোলিংয়ে আসার আগেই ১০৮ রান তুলতে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে শারজা।
ওয়াকার সালামখিল, হায়দার আলী ও মোহাম্মদ নবী মাঝে দারুণ বোলিং করায় সম্ভবত মোস্তাফিজকে আনার দরকার মনে করেননি শানাকা। আর শারজার হারও মোটামুটি তখনই নিশ্চিত হয়ে যায়। মোস্তাফিজ তাঁর দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে আসার আগে ৩ উইকেট হাতে রেখে ৩০ বলে ৭৩ দরকার ছিল শারজার। ১৬তম ওভারে মোস্তাফিজ ৫ রান দিয়ে ফেরান আদিল রশিদকে।
কাল তাসকিন-মোস্তাফিজ দুজনেই করেন নিজেদের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার। তাসকিন মোস্তাফিজের মতো প্রথম ওভারেই সাফল্য পাননি। দুটি চার হজমসহ ১২ রান দেন। নিজের দ্বিতীয় ওভারে (ইনিংসের ষষ্ঠ ওভার) ৯ রানে পান জর্ডান কক্সের উইকেট। এরপর ডেথ ওভারে তাসকিনকে ফেরান রাজা। ১৮তম ওভারে ৭ রানে সেদিকুল্লাহ আতালকে ফিরিয়ে তার প্রতিদানও দেন তাসকিন। ইনিংসের শেষ ওভারে ১২ রানে পান শানাকার উইকেট।
৪৪ বলে ৬৬ করা এই আতালই দুবাইয়ের ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোরার। ৩৮ রানে অন্য প্রান্তে অপরাজিত ছিলেন নবী। শারজার ইনিংসে ফিফটি নেই। ৪৭ রান করেন জেমস রিউ। রাজার ব্যাট থেকে আসে ২১ রান।
এবার ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত যৌথভাবে দ্বিতীয় শীর্ষ উইকেটশিকারি মোস্তাফিজ। ৬ ইনিংসে ১৫.৬৩ গড় ও ৮.১৯ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১১ উইকেট। ডেজার্ট ভাইপার্সের খুজাইমা তানভিরও ৭ ইনিংসে ১৮.২৭ গড় ও ৭.৭৩ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১১ উইকেট। দুবাই ক্যাপিটালসের বাঁহাতি আফগান কবজির স্পিনার ওয়াকার সালামখিল ৭ ইনিংসে ১৩.৭৩ গড় ও ৭. ৪৯ ইকোনমি রেটে ১৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষে। তাসকিনের শিকার ৩ ইনিংসে ৪ উইকেট।
মরুভূমির ক্রিকেট-রাতে তাসকিন-মোস্তাফিজদের খেলা দেখতে দেখতে তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হ্যান্ডলে চোখ রেখেও বাংলাদেশের অনেক সমর্থকের খুশি হওয়ার কথা। মোস্তাফিজের বোলিং নিয়ে ফেসবুকে দুবাই ক্যাপিটালসের পোস্ট, ‘সেরারাও এই বাঁহাতি কামানকে ভয় পায়।’ তাসকিনকে নিয়ে একাধিক পোস্ট করেছে শারজা। একটি পোস্ট এমন, ‘শুধুই টপ গিয়ার। তাসকিন আহমেদ সংস্করণ।’