টি–টোয়েন্টি বলেই কি আশাবাদী হতে পারে বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেকোনো সংস্করণের ক্রিকেটই কঠিন। তবে টি–টোয়েন্টিটা বোধ হয় বাংলাদেশের জন্য অত কঠিন নয়। পরিসংখ্যান অন্তত সেটাই বলে।

ফিল্ডিং অনুশীলনে পেসার শরীফুল ইসলাম, পাশে মেহেদী হাসান।এএফপি

সময় এখন লিটন দাসের। কথাটাকে অন্যভাবে নেবেন না। ব্যাটে রান নেই বলে হয়তো শেষ দুই ওয়ানডেতে খেলেননি, কিন্তু টি–টোয়েন্টিতে তিনিই অধিনায়ক এবং বাংলাদেশ দলের সামনে এখন অসংখ্য টি–টোয়েন্টি ম্যাচ। এ বছরের সেপ্টেম্বরে টি–টোয়েন্টি এশিয়া কাপ, এরপর আগামী বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কাজেই সময় এখন টি–টোয়েন্টির, এখন সময় টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাসেরও।

তবে সময়টা ‘সুসময়’ হবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। পাল্লেকেলেতে আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টির প্রথমটি। পরের দুই ম্যাচ ডাম্বুলা আর কলম্বোতে। শ্রীলঙ্কা সফরের দ্বিতীয় টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ যে ধারাবাহিকতা মেনে এগিয়েছে, তাতে টি–টোয়েন্টি নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো মানুষ হয়তো খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না। যদিও অতীত অভিজ্ঞতা আশা জাগায়, শ্রীলঙ্কায় টি–টোয়েন্টিতে ভালো কিছু হতেও পারে।

তা ছাড়া ক্রিকেটীয় ভাষায় বললেও বলতে হয় এটা নতুন একটি সিরিজ, সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্করণের ক্রিকেট। ওয়ানডে, টেস্টের কথা এখানে কেন আসবে! কাল পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে সিরিজ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটনও বলেছেন, ‘এটা আলাদা একটা সংস্করণ। সবাই জানে টি–টোয়েন্টি কীভাবে খেলতে হয়। আমরা সেভাবেই চেষ্টা করব।’

টি–টোয়েন্টিতে রিশাদ–শরীফুলরা নামবেন নতুন উদ্যমে।
এএফপি

শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেকোনো সংস্করণের ক্রিকেটই কঠিন। তবে টি–টোয়েন্টিটা বোধ হয় বাংলাদেশের জন্য অত কঠিন নয়। পরিসংখ্যান অন্তত সেটাই বলে। শ্রীলঙ্কায় এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচটি টি–টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশ জিতেছে তিনটিতে, শ্রীলঙ্কা জিতেছে দুটি। তবে সেই দুই ম্যাচের একটি আবার পাল্লেকেলেতে, যেখানে আজ সন্ধ্যায় সিরিজের প্রথম ম্যাচ। ২০১৩ সালের মার্চে এ মাঠে একমাত্র টি–টোয়েন্টিটি খেলে হেরেছিল বাংলাদেশ দল।

পরিসংখ্যান মাথায় রেখেই হয়তো এই সিরিজে নিজেদের পরিষ্কার ফেবারিট বলছেন না স্বাগতিক অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কা। কাল সংবাদ সম্মেলনে প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি সমীহই দেখালেন তিনি, ‘বাংলাদেশ ভালো টি–টোয়েন্টি দল। তবে তারাও আমাদের মতোই অনভিজ্ঞ। আমি মনে করি না যে আমরা তাদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। সিরিজটা কঠিন হবে।’

আরও পড়ুন

টি–টোয়েন্টি অভিজ্ঞতার কথা বললে শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে রাখবেন তাদের এলপিএল ও আইপিএলে খেলা ক্রিকেটাররা। দলের চার পেসারের মধ্যে বিনুরা ফার্নান্দো ছাড়া তিনজনই আইপিএলে খেলেছেন। তবে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ায় শ্রীলঙ্কা টি–টোয়েন্টি সিরিজে পাচ্ছে না লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে। তাঁর জায়গায় আছেন জেফ্রি ভ্যান্ডারসে। টি–টোয়েন্টি অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা আছে পেসার ইশান মালিঙ্গার।

পাল্লেকেলের ব্যাটিং উইকেটে টি–টোয়েন্টিতেও ২০০ রান হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আসালাঙ্কা অবশ্য ১৮০ রান হলেই খুশি। অন্যদিকে লিটনের কাছে উইকেটটাকে ব্যাটসম্যান, পেসার, স্পিনার—সবার জন্যই ভালো মনে হয়েছে। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা নিয়ে বলতে গিয়ে এগিয়ে রেখেছেন তাঁদের বোলিংটাকে, ‘শ্রীলঙ্কা হোম কন্ডিশনে ভালো দল। বিশেষ করে তাদের বোলিংটা ভালো। একটু মিস্ট্রি টাইপ বোলার আছে।’

প্রথম টি–টোয়েন্টিতে দেখা যেতে পারে দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা সাইফউদ্দিনকেও।
এএফপি

তিন সংস্করণের ক্রিকেটের মধ্যে বাংলাদেশ একটা সময় ওয়ানডে বেশ ভালো খেলত। টেস্ট কখনো ভালো, কখনো খারাপ। আর টি–টোয়েন্টি খুবই খারাপ। এখন টেস্টে মাঝেমধ্যে ভালো কিছু উঁকি দিলেও ওয়ানডে, টি–টোয়েন্টিজুড়ে কেবলই হতাশা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবার ২–১ এ ওয়ানডে সিরিজ হারকে বেশি যন্ত্রণাময় করে তুলেছে পরশু শেষ ম্যাচে পাল্লেকেলের ব্যাটিং উইকেটেও ৯৯ রানের হার। সিরিজের তিন ম্যাচের একটিতেও পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি বাংলাদেশ। দলের ব্যাটিং সামর্থ্যটা তাই নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবার শ্রীলঙ্কায় এসে।

ভিন্ন সংস্করণ, নতুন সিরিজ এবং শ্রীলঙ্কায় টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সুখস্মৃতি সত্ত্বেও আজ থেকে শুরু সিরিজটিকে ওয়ানডে–ব্যর্থতার আঁচ কিছুটা হলেও স্পর্শ করবে। আর যদি শুধু টি–টোয়েন্টির কথা বলেন, বাংলাদেশের নিকট অতীত সেখানেও ব্যর্থতার কালিতে লেখা। গত মে মাসে শারজায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে তিন টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতলেও পরের দুই ম্যাচেই হেরে বাংলাদেশ সিরিজ হেরেছে ২–১ এ। সেখান থেকে লাহোরে উড়ে গিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩–০তে ধবলধোলাই।

আরও পড়ুন

২০২৬ বিশ্বকাপের আগে দীর্ঘ টি–টোয়েন্টি যাত্রায় সেটি ছিল বাংলাদেশের শুরু। শুরুটা খারাপ হলেও সামনেও আছে অনেক টি–টোয়েন্টি ম্যাচ। পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে শুধু এ বছরই আছে ৯টি টি–টোয়েন্টি। ভারতের সিরিজটি পিছিয়ে না গেলে সংখ্যাটা হতো ১২। সেপ্টেম্বরে দুবাইয়ে হবে এশিয়া কাপ টি–টোয়েন্টি। এই সবই আগামী বছর ফেব্রুয়ারি–মার্চে ভারতে অনুষ্ঠেয় টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে। বিশ্বকাপের পরও ২০২৬ সালের বেশির ভাগ সিরিজের সঙ্গেই জুড়ে থাকবে টি–টোয়েন্টি ম্যাচ।

তার আগে শ্রীলঙ্কার এই সিরিজটা হয়ে এসেছে একই সঙ্গে পুরোনো হতাশা ভোলার এবং আগামীর জন্য উজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ হয়ে। শ্রীলঙ্কায় এসে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর স্বপ্ন দেখাও কঠিন, তবু আশাবাদী হতে উসকে দিচ্ছে ইতিহাস।

আরও পড়ুন