‘নাশতা করেছি ঢাকায়, লাঞ্চ করেছি দোহায়, ডিনার করেছি মায়ামিতে’

খেলোয়াড় পরিচয়ে সবাই তাঁদের চেনেন। কিন্তু সেই পরিচয়ের বাইরে তাঁদের অন্য জীবনটা কেমন? সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের সঙ্গে এই ঝটপট প্রশ্নোত্তর পর্বে সেটাই জানার চেষ্টা…

আজকের তারকা: সিদ্দিকুর রহমান

আজ এই দেশ তো, কাল ওই দেশ, কিছুদিন আগেই দম খেলার ফুরসত ছিল না তাঁর। এখন ব্যস্ততা একটু কমলেও বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেশে গিয়ে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে গলফার সিদ্দিকুর রহমানেরই।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: মাসুদ আলম

প্রথম আলো:

আপনি গলফ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সারা বছরই। তা গলফের বাইরে জীবনটা কেমন?

সিদ্দিকুর রহমান: অনেক ভালো। এখন তো টুর্নামেন্ট কম খেলি। কিন্তু গলফ নিয়ে বেশি ভাবি। গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমি আমার দুই বছর তিন মাস বয়সী মেয়ে উমরাহকে আগের চেয়ে বেশি সময় দিতে পারি। কোনো টুর্নামেন্টে যেতে না পারলে আগে অনেক মন খারাপ হতো, এখন হয় না। এখন ভাবি এটা আমার ভাগ্যে নেই, ভালোই হয়েছে, মেয়েকে সময়কে দিতে পারব।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

শুধু কি মেয়েকে সময় দেন, নাকি অন্য কিছুও করেন?

সিদ্দিকুর: এখন ঘুরতে ভালো লাগে। হঠাৎ বেরিয়ে পড়ি। যেমন এবার রোজার ঈদের পরদিন নিজেই ড্রাইভ করে চলে গেলাম কুষ্টিয়ায় শ্বশুরবাড়ি। দুই দিন ছিলাম, সবাই আনন্দ করেছি। ২০২৪ থেকে লম্বা একটা সময় দেশে ছিলাম, এটা উপভোগ করছি। দেশে থাকলে এক দিন পরপর ঘুরতে যাই। সব মিলিয়ে খুব ভালো সময় কাটাচ্ছি।

ঘুরতে পছন্দ করেন সিদ্দিকুর। পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দেশ–বিদেশে
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

কিন্তু আপনি একজন পেশাদার গলফার। খেলাটাও নিশ্চয়ই মাথায় থাকে?

সিদ্দিকুর: তা তো থাকেই। থাকে বলেই বাইরে খুব কম খাই। স্বাস্থ্যসচেতন থাকতে হয়। ফিটনেস নিয়ে কাজ করি। গলফ বেশি বয়সেও খেলা যায়। তাই খেলাটাকে প্রাধান্য দিয়ে যা যা করা যায়, সবই করি। এখন যেহেতু অত বেশি খেলা নেই, তাই প্ল্যান করতে পারি।  

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

এখন পর্যন্ত কতগুলো দেশে গেছেন গলফ খেলতে?

সিদ্দিকুর: প্রায় ৪০টি দেশ তো হবেই।

গলফ খেলার সুবাদে অনেক দেশই ঘুরেছেন সিদ্দিকুর
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

অনেক দেশে তো অনেকবার গেছেন। হিসাব কষা কি সম্ভব?

সিদ্দিকুর: একেবারে ঠিক হিসাব করা কঠিন। তবে যদি এভাবে বলি, ২০১০ থেকে ভারতেই না হলেও অন্তত ৫০ বার গিয়েছি। মালয়েশিয়ায় ৪০–৪৫ বার, থাইল্যান্ডে ৩০-৪০ বার, ইন্দোনেশিয়ায় ২৮-৩০ বার। তাইওয়ান, জাপান-কোরিয়া, ফিলিপাইন ১৮-২০ বার করে। হংকংয়ে ১৫-২০ বার, সিঙ্গাপুরে ১৫-১৬ বার, ম্যাকাওয়েতে ১০-১২ বার। সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১০ বার করে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায়ও প্রায় ১০ বার করে গিয়েছি। চীনে ৮ বার, অস্ট্রেলিয়া ৬ বার, লন্ডনে ৫-৬ বার। মিয়ানমার ও নেপালে ৫ বার, ভিয়েতনাম ৪-৫ বার। কাতারে ৩-৪ বার। ভুটান, ফিজি, কম্বোডিয়া, নিউজিল্যান্ড দুবার। জার্মানি, স্পেন, ওমান, মরিশাস, স্কটল্যান্ড, মরক্কো, ব্রাজিল...অনেক দেশেই গেছি।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

ট্যুর হিসাব করলে এখন পর্যন্ত কতগুলো হবে?

সিদ্দিকুর: এভাবে যদি বলি, ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বছরে ২০টা করে টুর্নামেন্ট ধরলে ১৬ বছরে ৩২০টি টুর্নামেন্ট হয়। তার মানে ৩২০টা ট্যুর তো করেছিই।

গলফ খেলায় ট্যুরের ওপরই থাকতে হয় সিদ্দিকুরকে
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

একটা সময় এক বিমান থেকে নেমে আরেক বিমান ধরতে হতো, ওই সময়টা কেমন ছিল?

সিদ্দিকুর: প্রচণ্ড ব্যস্ততায় কেটেছে ওই সময়টা। এমনও সময় গেছে, টানা দুই–তিন মাস ট্যুরে ছিলাম। এই দেশ থেকে ওই দেশ। দম ফেরার সময় ছিল না। এমনও হয়েছে নাশতা করেছি ঢাকায়, লাঞ্চ করেছি দোহায়, ডিনার করেছি মায়ামিতে।

প্রথম আলো:

এটা কীভাবে সম্ভব?

সিদ্দিকুর: ধরুন, আমি ঢাকা থেকে সকালে দোহা গেলাম ৫ ঘণ্টায়, সেখান থেকে ১০-১২ ঘণ্টা পর যখন যুক্তরাষ্ট্র নামছি, তখন যুক্তরাষ্ট্রে রাত ৮-৯টা। ডিনার টাইম। সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে আসলে যেতে হয়। ভ্রমণ অনেক সময় ক্লান্তিকর, তবে আমি তা উপভোগ করি। ভ্রমণ করতে করতে আমার তো এখন ১৫টি পাসপোর্ট বই হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

বলেন কী!

সিদ্দিকুর: হ্যাঁ, ঠিক তাই। সব পাসপোর্ট বই অবশ্য বহন করতে হয় না। ভারতের ভিসা নিতে সব কটি জমা দিতে হয়। কিছু কিছু দূতাবাস সব কটি দেখতে চায় ভিসা নেওয়ার সময়। মজার ব্যাপার কি জানেন, এমনও হয়েছে যে এক–দেড় বছরেই একটা পাসপোর্টের সব পাতায় সিল পড়ে গেছে। ফলে নতুন বই নিতে হয়েছে। অনেক সময় ইমিগ্রেশনে অনুরোধ করতাম, পাসপোর্টের কোনো কোনো ফাঁকা জায়গায় সিল মারতে, নতুন পাতায় নয়। যাতে একটা পাতা খালি রাখতে পারি।

ভ্রমণ করতে করতে সিদ্দিকুরের একাধিক পাসপোর্ট বই হয়েছে
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

এই যে এত দেশে গেছেন, সবচেয়ে ভালো লেগেছে কোথায়?

সিদ্দিকুর: জাপানের কথা আলাদাভাবে বলব।

প্রথম আলো:

কেন?

সিদ্দিকুর: সেখানকার মানবাধিকার, জীবনমান, মানুষের প্রতি মানুষের সম্মান সবকিছুই মনকাড়া। খাওয়াদাওয়া থেকে সবই ভালো। দেশটির মানুষের বিনয় আমাকে মুগ্ধ করে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

এত ভ্রমণ বিজনেস ক্লাস না ইকোনমিতে করেছেন?

সিদ্দিকুর: সব ভ্রমণ ধরলে বিজনেস ক্লাস ৩০ ভাগ হবে।

গলফ খেলার সুবাদে পৃথিবীটা ভালোভাবে দেখতে পারছেন সিদ্দিকুর
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

ভ্রমণের সময় সঙ্গে কী রাখেন?

সিদ্দিকুর: একটা নোট বই থাকে। তাতে নিজের খেলার অ্যানালাইসিস করি। বিভিন্ন জিনিস টুকে রাখি। আগে হেডফোন অবশ্যই থাকত। এখন কখনো থাকে, কখনো থাকে না। এয়ারপোর্ট ও বিমানে ঠান্ডা এড়াতে হাতব্যাগে সব সময়ই একটা জ্যাকেট রাখি। আর লম্বা ভ্রমণের সময় ঘাড়ের একটা বালিশ থাকে। ঘাড়ে যাতে কোনো টান না লাগে, সে জন্যই এটা ব্যবহার করি।

প্রথম আলো:

প্রথম বিমানে ওঠার স্মৃতিটা কেমন?

সিদ্দিকুর: ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের লাহোরে এশিয়া প্যাসিফিক টুর্নামেন্টে আমার প্রথম বিদেশ যাত্রা। তখন আমি বলবয়, বয়স ১৫। বেশ রোমাঞ্চিত ছিলাম। মনে আছে, বাসা থেকে যখন ঢাকার বিমানবন্দরে যাব, বাড়িতে কাছের মানুষেরা যেমন বাবা-মা ভাইয়েরা...এমন কান্নাকাটি করেছে যে যেন আমি আর ফিরব না। এটাই শেষযাত্রা। জীবনে প্রথম পিৎজা আমি পাকিস্তানে গিয়ে খেয়েছি সেই সফরে। আর ওই সফর থেকে আমি প্রথম গান শোনার ছোট ক্যাসেট প্লেয়ার কিনে আনি।

সিদ্দিকুর বলবয় থেকে গলফার হয়ে উঠেছেন
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

এখন তো বিমানেই কাটে আপনার অনেক সময়। বাংলাদেশের বাইরেই লোকে বেশি বেশি চেনে, ঠিক বলছি?

সিদ্দিকুর: ঠিক। ২০১১ সালে ব্রুনাই ওপেন জেতার পর যে প্রচার পেয়েছি, তা বিরাট প্রভাব ফেলে আমার গলফ জীবনে। বাংলাদেশের চেয়ে আমাকে বোধ হয় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা তাইওয়ানের মতো দেশগুলোয় বেশি চেনে। মালয়েশিয়ায় প্রায় সব জায়গাতেই চেনে। ভারতেও আমি বেশ পরিচিত। কারণ, ভারতে আমি পেশাদার-অপেশাদার টুর্নামেন্ট জিতেছি। আমি সৌভাগ্যবান যে বিরাট একটা পরিচিতি পেয়েছি গলফ খেলে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

বিদেশে কখনো কেউ কি বলেছে, আরে, আপনি সিদ্দিকুর না?

সিদ্দিকুর: বলেছে (হাসি), সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাই ২০১৭-১৮ সালে। সেখানে টপ অব দ্য ইউরোপে সারা বছর বরফ থাকে। বরফ-প্রতিরোধ পোশাক পরে সেখানে যাই। চেহারাটা শুধু দেখা যায়। তো ওখানেই এক চীনা ভদ্রলোক আমাকে চিনে ফেলে বলেন, আরে, আপনি সিদ্দিকুর না? আমি অবাক হয়েছিলাম। এমন জায়গায়ও কেউ আমাকে চিনছেন!

গলফ খেলে বিদেশেও বেশ ভালো পরিচিতি পেয়েছেন সিদ্দিকুর
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

এমনিতে কোথায় ঘুরতে ভালো লাগে?

সিদ্দিকুর: ইউরোপের যে কোথাও। ওখানকার পরিবেশ ভালো লাগে। মানুষ কম। কালচারটা আলাদা। আমার বিয়ের ১০ বছর হলো, স্ত্রীকে নিয়ে ঘোরার জন্য ঘুরতে যাওয়া তেমন হয়নি। সুযোগ পেলে তাই ইউরোপে যেতে চাই। পর্তুগাল, স্পেন, ইতালির কিছু ভ্রমণ স্পটে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।

প্রথম আলো:

এত এত টুর্নামেন্টে গিয়ে নানা রকম হোটেলে থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেটা কেমন? কী ধরনের হোটেলে থাকেন?

সিদ্দিকুর: ৮০ ভাগ ছিলাম ফাইভ স্টার হোটেলে।

ঘোরার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে ইউরোপে যেতে চান সিদ্দিকুর
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

কোর্সের কাছাকাছি থাকেন, নাকি একটু দূর হলেও সমস্যা নেই, যেখানে কম খরচে থাকা যায়?

সিদ্দিকুর: দূরে থাকলে হোটেল ভাড়া সাশ্রয় হতে পারে কিছু, কিন্তু যাতায়াত ভাড়া আবার অনেক। জাপানে যেমন হোটেল থেকে গলফ কোর্সের দূরত্ব এক ঘণ্টা। দক্ষিণ কোরিয়ায়ও তাই। এক ঘণ্টায় জাপানে ট্যাক্সি ভাড়া অনেক। কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইউরোপেও প্রায় একই। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড...এসব দেশে একটু হোটেল ভাড়া সাশ্রয় করা যায়। তবে ফাইভ স্টারে ডিসকাউন্ট পাওয়া যায় কিছু। আমার সমস্যা, আমি রুম শেয়ার করতে পারি না। ক্যারিয়ারের শুরুতে কয়েকটা সফরে রুম শেয়ার করেছি, সঙ্গীরা ভারতের ছিলেন, পরে আর করিনি।  

প্রথম আলো:

আপনার প্রিয় গলফ কোর্স কোনটি?

সিদ্দিকুর: সব মিলিয়ে হয়তো ৫০টি কোর্সে খেলেছি। তাই বলা কঠিন। তবে সব সময় ভালো খেলি বলে আমার পছন্দের গলফ ক্লাব দিল্লি গলফ ক্লাব। অপেশাদার আমলে ভারতের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট অল ইন্ডিয়া অ্যামেচার ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি ২০০৫ সালে। ওখানে এশিয়ান ট্যুরে হিরো ইন্ডিয়া ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি ২০১৩ সালে। দিল্লি গলফ ক্লাবে পেশাদার–অপেশাদার মিলিয়ে গত ২৫ বছরে প্রায় ৩০টি টুর্নামেন্ট খেলেছি। এর ৯০ ভাগ টুর্নামেন্টে সেরা ১০–এ শেষ করেছি।

মালয়েশিয়ায় গলফ কিংবদন্তি টাইগার উডসের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন সিদ্দিকুর
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

মানুষ ভাবে আপনি অনেক টাকার মালিক।

সিদ্দিকুর: ভাবতেই পারেন, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আমি একটা অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছি ক্যান্টনমেন্টের ভেতর। একটি গাড়ি আছে...এই তো। চার বছর ধরে তেমন কোনো টাকা কিন্তু আয় হয়নি। আমার খরচও অনেক। যেমন ধরেন, এত বছরে ৩২০টা সফর যদি করে থাকি, প্রতিটিতে সঙ্গী হয়েছে আমার ক্যাডিও। তাঁর সব খরচও আমার। আরও অনেক খরচ তো আছেই। আয়ের ৭০ ভাগই খরচ। তার মানে, বছরে ১ লাখ ডলার আয় করলে ৭০ হাজারই খরচ। এটা কেউ দেখে না বা আমি দেখাতে পারি না। যে কারণে মানুষ মনে করে সিদ্দিক অনেক টাকার মালিক।

গলফ থেকে সিদ্দিকুরের ভালো আয় করলেও খরচও আছে
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

খরচগুলো কী কী?

সিদ্দিকুর: ভারতে যেমন একটা টুর্নামেন্টের প্রাইজমানির ২৬ ভাগ সরকার ট্যাক্স নিয়ে যায়। ২০১৩ সালে হিরো ইন্ডিয়া ওপেন জিতে ২ লাখ ৩০ হাজার ডলার পাই। সেখান থেকে ২৬ ভাগ যায় কর বাবদ। অস্ট্রেলিয়ায় কর ৩৫ ভাগ। নিউজিল্যান্ডে ৩৫-৪০, জাপানে ২৫ ভাগ। ২৫–এর নিচে কোথাও নেই। ক্যাডিকে দিতে হয় ১০ ভাগ। আমার বিমান টিকিট, ক্যাডির টিকিট, আমার হোটেল, খাওয়া, যাতায়াত, প্রতি টুর্নামেন্টের এন্ট্রি ফি, বছরের শুরুতে একটা ফি, প্রতি টুর্নামেন্ট হোটেল টু এয়ারপোর্ট, এয়ারপোর্ট টু হোটেল যাতায়াত...অনুশীলন খরচ সব নিজের। ট্যুর অর্গানাইজারদের ২-৩ ভাগ দিতে হয়। আমি ভালো খেলি আর খারাপ খেলি, সারা বছরই কিন্তু কোচিং নিতে হয়। ফিটনেস, ফিজিওথেরাপি, সাইকোলজিস্ট এসবের পেছনেও খরচ আছে।

প্রথম আলো:

কিন্তু গলফে তো টাকাও অনেক।

সিদ্দিকুর: কিন্তু তাতে কী? সব টুর্নামেন্টে তো অর্থ পুরস্কার পাইও না। টুর্নামেন্টে ৬৫ জনের মধ্যে থাকলে পুরস্কার মেলে। বছরে ২০টা টুর্নামেন্ট খেললে হয়তো ১০-১২টায় অর্থ পুরস্কার পাই। বাকিগুলোর খরচ নিজের। আমার যে ভ্রমণ, তাতে বছরে এক কোটি টাকা খরচ আছে। ফলে বছরে শেষে অত বেশি থাকে না।

সব টুর্নামেন্টে অর্থ পুরস্কার পান না সিদ্দিকুর
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

আপনি তো কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে বড় হয়েছেন। কখনো সেখানকার গাছে উঠেছেন?

সিদ্দিকুর: অনেক উঠেছি। কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে এমন কোনো গাছ নেই, যেটায় উঠিনি। একবার তো গাছ থেকে পড়ে অজ্ঞান ছিলাম দুই–তিন দিন।

প্রথম আলো:

বলেন কী! কীভাবে এই ঘটনা হলো?

সিদ্দিকুর: ১৯৯৪-৯৫ সালের কথা। কুর্মিটোলা ক্লাবে ঢোকার ৩ থেকে ৪ বছর পর, তখন আমার বয়স ১২ বা ১৩। তখন আমি বলবয়। লিচু খাওয়ার জন্য গাছে উঠেছিলাম, কিন্তু পা পিছলে গাছ থেকে পড়ে প্রায় দুই-তিন দিন অজ্ঞান ছিলাম। কেউ মনে করেনি যে আমি বাঁচব। মায়ের মুখে শোনা, কয়েকটি হসপিটাল নাকি আমাকে নিচ্ছিল না। তারপর একটা হসপিটাল নেয়। দুই–তিন দিন পর আমার জ্ঞান ফিরে আসে। লম্বা একটা সময় আমাকে বিশ্রামে থাকতে হয়। সেই লিচুগাছটা এখনো আছে। ওই লিচুগাছের পাশে বরইগাছ ছিল। আমের মৌসুম এলে জানতাম কোন গাছে কী আম হয়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ফলের গাছে ওঠা হতো। সেই দিনগুলো এখন অনেক মিস করি। ক্লাবে গেলে স্মৃতিগুলো মনে পড়ে।

প্রথম আলো:

গলফ কোর্সে তো পুকুরও ছিল। মাছ ধরেছেন?

সিদ্দিকুর: অনেক ধরেছি। আগুনে পুড়িয়ে মাছ খেয়েছি। বড় মাছ হলে বাসায় নিয়ে যেতাম। ক্যান্টনমেন্টে ধামাল কোর্ট এলাকায় আমি বড় হয়েছি। ক্লাস ওয়ান থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত ওখানে পড়েছি। বর্ষার সময় বিলের মতো হয়ে যেত। সারা দিন মাছ ধরতাম, ভালো লাগত। অনেক মাছ পেতাম। এমনও হয়েছে, সারা রাত পানি সেচে সকালে মাছ ধরে বাসায় আসছি।

কুর্মিটোলা ক্লাবে বেড়ে ওঠা সিদ্দিকুরের
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

এমনিতে কী ভালো লাগে আপনার?

সিদ্দিকুর: হাইস্কুলে পড়ার সময় অনেক বাংলা ছবি দেখতাম। এখন তিন ঘণ্টা ধরে ছবি দেখব, এটা অসম্ভব। এখন কিছুদিন দেশে থাকলে আর ভালো লাগে না। কবে ট্রাভেল করব সেটা মাথায় ঘোরে। এ কারণে কোনো নতুন কোর্সে খেলতে ভালো লাগে, নতুন কোর্সে খেলার অপেক্ষায় থাকি।

প্রথম আলো:

এত জায়গায় যান, নানা খাবারের স্বাদ নিয়েছেন নিশ্চয়ই। পছন্দের খাবার কী?

সিদ্দিকুর: এমনিতে ভর্তা, সবজি, ডাল, মাংস, মাছ সবই খাই। ঝালও ভালো লাগে। স্বাস্থ্যকর খাবারে প্রাধান্য দিই। সুস্বাদু না হোক, স্বাস্থ্যকর হতে হবে। তেল দিয়ে মজা করে রান্না...ওসব না, স্বাস্থ্যের জন্য যা ভালো, সেটাই আমার প্রিয় খাবার। তবে যেখানেই যাই, মানিয়ে নিতে পারি। যেমন চীনে গেলে জানি ডাল, ভাত পাব না। সেখানে আমি চায়নিজ খাবারই খাই। কাঁচা খাবার খাওয়াবে জানি, খাইও। কোরিয়া বা জাপানেও তাই।

প্রথম আলো:

গান শোনেন?

সিদ্দিকুর: শুনি। আসলে গানের কথা শুনি কম, মিউজিকটা ভালো লেগে গেলে সেটাই শুনি।

স্বাস্থ্যকর খাবারে প্রাধান্য দেন সিদ্দিকুর
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

নাটক–সিনেমা দেখেন?

সিদ্দিকুর: কম দেখা হয়। একটু দেখলে চোখে চাপ পড়ে। তবে মোশাররফ করিমের অনেক নাটক দেখেছি। এখনো দেখি। তাঁর অনেক ভক্ত আমি। নাটক দেখলে ওনারটাই দেখা হয়। আর স্টোরি টেলিং সিনেমা ভালো লাগে।

প্রথম আলো:

আপনার দৈনিক রুটিন কী?

সিদ্দিকুর: আমি খুব দ্রুত ঘুমিয়ে ভোরে ওঠা মানুষ। আগে প্রতিদিনই ইংলিশ শব্দ চর্চা করতাম বেশি। যেগুলো গলফ খেলা, কথা বলার জন্য দরকার। এই চর্চাটা এখনো আছে।

রিও অলিম্পিকে খেলেছেন সিদ্দিকুর
সিদ্দিকুরের অ্যালবাম থেকে
প্রথম আলো:

গলফের বাইরে অন্য কোন তারকার সঙ্গে দেখা হয়েছে?

সিদ্দিকুর: মারিয়া শারাপোভা, উসাইন বোল্ট, টাইগার উডসের সঙ্গে দেখা হয়েছে। টাইগার উডসের সঙ্গে মালয়েশিয়ায় একটা টুর্নামেন্টে। তিনি খেলতে এসেছিলেন, আমিও তাতে খেলি। তখন আমার কোচ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের। সেই কোচই আমাকে পরিচিত করে দেন তাঁর সঙ্গে।