ভারতের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের পিচ পাল্টানোর অভিযোগ

অভিযোগের আঙুল বিসিসিআইয়ের প্রতিছবি: এএফপি

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ভারত। আইসিসির অনুমতি না নিয়েই ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এই ম্যাচের উইকেট পরিবর্তন করেছে বলে বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন।

আরও পড়ুন

সংবাদমাধ্যমটি আরও দাবি করেছে, সেমিফাইনাল জিতে ভারত ফাইনালে উঠতে পারলে ‘তাঁরা একই কাজ করতে পারে।’ অর্থাৎ রোহিত শর্মার দল ফাইনালে উঠলে উইকেট পাল্টানো হতে পারে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছেন ব্রিটেনের খ্যাতিমান ক্রীড়া সংবাদকর্মী, লেখক ও উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের সম্পাদক লরেন্স বুথ। আগামী রোববার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ ফাইনাল। এই মাঠে লিগ পর্বে অনুষ্ঠিত চার ম্যাচের তিনটিতে ভিন্ন ভিন্ন উইকেটে খেলা হয়েছে।

আইসিসির এই ইভেন্টে উইকেট প্রস্তুত করা হয়েছে সংস্থাটির কনসালট্যান্ট অ্যান্ডি অ্যাটকিনসনের তত্ত্বাবধানে। কোন ম্যাচ কোন উইকেটে খেলা হবে, এ বিষয়ে আয়োজক দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আগেভাগেই সবকিছু চূড়ান্ত করে রেখেছিলেন অ্যাটকিনসন। কিন্তু মেইল অনলাইন দাবি করেছে, টুর্নামেন্ট এগিয়ে চলার সঙ্গে অ্যাটকিনসনের সঙ্গে সেই চুক্তিকে আর পাত্তা দেওয়া হয়নি। ভারত-নিউজিল্যান্ড আজকের সেমিফাইনাল ম্যাচটি এমন উইকেটে খেলা হবে, যেখানে এর আগে দুটি ম্যাচ হয়েছে। ভারতের স্পিনারেরা যেন সাহায্য পান, সে জন্যই এমন ব্যবস্থা বলে দাবি করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে গতকাল পিচ দেখছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা
ছবি: রয়টার্স

ভারত-নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনাল ম্যাচের জন্য ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ৭ নম্বর উইকেট পূর্বনির্ধারিত ছিল। লিগ পর্বে এ মাঠে অনুষ্ঠিত চার ম্যাচের একটিও ৭ নম্বর উইকেটে খেলা হয়নি। সংবাদমাধ্যমটি দাবি করেছে, আইসিসি ও বিসিসিআইয়ের ৫০ জনের বেশি অফিশিয়ালের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের খুদে বার্তা থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচ ৭ নম্বর উইকেট থেকে সরিয়ে ৬ নম্বর উইকেটে স্থানান্তর করা হয়েছে। লিগ পর্বে এই উইকেটে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিফাইনাল ম্যাচের উইকেট পাল্টানো নিয়ে অ্যাটকিনসনকে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

সেমিফাইনালের উইকেট পাল্টানোয় ফাইনালেও একই কাজ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনে। ফাইনালের প্রস্তুতি নিয়ে অ্যাটকিনসন আয়োজক দেশের বোর্ডের কাছ থেকে সরাসরি কোনো উত্তর না পাওয়ায় ধৈর্যহারা হয়ে গত শুক্রবার নিজেই আহমেদাবাদে গিয়েছিলেন। মেইল অনলাইন দাবি করেছে, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড প্রথম ম্যাচটি পূর্বনির্ধারিত ৬ নম্বর উইকেটে অনুষ্ঠিত হলেও পরের তিনটি ম্যাচ পূর্বনির্ধারিত উইকেটে খেলা হয়নি বলে তারা জানতে পেরেছে। আর অ্যাটকিনসন এ নিয়ে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো মেইলে জানিয়েছেন ‘যথাযথ প্রক্রিয়া কিংবা পূর্বসতর্কতা ছাড়াই’ এসব পরিবর্তন করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি আরও দাবি করেছে, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অ্যাটকিনসনকে আইসিসির সিনিয়র ইভেন্টস ম্যানেজার জানিয়েছিলেন, ভারত-পাকিস্তান (১৪ অক্টোবর) ম্যাচটি পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ৭ নম্বর উইকেটে খেলা হয়েছে। কিন্তু আসলে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় ৫ নম্বর উইকেটে।

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম
ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপের ফাইনাল নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের ৫ নম্বর উইকেটে খেলানোর সুপারিশ করেছেন অ্যাটকিনসন। এই উইকেটে এর আগে মাত্র একটি ম্যাচ হয়েছে। কিন্তু মেইল অনলাইনের দাবি, গত সপ্তাহে অ্যাটকিনসন জানতে পারেন, ফাইনাল ম্যাচটা ৬ নম্বর উইকেটে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই উইকেটে এর আগে দুটি ম্যাচ হয়েছে।

অ্যাটকিনসন বিসিসিআইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এসব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কার? বিসিসিআই বলেছে গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (জিসিএ)। কিন্তু গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, তারা বিসিসিআইয়ের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করছে এবং অনুরোধগুলো এসেছে সরাসরি ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে।

আরও পড়ুন

অ্যাটকিনসনের পাঠানো মেইলের কিছু অংশ প্রকাশ করেছে মেইল অনলাইন। সেখানে অ্যাটকিনসন সতর্কতার সুরে বলেছেন, ‘এসব কাজের কারণে অবশ্যই এটা ভাবার সুযোগ আছে যে এটাই কি প্রথম আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল, যেখানে পিচ বিশেষভাবে পছন্দ ও প্রস্তুত করা হয় টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা আয়োজক দেশের বোর্ডের উচ্চস্তরের অনুরোধে।’

মেইলে অ্যাটকিনসন আরও যোগ করেন, ‘কিংবা ব্যাপারটা কি এমন হবে যে মুখোমুখি হওয়া দুই দলের কারও প্রতি সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীন থেকে কোনো প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে (উইকেট) বাছাই ও প্রস্তুত করা হবে, কারণ উপলক্ষর (ম্যাচ) জন্য এটাই আদর্শ পিচ?’

বিসিসিআইয়ের এক মুখপাত্র এ নিয়ে বলেছেন, ‘আইসিসির স্বাধীন পিচ কনসালট্যান্ট আয়োজকদের সঙ্গে এবং ভেন্যুতে পিচের প্রস্তাবিত বরাদ্দ নিয়ে কাজ করছেন। আর এত দীর্ঘ পরিসরের একটি ইভেন্টে এটি চলমান প্রক্রিয়া।’