হাইস্কুলের গণিত শিক্ষক থেকে আম্পায়ার, স্যাম নোগাইস্কির টেস্ট অভিষেক সিলেটে

অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার স্যাম নোগাইস্কিছবি: বিসিবি

‘দ্য হাচিন্স স্কুল ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার মাধ্যমিক স্তরের গণিত শিক্ষক এবং জাতীয় প্যানেলের ক্রিকেট আম্পায়ার।’

লিংকডইনে স্যাম নোগাইস্কির প্রোফাইলে লেখা এই কথাটা প্রথমে শুনলে হয়তো মনে হবে, দুই জগতের মানুষ এক দেহে! গণিত পড়ান, আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সিদ্ধান্ত দেন!

অবিশ্বাস্য মনে হলে গুগলে একবার খুঁজে দেখতে পারেন ভদ্রলোককে। ইএসপিএনক্রিকইনফোতে পাওয়া যাবে তাঁর নাম। ক্লিক করলেই বোঝা যায়—বিষয়টা একদমই রসিকতা নয়।

৪৬ বছর বয়সী নোগাইস্কির আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার যথেষ্ট সমৃদ্ধ। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক তাঁর। এই আট বছরে ছেলেদের ২৫টি ওয়ানডে (২৩টিতে মাঠের আম্পায়ার) আর ৪২টি টি–টোয়েন্টিতে (৩৩টিতে মাঠের আম্পায়ার) দায়িত্ব পালন করেছেন।

মেয়েদের ক্রিকেটেও ছিলেন সক্রিয়—দুই সংস্করণ মিলিয়ে ২৯ ম্যাচে দাঁড়িয়েছেন আম্পায়ার হিসেবে। প্রথম শ্রেণি, লিস্ট ‘এ’ ও ঘরোয়া টি–টোয়েন্টিতেও তিনি পরিচিত মুখ। এত কিছু দেখে মনে হতে পারে, এই গণিত শিক্ষককে টেস্ট ক্রিকেটেও দেখা গেলে খারাপ হতো না। সেটাই–বা বাদ থাকবে কেন!

সংক্ষিপ্ত সংস্করণে বেশ আগে থেকেই আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন স্যাম নোগাইস্কি
ছবি: আইসিসি

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ সকাল থেকেই তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু। বাংলাদেশ–আয়ারল্যান্ড টেস্টে প্রথম বল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যাম নোগাইস্কির টেস্ট আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক ঘটছে।

অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া রাজ্যের হোবার্টে অবস্থিত হাচিন্স স্কুলে ২০১২ সাল পর্যন্ত গণিতের শিক্ষক ছিলেন নোগাইস্কি। সেই বছরই তিনি যোগ দেন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় আম্পায়ার প্যানেলে। চার বছর পর জায়গা পান ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক প্যানেলে। ওই মৌসুমেই ভারতের রঞ্জি ট্রফিতে আম্পায়ার হিসেবে দাঁড়ান।

গণিতের শিক্ষক যে ক্রিকেটে দুর্দান্ত আম্পায়ারও হতে পারেন—নোগাইস্কি তার জীবন্ত উদাহরণ। চলতি বছরসহ টানা তিনবার হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা আম্পায়ার। গত এপ্রিলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) কাছ থেকে এই পুরস্কার হাতে পেয়েছেন তিনি।

হাচিন্স স্কুলের ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, ২০১১ ও ২০১২ সালেও তাসমানিয়ার বর্ষসেরা আম্পায়ার ছিলেন তিনি। ২০১২ সালেই তাসমানিয়ার প্রথম আম্পায়ার হিসেবে জাতীয় প্যানেলে জায়গা পান।

আরও পড়ুন

নোগাইস্কির আন্তর্জাতিক অভিষেক ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি, জিলংয়ে অস্ট্রেলিয়া–শ্রীলঙ্কা টি–টোয়েন্টি ম্যাচে। একই বছরের অক্টোবরে পাপুয়া নিউ গিনি ও স্কটল্যান্ডের ওয়ানডে ম্যাচে তাঁর ওয়ানডে অভিষেক হয়।

এরপর মেয়েদের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ছেলেদের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ—সব জায়গাতেই দেখা গেছে তাঁকে। তাসমানিয়ার ইতিহাসে তিনিই প্রথম, যিনি আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে দাঁড়িয়েছেন আম্পায়ার হিসেবে, আর দ্বিতীয় যিনি পরিচালনা করেছেন আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ।

ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে আম্পায়ার হয়েছেন স্যাম নোগাইস্কি
ছবি: আইসিসি

আর দশজন ছেলের মতো নোগাইস্কিও ছোটবেলায় ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন। তাসমানিয়ান প্রিমিয়ার ক্রিকেটে ক্ল্যারেন্স ক্লাবের হয়ে খেলেছেন অলরাউন্ডার হিসেবে। কিন্তু চোট তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন থামিয়ে দেয়।

গত বছর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি খেলাটা ভীষণ ভালোবাসি। এমনকি যখন আম্পায়ারিং করি না, তখনো ক্রিকেট দেখি। ১৮ বছর বয়সে চোট পাই। এক বছর মাঠের বাইরে থাকতে হয়। তারপর পরীক্ষামূলকভাবে আম্পায়ারিং শুরু করি।’

তবে এক বছর পর আবার খেলায় ফিরেছিলেন নোগাইস্কি। কিন্তু খেলোয়াড় না হয়ে কেন শেষ পর্যন্ত আম্পায়ার হলেন—তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নিজেই, ‘আবার খেলায় ফিরেছিলাম, কিন্তু প্রায় পাঁচ বছর পর বুঝলাম, আমার আসল টানটা আম্পায়ারিংয়ের দিকেই। সত্যি বলতে, আমি খেলোয়াড় হিসেবে যতটা ভালো, তার চেয়ে ভালো আম্পায়ারিংয়ে।’

ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলিয়ে নোগাইস্কির আম্পায়ারিং অভিজ্ঞতা দুই দশকের বেশি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসতে তাঁকে পার হতে হয়েছে অনেক ধাপ। তাঁর কথায়, ‘প্রায় দুই দশক ধরে আম্পায়ারিং করছি। গত ১২ বছর ধরে আমি জাতীয় প্যানেলে। এখানে কেউ ধাপে ধাপে ওপরে উঠলে শীর্ষ চার আম্পায়ার আন্তর্জাতিক প্যানেলের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন।’

একসময় ক্লাসরুমে যিনি বোর্ডে অঙ্ক কষাতেন, এখন তিনিই মাঠে কষছেন ‘নো’ আর ‘আউট’-এর অঙ্ক। স্যাম নোগাইস্কির গল্পটা তাই শুধু এক আম্পায়ারের নয়, একজন মানুষ কীভাবে নিজের পছন্দের পথে ফিরে গিয়ে তাতে সেরা হয়ে ওঠেন, তার দারুণ উদাহরণ।

আরও পড়ুন