জাতীয় ক্রিকেট লিগের চার দিনের আসরে টানা তিন মৌসুম ধরে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে বরিশাল। গত বছর শুরু এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও তারা আট দলের মধ্যে হয়েছে অষ্টম। মাঠের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের সঙ্গে সিনিয়র ক্রিকেটারদের দ্বন্দ্বেও জেরবার বরিশাল।
নতুন মৌসুম শুরুর আগে এ নিয়ে দলের মধ্যে বইছে অস্বস্তির হাওয়া। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্ব নিয়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির একাধিক খেলোয়াড়, কর্মকর্তা। পরিস্থিতি এমন যে বরিশাল দলকে দ্বন্দ্বমুক্ত করতে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটিকেও। সিনিয়রদের পরিবর্তে তরুণ কাউকে অধিনায়ক করার কথাও ভাবছে বোর্ড। বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান আকরাম খান প্রথম আলোকে এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছু অভিযোগের কথা শুনেছি। এবার কোচ-ম্যানেজারকে আলাদা করে এসব বিষয়ে বলে দেওয়া হবে। যদি তাতেও কাজ না হয়, তাহলে আমরা অ্যাকশন নেব।’
সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল দলের মধ্যে দুই সিনিয়র ক্রিকেটার ফজলে মাহমুদ ও সোহাগ গাজীর নেতৃত্বে দুটি বলয় গড়ে উঠেছে। এ দ্বন্দ্বের জেরেই গত বছর জাতীয় লিগের চার দিনের আসরের মাঝপথে অধিনায়কত্ব ছাড়েন ফজলে মাহমুদ। তখন তাঁর জায়গায় নেতৃত্বে আসেন তানভীর ইসলাম। পরে এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হন সোহাগ গাজী।
অধিনায়কত্ব ছাড়ার কারণ হিসেবে বোর্ডের কাছে পাঠানো ই–মেইলে দলের বাজে পারফরম্যান্স ও তরুণ নেতৃত্বকে সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন ফজলে মাহমুদ। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন মৌসুম বরিশালকে নেতৃত্ব দেওয়া ফজলে মাহমুদের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব ছিল দলের একটি পক্ষ। তাঁর বিরুদ্ধে দল গঠনে স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ ওঠার পর অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ নিয়ে ফজলে মাহমুদের ব্যাখ্যা অবশ্য বিসিবিকে জানানো কথাই, ‘আমি তরুণদের সুযোগ করে দিতে চেয়েছি। এ ছাড়া আর কোনো কারণ নেই।’
ফজলে মাহমুদের নেতৃত্ব ছাড়ার পরও বরিশাল দলের সমস্যা শেষ হয়নি। নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে এ বছর এনসিএল টি-টোয়েন্টি ও চার দিনের আসরের দল গঠন নিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী, বিভাগীয় কোচ বিসিবির কাছে ৩০ জনের প্রাথমিক স্কোয়াড পাঠান। এরপর জাতীয় নির্বাচকেরা সেখান থেকে চূড়ান্ত স্কোয়াড তৈরি করেন। কিন্তু এবার সে প্রক্রিয়া শুরুর আগেই সোহাগ গাজী ৩০ জনের একটি স্কোয়াড তৈরি করেন। এই ৩০ জনের ৩-৪ জন দলে আসার যোগ্য নন বলে মনে করেন দলসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। তা ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী বিভাগীয় দল কোনো ক্রিকেটার এককভাবে গঠন করতেও পারেন না।
সোহাগ অবশ্য এককভাবে স্কোয়াড নির্বাচনের কথা অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমি জাতীয় দলে তিন সংস্করণে খেলেছি। ১০ বছর ধরে কোনো দিন আমার কাছে স্কোয়াড নিয়ে পরামর্শ চাওয়া হয়নি। এ বছর বিভাগীয় কোচ আমার কাছে একটা ৩০ জনের স্কোয়াড পাঠিয়েছিলেন পরামর্শের জন্য। আমি তা দেখে ঠিক আছে বলেছি।’
সিনিয়র ক্রিকেটারদের দ্বন্দ ছাড়াও বরিশাল দল নিয়ে অভিযোগ আছে আরও। সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল দলে এক ক্রিকেটারের ম্যাচ ফি অন্য ক্রিকেটার নিয়ে যান—অতীতে এমন অভিযোগও নাকি বিসিবির কাছে এসেছে। বরিশালের বাইরের ক্রিকেটাররা তাই এই দলে খেলে স্বস্তি বোধ করেন না।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে গত বছর দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা তারিক উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, বোর্ডের এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া দরকার। খেলোয়াড়েরা যেন খেলার মধ্যে থাকে। তারা যদি ম্যানেজমেন্টের বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে এটা তাদের জন্য সম্মানজনক হয় না। কাউকে কোনো দায়িত্ব দিলে সেটার জবাবদিহিও থাকা দরকার।’