সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে বাংলাদেশের অন্য লড়াই

কলম্বোয় সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের কাছে হারের পর আজ ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ।

তানজিমকে নিয়ে দুঃসংবাদ পেয়েছে বাংলদেশ দলশ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড

সফরটা মাঝপথে আসতে আসতেই কি একটু ক্লান্তি ভর করল বাংলাদেশ দলের ওপর! ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ এখনো বাকি, টি–টোয়েন্টি সিরিজ তো পুরোটাই রয়ে গেছে। এখনই হতোদ্যম হলে চলবে?

দীর্ঘ সফরে যখন পরপর দুটি ম্যাচে আপনি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কিছু্ করতে পারবেন না, তখন আসলে সবকিছু ক্লান্তিকর মনে হতেই পারে। গলে প্রথম টেস্ট ড্র করে এসে দ্বিতীয় টেস্টে চতুর্থ দিন সকালে হেরে যাওয়া, নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে ওয়ানডেতে নতুন দিন শুরুর আশায় প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই আরেক ধাক্কা—সব মিলিয়ে কলম্বোয় গত ১২টি দিন ঠিক স্বস্তিতে কাটাতে পারেনি বাংলাদেশ দল।

তারওপর আছে চোট, অসুস্থতা। রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আজ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে নিজেদের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ দলের জন্য। আবার এও ঠিক, সব সমস্যা অতিক্রম করে আজকের ম্যাচে ভালো কিছু হলে পাল্টে যেতে পারে দলের ক্লান্ত চেহারা।

আরও পড়ুন

কাল প্রেমাদাসায় অনুশীলনের আগে সংবাদ সম্মেলনে ওপেনার তানজিদ হাসান সে আহ্বানই জানালেন সতীর্থদের, ‘এখনো আমাদের সিরিজে ফেরার সুযোগ আছে। তিন ম্যাচের সিরিজ, এক ম্যাচ হয়েছে। পরের ম্যাচ আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি ফিরে আসতে পারি, আমরা ভালোভাবেই সিরিজে থাকব।’

মাঠের হতাশার সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রচণ্ড গরম এবং ভাইরাসজনিত ফ্লু আর পেটের পীড়া। এবারের সফরের কলম্বো পর্বে বাংলাদেশ দলকে তাই একটু রয়েসয়েই চলতে হচ্ছে। দ্বীপদেশটিতে গরম নতুন কিছু নয়, তবে বেশ কিছুদিন থেকেই এখানে ফ্লু আর ভাইরাসজনিত পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এমনিতে এ নিয়ে গুরুতর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না কাউকে, তবে খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে এসবও বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

প্রেমাদাসায় সংবাদ সম্মেলনে তানজিদ হাসান
প্রথম আলো

সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সে কারণেই খেলা হয়নি লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের। সুস্থ হয়ে তিনি অবশ্য অনুশীলনে ফিরেছেন, আজ তাঁর খেলারও কথা। কিন্তু পেসার তানজিম হাসানকে নিয়ে আছে দুঃসংবাদ। জ্বরের কারণে কাল অনুশীলন করা হয়নি তাঁর। শারীরিকভাবেও তিনি কিছুটা দুর্বল এখন। এ অবস্থায় কলম্বোর প্রচণ্ড গরমে আজ তাঁকে খেলানো ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে কাল সন্ধ্যায়ও চিন্তায় ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট।

আরও পড়ুন

গত কয়েক দিনে ফ্লু আর পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন দলের খেলোয়াড়–কোচসহ অনেকেই। কোচিং স্টাফ সদস্যদের মধ্যে তো নাকি চিকিৎসক মনজুর হোসাইন চৌধুরী ছাড়া কিছু না কিছুতে আক্রান্ত হয়েছেন সবাই। যদিও কারওই গুরুতর কিছু হয়নি। সবাই সুস্থও হয়ে গেছেন। টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য কাল জানালেন, ‘শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম খাওয়াদাওয়া বা পানি থেকে এটা হচ্ছে। পরে শুনলাম এখানে এই সমস্যা অনেকেরই হচ্ছে, আবার সেরেও যাচ্ছে। তারপরও দলের সবাইকে সাবধান থাকতে বলা হয়েছে।’

বাজে ফর্মে ঘুরপাক খাচ্ছেন লিটন
প্রথম আলো

তানজিমের মতো কাল অনুশীলনে আসেননি লিটন দাসও। কাগজ–কলমে তিনিও ‘বিশ্রামে’ ব্র্যাকেটবন্দী ছিলেন। যদিও শারীরিকভাবে সুস্থ লিটনের অনুশীলন না করাটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অন্য কারণে। গত আটটি ওয়ানডেতে দুই অঙ্কের ঘরে যেতে না পারার হতাশা যেন ইদানীং লিটনের শরীরী ভাষাতেও ফুটে উঠতে শুরু করেছে। সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে বাংলাদেশ আরও একবার তাঁর অভিজ্ঞতার ওপরই ভরসা রাখবে, নাকি অন্য কোনো বিকল্প দেখবে, সে প্রশ্নে দ্বিতীয়টি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আরও পড়ুন

লিটনকে আজ একাদশে দেখা না গেলে তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সে ক্ষেত্রে ব্যাটিং অর্ডারে কিছু রদবদল ঘটিয়ে দলে আনা হতে পারে শামীম হোসেনকে। পরিবর্তন আসতে পারে বোলিং আক্রমণেও। প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ খেলেছিল তিন পেসার আর দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে। আজও তা সেরকমই থাকবে, নাকি বাংলাদেশ পেসার একজন কমিয়ে তিন স্পিনার নিয়ে খেলবে, সে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা কাল রাতের মিটিংয়ে।

এবারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট কোনোমতেই পরিবর্তন করা সম্ভব ছিল না। সফরের আগেই তিনি বোর্ডের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন।
প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের অনুপস্থিতি নিয়ে টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবাল

তবে সে মিটিংয়ে ছিলেন না প্রধান কোচ ফিল সিমন্স, থাকবেন না আজ ড্রেসিংরুমেও। যুক্তরাজ্যে ডাক্তার দেখানোর অ্যাপয়েন্টমেন্ট আগেই করা ছিল কোচের। সে জন্য কালই তিনি কলম্বো ছেড়ে গেছেন, ফেরার কথা ৭ জুলাই। এর পরদিনই পাল্লেকেলেতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ।

সিমন্সের যুক্তরাজ্য যাওয়ার খবর জানিয়ে টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবাল সিরিজ কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের কাল বলেছেন, তাঁর যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আগে থেকেই। গত ফেব্রুয়ারিতেও সিমন্সের সেখানে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য তখন যেতে পারেননি। সিমন্স এবারও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জানিয়ে টিম ম্যানেজার বলেছেন, ‘এবারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট কোনোমতেই পরিবর্তন করা সম্ভব ছিল না। সফরের আগেই তিনি বোর্ডের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন।’

সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দীনের কাঁধে আজ বড় দায়িত্ব
প্রথম আলো

সিমন্সের অনুপস্থিতি দলে কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটা অবশ্য একটা প্রশ্ন। প্রধান কোচ হলেও দলে তাঁর ভূমিকা অনেকটা ‘উপদেষ্টা’র মতো। টিম মিটিংয়ে কথা বলা আর বিশেষ প্রয়োজনে খেলোয়াড়দের পরামর্শ দেওয়াতেই মূলত সীমাবদ্ধ থাকছে তাঁর কাজ। অনুশীলনে মূল ভূমিকায় থাকেন সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন, যাঁকে আজকের ম্যাচের জন্য বলতে হচ্ছে ‘ভারপ্রাপ্ত কোচ’।