১৪ বছর বয়সে অন্যরা আইসক্রিম খায়, বৈভব সূর্যবংশী বোলারদের পেটায়

বৈভব সূর্যবংশী, আইপিএলের নতুন বিস্ময়এএফপি

ক্রিস শ্রীকান্ত নাম তাঁর। পুরো নাম কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত।
নিজেও একসময় বোলারদের পেটাতেন। সত্যি বলতে, ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সম্ভবত ক্রিস শ্রীকান্ত প্রথম দেখিয়েছিলেন, ওপেন করতে নেমে ভয়ডরহীন হয়ে যেকোনো বোলারকে মারা যায়। ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী এই ভারতীয় ওপেনার কাল নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে মুগ্ধতা জানিয়েছেন এক ব্যাটসম্যানের পেটানো দেখে।

টি-টোয়েন্টি বল পেটানোরই খেলা। প্রতি ম্যাচেই কেউ না কেউ ঝোড়ো ইনিংস খেলবেন—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ১৪ বছরের একটা ছেলে এসে দুনিয়ার সব নামীদামি বোলারকে পিটিয়ে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি মেরে দেবেন, এটা ভাবা যায়! বৈভব সূর্যবংশী সেটাই করেছেন। এ জন্যই ক্রিস শ্রীকান্তের মুগ্ধতা এই ছেলেকে নিয়ে।

আইপিএল আবির্ভাবের বছর তিনেক পরে সূর্যবংশীর জন্ম
এএফপি

তো সেই মুগ্ধতা জানাতে গিয়ে শ্রীকান্ত কী লিখেছেন, ‘১৪ বছর বয়সে বেশির ভাগ বাচ্চা স্বপ্ন দেখে আর আইসক্রিম খায়। আর এদিকে বৈভব সূর্যবংশী আইপিএলের শিরোপার দাবিদার এক দলের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক সেঞ্চুরি করল! বয়সের তুলনায় ওর সংযম, মান ও সাহস অনেক বেশি। নতুন এক মহাতারকার উত্থান দেখছি আমরা। ভারতীয় ক্রিকেটের পরবর্তী সুপারস্টার চলে এসেছে।’

আরও পড়ুন

সত্যিই তো। যে বয়সে বাচ্চারা মা–বাবার কাছে আইসক্রিম খাওয়ার বায়না ধরে, সেই বয়সে বৈভব সূর্যবংশীর ব্যাট থেকে এমন অবিশ্বাস্য ইনিংস! কোন বোলারদের পিটিয়েছেন, স্রেফ নামগুলো দেখুন। ভারতের জাতীয় দলের শীর্ষ দুই পেসারের একজন—মোহাম্মদ সিরাজ, ১০৫ টেস্ট খেলা ঈশান্ত শর্মা, সাদা বলে বিশ্বের সেরা স্পিনার রশিদ খান, ভারত জাতীয় দলে খেলার আরেকজন—ওয়াশিংটন সুন্দর। সূর্যবংশীর কাছে এমন মার খেয়েছেন সবাই, যেন তাঁরা পাড়া-মহল্লার বোলার, আর ১৪ বছরের ছেলেটাই দুনিয়া জয় করা ব্যাটসম্যান!

সেঞ্চুরির পর সূর্যবংশী
এএফপি

অথচ আইপিএল আবির্ভাবের বছর তিনেক পরে সূর্যবংশীর জন্ম। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে অভিষেক মাত্র কয়েক দিন আগে; এটা আইপিএলে তাঁর স্রেফ তিন নম্বর ম্যাচ! সেই ম্যাচেই ১১ ছক্কা আর ৭ চারে ৩৮ বলে ১০১ রানের ধুন্ধুমার ইনিংস খেলে দিলেন। গুজরাটের করা ২০৯ রান তাড়া করতে নেমে সূর্যবংশীর এই তাণ্ডবেই রাজস্থান শেষ পর্যন্ত জিতেছে ৮ উইকেটে, ২৫ বল হাতে রেখে।

আরও পড়ুন

নিলামে সূর্যবংশীকে ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে কিনেছিল রাজস্থান। বিহারের মাটির গন্ধ মেখে বেড়ে ওঠা এই বাঁহাতি কিশোর যুব টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ৫৮ বলে সেঞ্চুরি করে বাজিয়েছিলেন নিজের আগমনী সুর। তারপর আইপিএল অভিষেক ম্যাচেই লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে প্রথম বলেই শার্দূল ঠাকুরকে ছক্কা মেরে যেন বোঝাতে চেয়েছিলেন, তিনি তৈরি। তারপর কাল এই ঝড়–তোলা সেঞ্চুরিতে নতুন বার্তা—আমি এসেছি রাজত্ব করতে।

চেহারায় এখনো বাচ্চা বাচ্চা ভাব সূর্যবংশীর
এএফপি

ভারতের ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১১ বিশ্বকাপের নায়ক যুবরাজ সিং সূর্যবংশীর ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ। ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ইনস্টাগ্রামে একটিই শব্দ লিখলেন—‘ক্লাস!’ এক শব্দে মুগ্ধতা সাবেক ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিংয়েরও, ‘সুপারস্টার!’

সাবেক ভারতীয় ওপেনার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার বললেন, ‘১৪ বছর বয়স, কিন্তু ওর ক্রিকেটের মাথাটা যেন ৩০ বছরের। বছরের পর বছর ধরে খেলা বোলারদের বিপক্ষে কী আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলল।’ সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়না তো ভবিষ্যৎই বলে দিলেন, ‘একদিন ক্রিকেট শাসন করবে বৈভব সূর্যবংশী।’

আরও পড়ুন

সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, যাঁকে নিয়ে এত মাতামাতি, সেই সূর্যবংশীর প্রতিক্রিয়া। নিজেকে এত সামলে রেখেছেন! গতকাল ম্যাচের পর শুধু বলেছেন, ‘আইপিএলে সেঞ্চুরি, এ তো স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’
লুকিয়ে আইসক্রিম খাওয়ার বয়সে এমন সেঞ্চুরি, স্বপ্নের মতোই তো মনে হবে!