রান নেই–উইকেট নেই, তবু ম্যাচসেরা
ম্যাচে রান হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন শ। দুই দলে ছিলেন আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন, কাইল মায়ার্স, ফখর জামানরা। অ্যালেক্স হেলস আর জো ক্লার্ক তো ফিফটিও পেয়েছেন।
তবে এরপরও ডেজার্ট ভাইপারস ও আবুধাবি নাইট রাইডার্স ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন এমন একজন, যার কি না ব্যাটিং বা বোলিংয়ে কোনো অবদানই নেই। কাল আইএল টি–টোয়েন্টিতে ব্যাট বা বলে কোনো ধরনের ভূমিকা ছাড়াই ম্যাচসেরা হয়েছেন ইংল্যান্ড পেসার লুক উড।
ব্যাটিং ও বোলিং বিভাগ ছাড়া ক্রিকেটে অবদান রাখার সুযোগ থাকে কোথায়? ফিল্ডিংয়ে। এই ফিল্ডিং করেই ম্যাচসেরা হয়েছেন উড। নিয়েছেন ৩টি ক্যাচ, সঙ্গে আরও একটি নিতে সহায়তা করেছেন। যা ম্যাচের ভাগ্য পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে বলেই মনে করেছেন ম্যাচসেরা নির্বাচনে জড়িত ধারাভাষ্যকারেরা।
ব্যাটিংয়ে উডের অবদান রাখার সুযোগই ছিল না। তিনি মূলত মাঠে নেমেছেন সুপার সাব হিসেবে। বোলিংয়ে ২ ওভারে রান দিয়েছেন ২১। যেখানে তাঁর দল ভাইপার্সের দেওয়া ১৯৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নাইট রাইডাইর্স ১৪০ রানেই গুটিয়ে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে, অবদান রাখতে গিয়ে আরও পিছিয়ে দিয়েছেন উড!
সেটা অবশ্য ফিল্ডিংয়েই পুষিয়ে দিয়েছেন উড। শুরুটা কাইল মায়ার্সের ক্যাচ দিয়ে। অষ্টম ওভারে তখন নাইট রাইডার্সের রান ১ উইকেটে ৬৮। ওভারের পঞ্চম বলটিতে ছক্কা মেরে সবে খোলস ছেড়ে বেরিয়েছেন মায়ার্স। শেষ বলটিও ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কাই হতো, যদি না বাউন্ডারিতে উড না থাকতেন!
বাউন্ডারির বাইরে হাতে দিয়ে ক্যাচ ধরে উড বুঝতে পারেন নিজেকে মাঠের ভেতরে আটকে রাখা সম্ভব নয়। বল হাতে থাকা অবস্থায় বাউন্ডারি সীমানায় পা-ও ফেলা যাবে না। ঠান্ডা মাথায় এরপর বল ওপরের দিকে ছুড়ে মারেন তিনি। এরপর মাঠের বাইরে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য ঠিক করে ভেতরে এসে নিজেই ক্যাচ নেন। এই ছক্কাটি হলেও ম্যাচের ছন্দ চলে যেত নাইট রাইডার্সের কাছে। সঙ্গে মায়ার্সও স্বরূপে ফিরতেন।
এরপর চারিত আসালাঙ্কা ও সুনীল নারাইনের ক্যাচও নেন উড। প্রথমটির তুলনায় এই দুটি অবশ্য বেশ সহজই ছিল। ক্যাচ উড আরও একটি নিয়েছেন, তবে সেটিতে তাঁর নাম থাকবে না। সেটি আন্দ্রে রাসেলের ক্যাচ। ১৩তম ওভারে স্পিনার নাথান সোয়েটারের বলে মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে বড় শট খেলেন রাসেল। বাউন্ডারি লাইনে উড দাঁড়িয়ে না থাকলে এটিও নিশ্চিত ছক্কা।
তবে এবার উড নিজে নিতে পারেননি, নিজে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে পড়ে গিয়ে বল ছুঁড়ে মেরেছেন ডেভিড পেইনের হাতে। স্কোরকার্ডটাতে তাই নামটা পেইনেরই থাকবে! আউটের আগের বলেই ছক্কা মেরেছিলেন রাসেল। মায়ার্সের মতো তিনিও ছক্কা মারার পরের বলে কাটা পড়েছেন উডের কারণে।
উডের হাতে ম্যাচসেরার পুরস্কার তাই এ কারণেই। উডের অবশ্য নিজেরই বিশ্বাস করতে কষ্টই বোধহয় হয়েছে। ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে এসে তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না ফিল্ডিং করে এর আগে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছি। আমি শুধু বলের নিচে যেতে চেয়েছি, বেশি কিছু ভাবতে চাইনি। অনুশীলনে যেটা করি, সেটাই কাজে লাগানো চেষ্টা করেছি। ভাগ্য ভালো যে পেইন রাসেলের ক্যাচটা সম্পন্ন করেছে।’