বল ট্র্যাকিং কীভাবে কাজ করে, জানতে চান ওয়ার্নার
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশের সমালোচনার মধ্যে ডিআরএসের (ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম) স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি এই ওপেনার বলেছেন, বল ট্র্যাকিং প্রযুক্তি হক–আই কীভাবে কাজ করে, সেটা কেউ তাঁদের বুঝিয়ে বলেনি। সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হলে কখন রিভিউ নেবেন আর কখন নেবেন না, সেই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেওয়া যেত বলে মন্তব্য তাঁর।
শুধু বল ট্র্যাকিং প্রযুক্তির স্বচ্ছতাই নয়, ওয়ার্নার আম্পায়ারদের কাজের খতিয়ানও প্রচারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, একজন ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করতে নামলে যেভাবে ক্যারিয়ারে কত রান, কত ফিফটি–সেঞ্চুরি করেছেন তুলে ধরা হয়, একইভাবে একজন আম্পায়ারেরও ক্যারিয়ারজুড়ে দেওয়া সঠিক ও ভুল সিদ্ধান্তের তথ্য প্রকাশ করা হোক।
ওয়ার্নারের মুখে আম্পায়ার ও ডিআরএস–সম্পর্কিত মন্তব্যগুলো এসেছে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সাম্প্রতিক অভিযোগের জেরে। সোমবার লক্ষ্ণৌর একানা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার ২০৯ রান তাড়া করতে নামার পর দিলশান মাদুশঙ্কার বলে এলবিডব্লু হন ওয়ার্নার। আম্পায়ার জোয়েল উইলসন আউটের সংকেত দেওয়ার পর তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে রিভিউ চান ওয়ার্নার।
রিভিউয়ে পিচিং ও ইমপ্যাক্ট লাইনে থাকলেও উইকেট হিটিংয়ের ক্ষেত্রে আম্পায়ার্স কল আসে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি হালকাভাবে লেগ স্টাম্প ছুঁয়ে যেত। যার অর্থ, আম্পায়ার উইলসন আউট না দিলে ওয়ার্নার চূড়ান্ত রায়ে আউট হতেন না। উইলসন আউট দেওয়াতেই ৬ বলে ১১ রান করে ফিরতে হয় তাঁকে। ওই সময় ওয়ার্নারকে ক্ষুব্ধ হতে দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে নিজের ব্যাট দিয়ে প্যাডে সজোরে আঘাত করেন। মাঠ ছাড়ার আগে তাঁকে আম্পায়ার উইলসনের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কিছু একটা বলতেও দেখা যায়।
ওয়ার্নারের এই অসন্তোষ প্রকাশকে অনেকেই ভালোভাবে নেননি। নিউজিল্যান্ডের পেসার ও ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল তাঁর শাস্তি দাবি করেন। এর জেরে মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ওয়ার্নার। আউটের মুহূর্তে আম্পায়ারের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছিল জানিয়ে ওয়ার্নার বলেন, ‘সাধারণত, যখন আমার পায়ের সামনের অংশে কিছু আঘাত করে, আমি জানি যে এটা লেগ সাইডের দিকে চলে যাচ্ছে। আমি জোয়েলকে শুধু বলেছিলাম, কী ঘটেছে আর কেন আউট দিয়েছে। সে বলল, বলে সুইং–ব্যাক করেছে। যদি সে এটা মনে করে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে, সেটা তার কৃতিত্ব। কিন্ত এরপর যখন রিপ্লেতে উন্মোচিত হলো আসলে কী ঘটেছিল, তখন বিরক্তই লাগার কথা। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বল ট্র্যাকিং প্রযুক্তি নিয়ে অসন্তুষ্ট ওয়ার্নার। ডিআরএসে হক–আই প্রযুক্তির সাহায্যে বলের গতিপথ কী ছিল দেখানো হয়। ওয়ার্নারের দাবি, এটি কীভাবে কাজ করে থাকে, সেটা তাদের কখনোই জানানো হয়নি। জানলে যেকোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষে রিভিউ নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতো বলে তিনি মনে করেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের বল ট্র্যাকিংয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। একজন খেলোয়াড় হিসেবে এটা হতাশার, যখন আপনি ভাবছেন এটা কি সোজা ওপরের দিকে যাবে? ইমপ্যাক্ট পয়েন্টসটা কী? আমাকে কখনোই হক–আই সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়নি। আমাদের ব্যাখ্যা করা হয়নি এই প্রযুক্তিটা ঠিক কীভাবে কাজ করে। এটা শুধু টেলিভিশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। যদি আমাদের বলা হতো এটা কীভাবে কাজ করে, তাহলে আমরা কখনো কখনো রিভিউ চাইতাম না, কখনো কখনো চাইতাম।’
বল ট্র্যাকিং প্রযুক্তির ব্যাখ্যার পাশাপাশি আম্পায়ারদের নিয়েও একটা দাবি জানিয়ে রেখেছেন ওয়ার্নার। রাগবি ও ন্যাশনাল ফুটবল লিগের উদাহরণ টেনে ৩৬ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘আমি যা দেখতে চাই, তার পরিপ্রেক্ষিতে বলার মতো অনেক কিছু আছে। এটা সম্ভবত বাস্তবায়িত হবে না...ব্যাটসম্যানরা মাঠে নামলে তাদের পরিসংখ্যান দেখানো হয়। যখন আম্পায়ারদের নাম ঘোষণা করা হয়, তারা স্ক্রিনে আসে, তখন বোর্ডে তাদের পরিসংখ্যানও আমি দেখতে চাই। ন্যাশনাল রাগবি লিগ ও ন্যাশনাল ফুটবল লিগে এই পরিসংখ্যানগুলো দেখায়। আমার মনে হয়, (ক্রিকেটেও চালু করলে) দর্শকদের দেখার জন্যও এটা দারুণ ব্যাপার হবে।’