এনামুল মুক্তি নিলেন, মুক্তি দিলেন
মুক্তি!
হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে এই মুক্তি বাংলাদেশের টেস্টপ্রেমী দর্শকদের, এনামুল হকেরও নয় কি!
টেস্ট ওপেনার হয়ে অস্বস্তি নিয়ে কোনো ব্যাটসম্যানই যেমন ব্যাট করতে চান না, তেমনি ভক্তরাও এমন কিছু দেখতে চান না। কলম্বো টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ৪.২ ওভারে তাই এক অর্থে দুই পক্ষকেই মুক্তি দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার পেসার আসিতা ফার্নান্ডো। বোল্ড করেন এনামুলকে।
অবশ্য তাতে এনামুলের অবদানও ভুললে চলবে না। ডেলিভারিটি একটু পেছনের লেংথে পড়ায় এনামুল ভেবেছিলেন ব্যাকফুটে পাঞ্চ করবেন অফসাইডে, কিন্তু বলটি ভেতরে ঢোকায় অস্বস্তিতে পড়ে যান এনামুল, পড়িমড়ি করে ব্যাটটা সোজা করে নামিয়ে আনতে গিয়ে কানায় লেগে বোল্ড। ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় মাথা ঝাঁকাচ্ছিলেন এনামুল। কে জানে হয়তো নিজেকেই বোঝাচ্ছিলেন, অন্তত টেস্টে তাঁকে দিয়ে হয়তো আর হবে না!
কেন? সে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে পরিসংখ্যান। এনামুলের টেস্ট অভিষেক ২০১৩ সালে। এই এক যুগে তাঁর মাত্র ৮ টেস্ট খেলার বিপরীতে ৪৯ ওয়ানডে ও ২০ টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা বুঝিয়ে দেয়, তাঁর ব্যাটিংয়ের জাতটা আসলে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের। সেটাও এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্সেই পরিস্কার। ১৪ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরিতে করেন ৮৭৪ রান। অবশ্য বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে গত নভেম্বরে শেষ হওয়া জাতীয় লিগে ৭ ম্যাচে করেছিলেন ৭০০ রান। যদিও ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির সাফল্য জাতীয় দলে কখনোই অনূদিত করতে পারেননি এনামুল।
উল্টো গত এপ্রিলে প্রিমিয়ার লিগ চলাকালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দলে এনামুল ডাক পাওয়ায় অনেকেই ভ্রকুটি তুলেছিলেন। রান করছেন সংক্ষিপ্ত সংস্করণে আর ডাক পেলেন কি না টেস্ট দলে! চট্টগ্রাম টেস্টে এক ইনিংসেই ব্যাট করেছিল বাংলাদেশ, এনামুল সেই ইনিংসে ৩৯ রানে আউট হন।
এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও দলে জায়গা পান এনামুল। আর এই সিরিজেই তাঁর বাজে ব্যাটিং প্রকটভাবে ফুটে উঠছে। টেস্ট ক্রিকেটে যেখানে ওপেনারদের কৌশলগতভাবে যতটা সম্ভব নিখুঁত হতে হয়, সেখানে এনামুলের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে যেকোনো সময়ই আউট হতে পারেন! প্রতিটি ডেলিভারি খেলার সময় অস্বস্তি ফুটে উঠেছে।
যেমনটা দেখা গেল আজ কলম্বো টেস্টের প্রথম দিনেও। পেসার আসিতা ফার্নান্ডোর বলে এনামুল শূন্য রানে আউট হন ১০ বল খেলে, যেটা আসলে গলে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে তাঁর ব্যাটিংয়েরই ‘কার্বন কপি’—সেই ইনিংসেও ১০ বলে শূন্য করে আউট হয়েছিলেন এনামুল। মিল আছে আরও। তবে সেটা মোটেও স্বস্তির নয়।
গল টেস্টে আসিতার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন এনামুল। আজও উইকেটের পেছনেই ক্যাচ দিয়ে আউট হতে পারতেন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে এই আসিতার প্রথম বলেই স্লিপে তাঁর ক্যাচ নিতে পারেননি কেউ। পরের বলেও ক্যাচ দিয়েছিলেন স্লিপে, তবে বলটা নিচু হয়ে গিয়েছিল।
এনামুলের টেস্ট ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান একবার দেখে নেওয়া যাক—৮ ম্যাচে ১৪ ইনিংসে ১০.২১ গড়ে ১৪৩ রান। এই ১৪ ইনিংসে তাঁর স্কোর যথাক্রমে—১৩, ১, ৩, ১৮, ৭, ২২, ৯, ০, ২৩, ৪, ৩৯, ০, ৩ ও ০। প্রায় তিন বছর বিরতির পর এ বছর টেস্ট দলে ফিরে তাঁর খেলা চারটি ইনিংস বিবেচনা করা হয় তাহলে এই চার ইনিংসে ব্যাটিং গড় ১০.৭৫। তাঁর ক্যারিয়ার গড়ের চেয়ে একটু বেশি।
তবে পরিসংখ্যানের একটি পাতায় এনামুল সবার নিচে। টেস্টে অন্তত ১৪ ইনিংস টপ অর্ডারে (১ থেকে ৪ নম্বর) ব্যাটিং করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এনামুলের ব্যাটিং গড় সর্বনিম্ন।
এই পরিসংখ্যানের পাতায় রানেও সবার চেয়ে পিছিয়ে এনামুল। অর্থাৎ টেস্টে অন্তত ১৪ ইনিংস টপ অর্ডারে (১ থেকে ৪ নম্বর) ব্যাটিং করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এনামুলের রান সর্বনিম্ন।