পাকিস্তানের ‘ক্রিকেটের চাচা’ খুঁজছেন প্রিয় ক্রিকেটার তামিমকে
কৈশোর আর যৌবন পেরিয়ে এখন অবসর জীবন যাপন করছেন, তবে পাকিস্তান ক্রিকেটের প্রতি আবদুল জলিলের ভালোবাসা কমেনি একটুও।
মাথায় পাকিস্তানের ক্যাপ। মুখে সাদা দাড়ি। পরনের পাঞ্জাবিতেও পাকিস্তানের পতাকার ছাপ। একটু পরপর কেউ কেউ আসছেন ছবি তোলার আবদার নিয়ে। মিরপুরের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে আবদুল জলিলের ব্যস্ততার শেষ নেই।
এর ফাঁকে ফাঁকেই শোনালেন নিজের গল্প। পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। আবুধাবিতে কাজ করতেন ফোরম্যান হিসেবে। ওখান থেকেই শুরু ক্রিকেটের সঙ্গে যোগসূত্র। পাকিস্তানের ম্যাচ হলেই ছুটে যেতেন গ্যালারিতে। কৈশোর আর যৌবন পেরিয়ে এখন অবসর জীবন যাপন করছেন, তবে পাকিস্তান ক্রিকেটের প্রতি আবদুল জলিলের ভালোবাসা কমেনি একটুও।
গ্যালারিতে পতাকা ওড়ানো আর এই সমর্থনের গল্প তাঁকে এনে দিয়েছে খ্যাতি। ‘চাচায়ে ক্রিকেট’ উপাধি পাওয়া জলিল সেসব নতুন করে বলতে বলতেই ফিরে গেলেন ২৭ বছর আগে। ঢাকা তখনো এতটা আধুনিক হয়নি। যানজটের ভিড়ও ছিল না এত বেশি। তখনই প্রথম ঢাকায় খেলা দেখার স্মৃতি।
‘এই মাঠেই কি খেলা দেখতে এসেছিলাম?’ প্রশ্নে বোঝা যায়, হিসাবটা মেলাতে পারছেন না ঠিকঠাক। বাংলাদেশ-পাকিস্তান তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ দেখতে তিনি বসেছেন মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই মাঠের পথচলার শুরুর আরও অনেক পর।
নিজেই তা বুঝতে পেরে এবার বললেন, ‘ওই মাঠটা বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশে ছিল…।’ বুঝতে বাকি রইল না, এখনকার জাতীয় স্টেডিয়ামেই দেখতে এসেছিলেন ১৯৯৮ সালের মিনি বিশ্বকাপ। ওয়াসিম আকরামের খেলা দেখে তখন উচ্ছ্বাসে ভাসার স্মৃতিও তাঁর বেশ জ্বলজ্বলে।
এরপর আবার এবার। মাঝের সময়ে পৃথিবীর বহু দেশেই ঘুরে বেড়িয়েছেন। তবু বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তা সব সময়ই ছুঁয়ে যায় তাঁকে, ‘অনেক লম্বা সময় পর বাংলাদেশে এলাম। এখানকার মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসে। এলেই আনন্দ লাগে।’
তা তো দেখেই বোঝা যায়। মাঠের ভেতরে-বাইরে তাঁকে নিয়ে আগ্রহটা তো কোনো ক্রিকেটারের চেয়েও কম নয়। আছে অল্প সময়ে হয়ে যাওয়া বন্ধুত্বের গল্পও, ‘বাংলাদেশি এক বন্ধুর কাছ থেকে দাওয়াত পেয়েছি কক্সবাজারে যাওয়ার। ওখানে নাকি সমুদ্রসৈকত আছে। আমারও যাওয়ার খুব ইচ্ছা।’
আপাতত আবদুল জলিলের মনোযোগ অবশ্য ক্রিকেটেই। সব কটি ম্যাচ দেখবেন। এর আগে খোঁজ নিলেন শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের ফলটা কী। খুঁজলেন প্রিয় ক্রিকেটার তামিম ইকবালকেও। তিনি যে আরও সাত মাস আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন, খবরটা শুনে একটু মন ভারও হলো।
এরপর নিজেই বললেন, বড় এক পরিবার রেখে এসেছেন পাকিস্তানে। ক্রিকেটের বাইরের সময়টা এখন কাটে অবসরেই। সঙ্গে একটু নস্টালজিকও হয়তো হন—কতগুলো বছর কেটে গেল, কেবল ক্রিকেটের মায়াই কাটাতে পারলেন না আবদুল জলিল।