লড়াই দুই ধারার টি–টোয়েন্টিরও

বিশ্বকাপ কে জিতবে? কার শক্তি বেশি? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়াটা প্রায় অসম্ভব। আমরা হয়তো অতীত পরিসংখ্যান ও সাম্প্রতিক ফর্মের ওপর ভিত্তি করে অনুমান করতে পারি। কিন্তু এসব যে সব সময় কাজ করে না, সেটা আমরা এবারের বিশ্বকাপেই বেশ কয়েকবার দেখেছি। কিন্তু তবু আলোচনার খাতিরে কিছুটা অনুমান করতেই হয়। সেদিক থেকে ইংল্যান্ডকে যেমন তাদের ব্যাটিং এগিয়ে রাখবে, তেমনি পাকিস্তানকে এগিয়ে রাখবে তাদের বোলিং।

দুই দলের কাগুজে সামর্থ্য অবশ্য শেষ কথা নয়। কে কেমন স্নায়ুচাপ সামলাতে পারছে, সেটাও ফাইনালের রাতে মুখ্য হয়ে ওঠে। অতীত অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। এই ইংল্যান্ড দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারেরই বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে।

বাটলার-স্টোকসরা ২০১৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্যর্থতা দেখেছে। ২০১৯-এ জিতেছে। এবারও তারা আরও একবার একই পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। পাকিস্তানের সে অভিজ্ঞতা নেই।

এই শিরোপার জন্য আজ লড়বে বাবর–বাটলারা
ছবি: আইসিসি

এই ইংল্যান্ড দল সাদা বলের সর্বকালের সেরা দলগুলোর ছোট্ট তালিকায় থাকবে। ২০১৫ সালের পর থেকে এ সময়টাকে ইংল্যান্ডের স্বর্ণযুগ বললে ভুল হবে না। এর মধ্যে ইংল্যান্ড একবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে, শিরোপা জিতেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের। এত লম্বা সময় বিশ্ব ক্রিকেটের চূড়ায় থাকলে একটা অহংকারবোধ তৈরি হয়। বাটলারদেরও সেটা আছে।

বাবর-রিজওয়ানদের গল্পটা ভিন্ন। গত কয়েক বছরে তারা টি-টোয়েন্টির ধারাবাহিক দলে পরিণত হয়েছে। তাদের সাফল্যটা এসেছে ছকে বাঁধা ক্রিকেট খেলে। প্রথম ১০ ওভারে ৭০ রান, উইকেট হাতে রেখে শেষে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করা—এটাই পাকিস্তানের ব্যাটিং। একটা মাঠে যে রান করলে জেতা যাবে, সেটাই তারা করে।

আরও পড়ুন

আর শাহিন শাহ আফ্রিদির নেতৃত্বে পাকিস্তানের বোলিং এতটাই শক্তিশালী যে তাদের জন্য ওই রানটাই বেশির ভাগ সময় যথেষ্ট মনে হয়। সেদিক থেকে ফাইনালে দুই ধরনের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেরও লড়াই হতে যাচ্ছে। কারণ, ইংল্যান্ড ক্রিকেটটা সম্পূর্ণ উল্টো। তারা সফল হয়েছে অল আউট ক্রিকেট খেলে।

দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে রিজওয়ানের কথাটা আলাদা করে বলতে চাই। সে এমন একজন ক্রিকেটার, যার খেলার মধ্যে আমি কোনো পরিবর্তন দেখি না। প্রতিদিন, প্রতি ইনিংসে একই রকম খেলে। বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানই একেক দিন একেক রকম ব্যাটিং করে থাকে। রিজওয়ান আলাদা। এটা তার সাফল্যের অন্যতম কারণ। একই জিনিস যখন মানুষ বারবার করতে থাকে, তখন তা মুখস্থ হয়ে যায়। রিজওয়ানেরও খেলাটা একদম মুখস্থ।

আরও পড়ুন

বাবর কিন্তু সে রকম নয়। সে দলের অধিনায়ক। আলাদা চাপ তার ওপর থাকেই। তবে সেমিফাইনালে ভালো করায় সে চাপটা কিছুটা হলেও সরে যাবে। তবে শিরোপা জয়ের প্রত্যাশার একটা ব্যাপার আছে, যা বাবরের ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলতেও পারে। রিজওয়ান কিন্তু মাঠে এসব কিছু নিয়ে যায় না। সে একদম শূন্য মস্তিষ্ক নিয়ে প্রতিটি ম্যাচ খেলতে নামে। বিশ্বকাপের ফাইনালে এ ধরনের মানসিকতার ক্রিকেটার ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুন

ইংল্যান্ডের বেন স্টোকসের কথাও এ ক্ষেত্রে চলে আসে। বিশ্বকাপ ফাইনালের অসম্ভব চাপে পারফর্ম করার অভিজ্ঞতা তার আছে। স্টোকসের মতো ক্রিকেটারদের প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি কাজ করে বড় মঞ্চে পারফর্ম করার। সে ইচ্ছাশক্তিই তাদের সব ইন্দ্রিয়কে জাগিয়ে তোলে। পুরো বিশ্বকাপে চোখে পড়ার মতো কিছু না করলেও বিশ্বকাপ ফাইনালের রাতটা হতে পারে স্টোকসের।

আজ মেলবোর্নে বৃষ্টির শঙ্কার কথা শুনছি। আশা করব, বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ যেন না হয়। পুরো খেলার পর যেন যোগ্য দলই জয়ী হয়।