রিশাদ বল ঘুরালেন, ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচও
মিরপুর স্টেডিয়ামে তখন টান টান উত্তেজনা। মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফিল্ডারদের চোখে কৌতূহল। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখা দর্শকদের মনেও একই প্রশ্ন, ‘রিশাদ হোসেনের এই বলে কী হবে?’ রিশাদের প্রতি বলেই জেগে উঠছিল এমন সম্ভাবনা।
আর তিনিও এমন কিছু করলেন, যা তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আগে কখনো হয়নি। বল ঘোরালেন, তাতে বিভ্রান্ত হলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। একে একে ক্যারিবীয় পাঁচ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে রিশাদ পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ‘ফাইফার’ (এক ইনিংসে ৫ উইকেট)। শুধু তাঁর নিজের ক্যারিয়ারে নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের জন্যও এটা বিশেষ মুহূর্ত। কারণ, এর আগে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে কোনো ডানহাতি স্পিনারই ৫ উইকেট নিতে পারেননি।পরে আরও ১টি উইকেট নিয়ে গড়েছেন রেকর্ডও। বাংলাদেশের প্রথম স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে ৬ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন।
আজ যখন বাংলাদেশের হারের ভয় চেপে বসেছে, তখন এই লেগ স্পিনারের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক। ব্যাট হাতেও তিনি দলের জন্য জরুরি কাজটা করে এসেছেন। তাঁর ১২ বলে ২৬ রানের ইনিংসের সৌজন্যেই বাংলাদেশ কোনোমতে ২০০ রানের গণ্ডি পার হয়েছিল। স্কোর দাঁড়ায় ২০৭।
কিন্তু সেই ২০৭ রান মোটেই নিরাপদ মনে হচ্ছিল না। কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্বোধনী জুটিই ৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পাওয়ার প্লে শেষ হলো। ম্যাচের ১১তম ওভারে রিশাদের হাতে বল আসতেই ম্যাচের চিত্র বদলে গেল। তাঁর ঘূর্ণিতে বোকা বনতে লাগলেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা।
শুরুটা হয় অ্যালিক আথানেজেকে দিয়ে। তাঁকে এলবিডব্লু করে ব্রেন্ডন কিংয়ের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ। সেই যে শুরু, এরপর রিশাদের ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে কিসি কার্টি, শেরফান রাদারফোর্ড, ব্রেন্ডন কিং ফিরলেন ড্রেসিংরুমে।
রিশাদের ৫ উইকেট পূর্ণ হয় তাঁর বলে কাট করতে গিয়ে উইকেট-কিপারের হাতে রোস্টন চেজ ক্যাচ দিলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ৫ উইকেটে ৯২। বাংলাদেশের জয়টাও এসেছে রিশাদের হাতে। জেইডেন সিলসকে গুগলিতে বিভ্রান্ত করে স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে অলআউট করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। বংলাদেশ জিতেছে ৭৪ রানে। রিশাদের বোলিং বিশ্লেষণ—৯ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট! কী দারুণভাবেই না ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন বাংলাদেশের এই লেগ স্পিনার।
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের একটা লেগ স্পিনারের জন্য অপেক্ষা ছিল অনেক দিনের। সাদা বলের ক্রিকেটে রিশাদ প্রায় বছর দুয়েক ধরে থিতু হয়েছেন। এর আগে ১১টি ওয়ানডে খেলেছেন। কিন্তু কখনো ৩ উইকেটই পাননি। এবার ৬ উইকেট নিয়ে রিশাদ শুধু মাইলফলকই ছুলেন না, হয়তো সেই বহু পুরোনো আক্ষেপেরও অবসান ঘটালেন—‘আহা, এই ম্যাচটায় যদি একটা ভালো লেগ স্পিনার থাকত!’