টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ নয় এই টেস্ট, ম্যাচও একটিই। কে জিতবে, কে হারবে—এই প্রশ্ন ছাড়া টেস্টটার আর তেমন গুরুত্বই নেই। অবশ্য অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও সহ-অধিনায়ক লিটন দাসকে আইপিএলের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) না দিয়ে বিসিবি বুঝিয়ে দিয়েছে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের গুরুত্বও তাদের কাছে কম নয়। গতকাল তো টিম হোটেলে গিয়ে দলের সঙ্গে মিটিংও করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু টেস্টটা শুধু জিতলেই হবে না, জিততে হবে আধিপত্য বিস্তার করে—সংবাদমাধ্যমে এমন কথাও বলেছেন তিনি।
এর আগে দেশের মাটিতে ছোট দলের বিপক্ষে টেস্ট হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। ২০১৯ সালে তো আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টেস্টটাই হারল। কাজেই আয়ারল্যান্ডের মতো অনভিজ্ঞ এবং টেস্টে অচেনা দলের বিপক্ষেও সতর্ক থাকবে বাংলাদেশ।
মিরপুরে কাল দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা মেহেদী হাসান মিরাজ বললেন, ‘এমন নয় যে ভারতের বিপক্ষে খেললে ফোকাস বেশি থাকবে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেললে কম। ফোকাস একই রকম থাকে। হয়তো আত্মবিশ্বাস অনেক সময় বেশি থাকে, কোনো সময় কম থাকে। তবে আমার কাছে মনে হয়, বড় দলের চেয়ে ছোট দলের বিপক্ষে খেলায় মনোযোগ বেশি থাকে।’
সিরিজ বা ম্যাচের আগের দিনের সংবাদ সম্মেলনে সাধারণত আসেন অধিনায়ক বা কোচ। তবে কাল মিরাজকে সংবাদ সম্মেলনে পাঠিয়ে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান যেন একটু নির্ভারই থাকতে চাইলেন। সহ-অধিনায়ক লিটন দাসও থাকলেন সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে। এই টেস্টের আগে অবশ্য দুজনই আলোচনায় ছিলেন অন্য কারণে। তাঁরা এই টেস্ট খেলবেন নাকি আইপিএল। বিসিবি শেষ পর্যন্ত তাঁদের ছাড়পত্র দিয়েছে আয়ারল্যান্ড টেস্টের পর থেকে। সাকিব অবশ্য শেষ পর্যন্ত যাচ্ছেন না আইপিএল খেলতে।
টেস্টের আগে মিরপুরের উইকেট নিয়েও ভালোই আলোচনা হচ্ছে। কাল পর্যন্তও উইকেটে ঘাসের উপস্থিতি ছিল। আয়ারল্যান্ড দল অনুশীলন শেষ করে যাওয়ার পর উইকেটে আলগা ঘাস ছিটিয়ে রোল করা হয়েছে। মিরাজের ভাষায় উইকেট ‘ভালো’ বানানোরই নাকি চেষ্টা হচ্ছে। এই উইকেটে তিন পেসার খেলানোর পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। তবে গতকালই শুনতে হয়েছে একটা দুঃসংবাদ। সাইড স্ট্রেইনের কারণে টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। প্রায় সাত মাসের বিরতি কাটিয়ে সর্বশেষ ভারত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ফিরেছিলেন তাসকিন। তাঁর জায়গায় দলে ডাকা হয়েছে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা রেজাউর রহমানকে। শুধু তাসকিন নন, সন্তানের অসুস্থতার কারণে কিছুটা অনিশ্চিত তামিম ইকবালও। এর আগে চোটের কারণে ভারত সিরিজও মিস করেছিলেন এই ওপেনার।
রেজাউর ছাড়াই অবশ্য দলে তিনজন পেসার আছেন। আজ তাঁর অভিষেকের সম্ভাবনা তাই একটু কমই। তবে আয়ারল্যান্ড দলে অন্তত পাঁচজনের টেস্ট অভিষেক আজ হবেই। দলের ১৫ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জনেরই যে আছে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা! তিনজন তো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই খেলেননি এখনো। ২০১৯ সালে সর্বশেষ টেস্ট খেলা আয়ারল্যান্ডের প্রত্যাবর্তনই শুধু নয়, এক রকম নতুন শুরুই যেন হচ্ছে দীর্ঘ সংস্করণে।
আয়ারল্যান্ড এর আগে তাদের তিনটি টেস্ট খেলেছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর চার বছরের বিরতি দিয়ে আজ আবার টেস্টে ফিরছে দলটা। একে তো টেস্ট খেলায় অনভ্যস্ত, তার ওপর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেরও অংশ নয় তারা। সে কারণে এই সংস্করণ তাদের জন্য কোনো কিছুর হাতছানিও নয়। তারপরও খেলতে হবে এবং খেলার জন্য নিজেদের অনুপ্রাণিতও রাখতে হবে। আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবার্নিও কাল সেটাই বলছিলেন, ‘টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডেতে আপনার কিছু লক্ষ্য থাকে—বিশ্বকাপ বা এর বাছাইপর্ব খেলাটা যেমন। টেস্ট ম্যাচগুলো সে তুলনায় আমাদের জন্য অন্য রকম। চ্যালেঞ্জটাও ভিন্ন। তবে এটা আমাদের জন্য ভালো ক্রিকেট খেলার সুযোগও।’
মিরপুরে সাধারণত স্পিন-সহায়ক উইকেট থাকলেও এবার ঘাসের উপস্থিতিতে ভিন্ন কিছুরই ইঙ্গিত মিলছে। তবে সেসব নিয়ে খুব একটা ভাবতে চান না বলবার্নি, ‘টেস্ট ক্রিকেট না খেললে এর ব্র্যান্ড নিয়ে ভাবাটা কঠিন। আমরা পরিস্থিতি অনুযায়ীই খেলব, এটিকে খুব জটিল করতে চাই না। এটা ব্যাট আর বলেরই লড়াই হবে।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আমরা জানি বাংলাদেশ কতটা ভালো দল, বিশেষ করে এখানে। এটি চ্যালেঞ্জিং তো বটেই, তবে রোমাঞ্চকরও।’